ঢাকা ১২:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিরুত্তাপ হরতাল শেষে দেশ অচলের হুমকি বামদের

 জাতীয়:

গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে সারাদেশ অচল করার হুমকি দিয়েছে বাম জোট। এর আগে রাজধানীতে সমাবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও করবে তারা।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশব্যাপী আধাবেলা হরতাল শেষে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু।

আগামী ১৪ জুলাই রাজধানীতে সমাবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ছাড়াও  ১৯ জুলাই প্রতিনিধি সভা করে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা এসেছে।

দাবি পূরণ না হলে সারাদেশ অচল করার হুমকি দিয়ে নান্নু বলেন, ‘শুধু সাধারণ জনগণ নয়, ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রধান সমন্বয়ক মোহম্মদ নাসিম সংসদে দাঁড়িয়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং বিষয়টি পুনঃবিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। হরতালের সমর্থনে সারা ঢাকায় আমরা লিফলেট বিতরণ করেছি। সব শ্রেণির মানুষ আমাদেরকে বলেছে, আপনারা মাঠে থাকেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।’

রবিবার সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত ডাকা এই হরতালে বামপন্থীদের অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ ছিল নগরীর দুই একটি জায়গায়। তবে হরতালের কোনো প্রভাব জনজীবনে দেখা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই চলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি অফিস।

তবে নান্নুর দাবি, গ্যাসের মূলবৃদ্ধি ইস্যুতে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বামজোটের সঙ্গে আছে। তিনি বলেন, ‘বাসা-বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে যে ৮৫ ইউনিট গ্যাস ব্যবহার হওয়ার কথা, কার্যত বাসা-বাড়িতে ৪৫/৫০ ইউনিটের বেশি গ্যাস ব্যবহার হয় না। অর্থাৎ সিস্টেম গেইন হওয়ার কথা। তারপরও ১২ শতাংশ সিস্টেম লস দেখানো হচ্ছে। এই ১২ শতাংশের দাম হাজার হাজার কোটি টাকা, যা লোপাট হয়ে যাচ্ছে।’

১ জুলাই থেকে সব ধরনের গ্যাসের দাম গড়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে আমদানি করা গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে নেয়া এই সিদ্ধান্তে বাসা বাড়িতে আবাসিক সংযোগের বিল দুই চুলার ক্ষেত্রে হয়েছে ৯৭৫ টাকা। আর এক চুলায় এই বিল হবে ৯২৫ টাকা। সংযোগ প্রতি মাসে বিল বেড়েছে ১২৫ টাকা।

বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পরদিন ভারতে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমেছে। এরপর বিতর্ক আরো বড় হয়েছে, ভারত কমালে বাংলাদেশ কেন বাড়াবে। তবে সরকার বলছে, এলএনজি আমদানির কারণে বেড়ে যাওয়া মূল্য সমন্বয় না করলে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে। আর সেটাও জনগণের করের টাকা থেকেই যাবে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলেও হরতালে জন অংশগ্রহণ ছিল না একদমই। আর সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কটাক্ষ করে বক্তব্যও এসেছে এ বিষয়ে।

‘জনগণ তো রাস্তায় নামে না’- সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এমন বক্তব্যের জবাবে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘কয়েকটি গাড়ি- ঘোড়া রাস্তায় নামিয়ে হরতালের পক্ষে জনগণের সমর্থনকে অস্বীকার করা এই শাসকদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।’

‘জনগণ যখন রাস্তায় নামবে, তখন পালিয়ে যাওয়া ছাড়া সরকারের কোনো উপায় থাকবে না। সুতরাং জনগণ রাস্তায় নামবে কি না, সেটি না ভেবে নিজেরা পালানোর রাস্তা খোঁজেন।’

সরকারের উদ্দেশে খালেকুজ্জামান বলেন, ‘যদি এভাবেই চলতে থাকেন, তাহলে আগামী দিনে গ্যাসের আগুনে কেবল চুলা জ্বলবে না, আপনাদের গদিও জ্বলে যেতে পারে। ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলেন। চিরকালের জন্যও বিদায় নিতে হতে পারে।’

বিপ্লবি ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সারাদেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে হরতালকে সমর্থন করেছে। বিএনপি নৈতিকভাবে সমর্থন দিয়েছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদল গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ অসংখ্য দল হরতালকে সমর্থন দিয়েছে। অনেকেই রাজপথে দাঁড়িয়ে হরতালের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই সরকার প্রশাসন, ব্যবসায়ী গ্রুপের স্বার্থ রক্ষা করে। জনগণের স্বার্থ তারা তোয়াক্কা করে না। এই জন্য স্বেচ্ছাচারী কায়দায়, যেনতেন প্রকারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে। এই অবস্থা যদি আমরা চলতে দেই, তারা আমাদের টুঁটি চেপে ধরবে। কাজেই, এই সরকারের লাগাম টেনে ধরতে হবে।’

বিএনপিসহ হরতালে সমর্থন দিলেও বিভিন্ন দলের পাশে না দাড়ানোর বিষয়টিও তুলে ধরেন সাকি। বলেন, ‘শুধু সমর্থন দিলে চলবে না। দেশ এবং দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে সবাইকে রাজপথে নামতে হবে।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরের ৭ শহীদ পরিবারের মাঝে রমজানের উপহার পাঠালেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ

