অন্তর্জাতিক:
বাইরে তখন মিশরের পতাকা হাতে নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন প্রতিবাদীরা। দাবি, নিলামে না তুলে অবিলম্বে মিশরে ফেরানো হোক ফারাও (ফেরাউন) রাজা তুতানখামেনের মুখের ওই মূর্তি। লন্ডনে ক্রিস্টি’জ-এর দপ্তরে অবশ্য তা নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই। নিলাম চলল। এবং শেষমেশ তিন হাজার বছরের পুরোনো ফেরাউন-এর মূর্তি বিক্রি-ও হয়ে গেল ৬০ লক্ষ ডলারে। কোয়ার্টজের তৈরি সে মূর্তিতে তুতানখামেনের এক প্রশান্ত মুখাবয়ব, অনেকটা মিশরীয় দেবতা ‘আমেন’-এর মতো।
এমন নিলাম মেনে নিতে পারেননি লন্ডনে বসবাসকারী মিশরের বাসিন্দারা। তাঁরা স্লোগান দেন, ‘পাচার হওয়া ঐতিহাসিক জিনিস নিলামে তোলা বন্ধ করুন।’ ম্যাগদা সাকর নামে এক বাসিন্দার কথায়, ‘এগুলি মোটেও বাড়িতে সাজানোর জিনিস নয়। জাদুঘরে রাখার জিনিস। এটি ইতিহাস। এটি আমাদের অন্যতম বিখ্যাত রাজার সঙ্গে জড়িত।’
মিশরের পুরাতত্ত্ব মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘এ দেশের যে সব গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সামগ্রী বেআইনি ভাবে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা ফিরিয়ে আনার জন্য সবরকম চেষ্টা করবে সরকার।’ আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করবে পুরাতত্ত্ব মন্ত্রণালয়।
ওই মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন মন্ত্রী জাহি হাওয়াস সংবাদসংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছেন, লুক্সরের উত্তরে কার্নাক এলাকা থেকে ১৯৭০ সালের পর সম্ভবত ওই মূর্তিটি চুরি করা হয়েছিল। তাঁর ভাষায়, ‘কার্নাক এলাকা থেকে ওই সময়েই বহু সামগ্রী চুরি গিয়েছিল।’
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সম্ভবত সে কারণেই ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তর ও ইউনেস্কোর কাছে আর্জি জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবারের ওই নিলাম-প্রক্রিয়া যেন স্থগিত করার বন্দোবস্ত করে তারা।
কিন্তু এ ধরনের হস্তক্ষেপ ব্রিটেনে অত্যন্ত বিরল। এবং সাধারণত সে সব ক্ষেত্রেই করা হয় যেখানে দেখা যায় যে সামগ্রীটি নিলামে উঠছে, তার মালিকানা নিয়ে আইনি বিতর্কের অবকাশ রয়েছে।
নিলামকারী সংস্থা ক্রিস্টি’জ-ও পাল্টা জানিয়েছে, এর আগে কখনও মিশর এ ভাবে কোনও সামগ্রীর নিলাম নিয়ে এতটা উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। তাদের বিবৃতি, ‘ওই বস্তুটি নিয়ে কখনওই কোনও ধরনের তদন্ত কিংবা বিতর্ক হয়নি।’ শুধু তা-ই নয়। কী ভাবে গত ৫০ বছর ধরে ইউরোপিয়ান আর্ট ডিলারদের হাত বদল হয়েছে মূর্তিটি, নিয়মমাফিক সেটির-ও বর্ণনা দিয়েছে ওই নিলাম সংস্থা।
সেখানে অবশ্য সন্দেহ দানা বেঁধেছে। যেমন এক জায়গায় বলা হয়েছে, ১৯৬০-এর শেষে জার্মানির যুবরাজ উইলহেম ভন থুর্নের সংগ্রহে ছিল। কিন্তু তাঁর ভাইঝি দাবি করেন, উইলহেম মোটেও শিল্পের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন না।