লাইফস্টাইল
বর্তমানের চূড়ান্ত ব্যস্ত জীবনযাত্রা, অনিয়মিত ডায়েট এবং প্রচণ্ড শারীরিক-মানসিক চাপের কারণে নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই সন্তানহীনতার সমস্যা বেড়ে চলেছে। সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে ৩০-৫০ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী পুরুষেরাই। বিভিন্ন কারণে অসংখ্য পুরুষের মধ্যে শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়া দেখা দিচ্ছে। অনেকেরই ধারণা, শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়া থাকলে ‘ডোনার’ বা শুক্রানু দাতার সাহায্য ছাড়া বাবা হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ভারতের রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন এবং বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ড. সুজয় দাসগুপ্তর দাবি এ ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়।
শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়া বলতে কী বোঝায়?
যে সমস্ত পুরুষের বির্যরসে শুক্রানুর সংখ্যা শূন্য বা শুক্রানু একেবারেই অনুপস্থিত, এই পরিস্থিতিকে শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়া (Azoospermia) বলা হয়। কোনও কারণে যখন শুক্রাশয়ে শুক্রানুর উত্পাদনে ধারাবাহিক ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয় বা শুক্রানুর উত্পাদন বন্ধ হয়ে যায়, তখন কোনও ব্যক্তি অ্যাজুস্পার্মিয়ায় আক্রান্ত হন।
শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়া কেন হয়?
ক্রমোজমগত ত্রুটি, জিনগত সমস্যা, কোনও রকম আঘাত লাগার কারণে, মাম্স, টিউবারকিউলিসিস-এর মতো কোনও সংক্রমণের কারণে, কেমোথেরাপির কারণে, মাথায় কোনও আঘাত লাগার কারণে পিটুইটারি গ্রন্থির কার্যক্ষমতা আংশিক বাধাপ্রাপ্ত হলে শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়া দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও, শুক্রানু নির্মগমের পথ কোনও সংক্রমণের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলে বা হার্নিয়া বা ওই রকম কোনও অস্ত্রোপচারের ফলে শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়া দেখা দিতে পারে।
শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় কী?
কোনও ব্যক্তি শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়ায় আক্রান্ত কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিত্সকরা একাধিক পরীক্ষাগার বা ল্যাবোরেটরিতে বির্যরস পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁদের মতে, একাধিক পরীক্ষাগার বা ল্যাবোরেটরির রিপোর্টে যদি শুক্রানুশূন্যতার প্রমাণ মেলে তবেই অ্যাজুস্পার্মিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার সম্ভব।
শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়া রয়েছে এমন কোনও ব্যক্তি কি সন্তানের বাবা হতে পারেন?
অবশ্যই পারেন। যদি কোনও ব্যক্তির শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়া ধরা পড়ে, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁর শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়ার কারণ চিহ্নিত করা হয়। যদি পিটুইটারি গ্রন্থি শুক্রানুশূন্যতার কারণ হয়, সে ক্ষেত্রে অষুধ বা ইনজেকশনের মাধ্যমে শুক্রানুর সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। আর যদি দেখা যায় শুক্রাশয়ে শুক্রানু নির্মগমের পথ কোনও কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়, সে ক্ষেত্রে টেস্টিকুলার স্পার্ম অ্যাসপিরেশন বা টেস্টিকুলার স্পার্ম এক্সট্রাকশন পদ্ধতির সাহায্যে শুক্রানু সংগ্রহ করা হয়। এই পদ্ধতিগুলি কাজে লাগিয়ে কোনও ব্যক্তি যিনি অ্যাজুস্পার্মিয়ায় আক্রান্ত, তিনিও নিজের শুক্রানুর সাহায্যেই (শুক্রানু দাতার সাহায্য ছাড়াই) বাবা হতে পারেন। এর পর আইসিএসআই বা ইকসি আইভিএফ পদ্ধতিতে শুক্রাশয় থেকে সংগৃহিত সবচেয়ে ভাল শুক্রানু ডিম্বাশয়ের মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়।
সুতরাং, কোনও ব্যক্তি শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়ায় আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও আইসিএসআই (ICSI) বা ইকসি আইভিএফ পদ্ধতিতে নিজের শুক্রানুর সাহায্যেই বাবা হতে পারবেন। প্রয়োজন হবে না কোনও শুক্রানু দাতার। ডঃ সুজয় দাসগুপ্ত জানান, আইসিএসআই (ICSI) বা ইকসি আইভিএফ পদ্ধতিতে ডোনার বা শুক্রানু দাতা ছাড়াই জৈবিক পিতৃত্ব লাভের ক্ষেত্রে সাফল্যের হারও সবচেয়ে বেশি। তাই বির্যরস পরীক্ষায় শুক্রানুশূন্যতা বা অ্যাজুস্পার্মিয়া ধরা পড়লেও ভেঙে না পড়ে সঠিক পদ্ধতিতে চিকিত্সার প্রয়োজন। তাহলেই মিলবে কাঙ্খিত পিতৃত্ব।