নিরুত্তাপ হরতাল শেষে দেশ অচলের হুমকি বামদের

আপডেট সময় ০২:৪১:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০১৯
 জাতীয়:

গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে সারাদেশ অচল করার হুমকি দিয়েছে বাম জোট। এর আগে রাজধানীতে সমাবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও করবে তারা।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশব্যাপী আধাবেলা হরতাল শেষে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু।

আগামী ১৪ জুলাই রাজধানীতে সমাবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ছাড়াও  ১৯ জুলাই প্রতিনিধি সভা করে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা এসেছে।

দাবি পূরণ না হলে সারাদেশ অচল করার হুমকি দিয়ে নান্নু বলেন, ‘শুধু সাধারণ জনগণ নয়, ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রধান সমন্বয়ক মোহম্মদ নাসিম সংসদে দাঁড়িয়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং বিষয়টি পুনঃবিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। হরতালের সমর্থনে সারা ঢাকায় আমরা লিফলেট বিতরণ করেছি। সব শ্রেণির মানুষ আমাদেরকে বলেছে, আপনারা মাঠে থাকেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।’

রবিবার সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত ডাকা এই হরতালে বামপন্থীদের অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ ছিল নগরীর দুই একটি জায়গায়। তবে হরতালের কোনো প্রভাব জনজীবনে দেখা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই চলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি অফিস।

তবে নান্নুর দাবি, গ্যাসের মূলবৃদ্ধি ইস্যুতে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বামজোটের সঙ্গে আছে। তিনি বলেন, ‘বাসা-বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে যে ৮৫ ইউনিট গ্যাস ব্যবহার হওয়ার কথা, কার্যত বাসা-বাড়িতে ৪৫/৫০ ইউনিটের বেশি গ্যাস ব্যবহার হয় না। অর্থাৎ সিস্টেম গেইন হওয়ার কথা। তারপরও ১২ শতাংশ সিস্টেম লস দেখানো হচ্ছে। এই ১২ শতাংশের দাম হাজার হাজার কোটি টাকা, যা লোপাট হয়ে যাচ্ছে।’

১ জুলাই থেকে সব ধরনের গ্যাসের দাম গড়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে আমদানি করা গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে নেয়া এই সিদ্ধান্তে বাসা বাড়িতে আবাসিক সংযোগের বিল দুই চুলার ক্ষেত্রে হয়েছে ৯৭৫ টাকা। আর এক চুলায় এই বিল হবে ৯২৫ টাকা। সংযোগ প্রতি মাসে বিল বেড়েছে ১২৫ টাকা।

বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পরদিন ভারতে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমেছে। এরপর বিতর্ক আরো বড় হয়েছে, ভারত কমালে বাংলাদেশ কেন বাড়াবে। তবে সরকার বলছে, এলএনজি আমদানির কারণে বেড়ে যাওয়া মূল্য সমন্বয় না করলে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে। আর সেটাও জনগণের করের টাকা থেকেই যাবে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলেও হরতালে জন অংশগ্রহণ ছিল না একদমই। আর সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কটাক্ষ করে বক্তব্যও এসেছে এ বিষয়ে।

‘জনগণ তো রাস্তায় নামে না’- সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এমন বক্তব্যের জবাবে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘কয়েকটি গাড়ি- ঘোড়া রাস্তায় নামিয়ে হরতালের পক্ষে জনগণের সমর্থনকে অস্বীকার করা এই শাসকদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।’

‘জনগণ যখন রাস্তায় নামবে, তখন পালিয়ে যাওয়া ছাড়া সরকারের কোনো উপায় থাকবে না। সুতরাং জনগণ রাস্তায় নামবে কি না, সেটি না ভেবে নিজেরা পালানোর রাস্তা খোঁজেন।’

সরকারের উদ্দেশে খালেকুজ্জামান বলেন, ‘যদি এভাবেই চলতে থাকেন, তাহলে আগামী দিনে গ্যাসের আগুনে কেবল চুলা জ্বলবে না, আপনাদের গদিও জ্বলে যেতে পারে। ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলেন। চিরকালের জন্যও বিদায় নিতে হতে পারে।’

বিপ্লবি ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সারাদেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে হরতালকে সমর্থন করেছে। বিএনপি নৈতিকভাবে সমর্থন দিয়েছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদল গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ অসংখ্য দল হরতালকে সমর্থন দিয়েছে। অনেকেই রাজপথে দাঁড়িয়ে হরতালের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই সরকার প্রশাসন, ব্যবসায়ী গ্রুপের স্বার্থ রক্ষা করে। জনগণের স্বার্থ তারা তোয়াক্কা করে না। এই জন্য স্বেচ্ছাচারী কায়দায়, যেনতেন প্রকারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে। এই অবস্থা যদি আমরা চলতে দেই, তারা আমাদের টুঁটি চেপে ধরবে। কাজেই, এই সরকারের লাগাম টেনে ধরতে হবে।’

বিএনপিসহ হরতালে সমর্থন দিলেও বিভিন্ন দলের পাশে না দাড়ানোর বিষয়টিও তুলে ধরেন সাকি। বলেন, ‘শুধু সমর্থন দিলে চলবে না। দেশ এবং দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে সবাইকে রাজপথে নামতে হবে।’