ঢাকা ১২:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অ্যাপেই জানা যাবে পরিবেশ দূষণের মাত্রা

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:

বুকভরে সতেজ বাতাস টানতে কাকভোরে বিছানা ছাড়ছেন ছুটতে। অথবা স্বাস্থ্য সতেজ রাখতে রোজ সন্ধ্যায় পার্কে যাচ্ছেন হাঁটতে। কিন্তু সুস্থ থাকার জন্য যেখানকার বাতাস বুকে ভরতে যাচ্ছেন, তাতেই যদি বিষ থাকে?

কোথাও যাওয়ার আগে মোবাইলে টাচ করেই এবার দেখে নিন, সেখানকার দূষণের মাত্রা। বিশ্বব্যাংক এবং পরিবেশ দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আসছে নতুন অ্যাপ ক্লেয়ার। যাকে বলা হচ্ছে হাইপার লোকাল পলিউশন মনিটরিং। এর ফলে যে কেউ দেখে নিতে পারবেন তিনি যে এলাকায় যাচ্ছেন, সেখানকার বাতাসে কতটা বিষ। শুধু তাই নয়, কোনো ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা যদি সেখানকার পরিবেশের কাছে হানিকর হয়, তাও এই অ্যাপ তাকে মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেবে।

যেভাবে হবে এই অ্যাপের ব্যবহার: অ্যাপ প্রস্তুতকারক সংস্থা সূত্রে খবর, মাসখানেকের মধ্যে নতুন এই অ্যাপ চলে আসবে। তা ডাউনলোড করে সেখানে নিজের নাম, ঠিকানা, বয়স, কী কী অসুখ তাঁর রয়েছে সেগুলো একবার এন্ট্রি করতে হবে। সেখানেই অপশন আসবে, আপনি কোথায় আছেন, আর কোথায় যাবেন? সেই নাম লেখার পরই স্ক্রিনে ভেসে উঠবে ওই এলাকার দূষণের মাত্রা। এমনকি আপনার যদি সিওপিডি, লাং, হার্টের অসুখ থাকে, তবে সংস্থাই আপনাকে জানিয়ে দেবে সেখানে যাওয়া উচিত কি না? গেলে কোন সময় যাওয়া উচিত, কোন সময় দূষণের ধূলিকণা সক্রিয়। পরিবেশ দপ্তরের আধিকারিকদের কথায়, এই অ্যাপ সব থেকে বেশি বয়স্ক লোকদের কাজে লাগবে। কারণ ষাটোর্ধ্ব প্রৌঢ়রা বেশিরভাগই হার্ট এবং লাংয়ের অসুখে ভোগেন। দূষণের জেরে বের হওয়া ধূলিকণা তাদের শরীরেই সব থেকে বেশি আক্রমণ করবে। কারণ তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম। ফলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই এই অ্যাপ ব্যবহার করে তারা অন্তত দূষণের জেরে নিজের শরীরের ক্ষতি হওয়া কিছুটা হলেও আটকাতে পারবেন।

কিন্তু এত দূষণের কারণ কী? পরিবেশবিদদের কথায়, রাতভর শহরে বাইরে থেকে ট্রাক ঢোকে। সেখান থেকে বেরনো দূষণের ধূলিকণা রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত থাকে। তাছাড়া নির্মীয়মাণ বহুতল ভবনের কাজকর্মও এখন সারারাত চলে। সেখান থেকেও পিএম ২.৫ ধূলিকণা ছড়ায় প্রচুর; যা সকাল পর্যন্ত থাকে। তাদের কথায়, পিএম ৫ ধূলিকণা তবু মানুষের নাকে আটকাতে পারে, শরীরে প্রবেশ করে না। কিন্তু পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ এতই ছোটো ধূলিকণা যে, সরাসরি হার্টে চলে যায়। কোনোভাবেই তা আটকানো সম্ভব হয় না। আর এই পুরোনো গাড়ির ধোঁয়াতে এই ধূলিকণার পরিমাণই সবচেয়ে বেশি। অ্যাপ প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্তা সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘মাসখানেকের মধ্যেই নতুন এই অ্যাপ চলে আসবে। তা দিয়ে যে কেউ দেখে নিতে পারবেন, কোন এলাকায় দূষণের মাত্রা কতটা! সেটা বুঝে তারা বাড়ি থেকে বেরুতে পারবেন।’

মেডিসিন বিভাগের বিশিষ্ট চিকিত্সক ড. অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘সবাই আমরা দূষণের শিকার। এই অ্যাপের মাধ্যমে আমরা আগাম জানতে পারব ঠিকই, তবে দূষণ তো কমবে না। দূষণের জেরে নাক, কান, গলা সব থেকে বেশি এফেক্ট করে। তাই সাবধানতা অবলম্বন খুব জরুরি। তবে কোথায় কেমন দূষণের মাত্রা তা জানলে যতটা সম্ভব এড়ানো সম্ভব হতে পারে।’ পরিবেশ দপ্তরের আধিকারিকদের কথায়, সকালের দিকেই দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। সবচেয়ে ছোটো যে ধূলিকণা পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫, সবচেয়ে বেশি এই সময়েই শরীরে প্রবেশ করে; যা থেকে হার্ট ও লাংয়ের অসুখ বেশি হয়। এমনকি সন্তানসম্ভবা মায়ের শরীরে তা প্রবেশ করলে শিশুরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই মর্নিং ওয়াকে বেরুনোর আগে এই অ্যাপ কার্যকরী ভূমিকা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, দেখে নেওয়া যাবে কোথাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা কতটা! সেটা বুঝে বেরুনো যাবে রাস্তায়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

অ্যাপেই জানা যাবে পরিবেশ দূষণের মাত্রা

আপডেট সময় ০৩:০৫:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৯
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:

বুকভরে সতেজ বাতাস টানতে কাকভোরে বিছানা ছাড়ছেন ছুটতে। অথবা স্বাস্থ্য সতেজ রাখতে রোজ সন্ধ্যায় পার্কে যাচ্ছেন হাঁটতে। কিন্তু সুস্থ থাকার জন্য যেখানকার বাতাস বুকে ভরতে যাচ্ছেন, তাতেই যদি বিষ থাকে?

কোথাও যাওয়ার আগে মোবাইলে টাচ করেই এবার দেখে নিন, সেখানকার দূষণের মাত্রা। বিশ্বব্যাংক এবং পরিবেশ দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আসছে নতুন অ্যাপ ক্লেয়ার। যাকে বলা হচ্ছে হাইপার লোকাল পলিউশন মনিটরিং। এর ফলে যে কেউ দেখে নিতে পারবেন তিনি যে এলাকায় যাচ্ছেন, সেখানকার বাতাসে কতটা বিষ। শুধু তাই নয়, কোনো ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা যদি সেখানকার পরিবেশের কাছে হানিকর হয়, তাও এই অ্যাপ তাকে মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেবে।

যেভাবে হবে এই অ্যাপের ব্যবহার: অ্যাপ প্রস্তুতকারক সংস্থা সূত্রে খবর, মাসখানেকের মধ্যে নতুন এই অ্যাপ চলে আসবে। তা ডাউনলোড করে সেখানে নিজের নাম, ঠিকানা, বয়স, কী কী অসুখ তাঁর রয়েছে সেগুলো একবার এন্ট্রি করতে হবে। সেখানেই অপশন আসবে, আপনি কোথায় আছেন, আর কোথায় যাবেন? সেই নাম লেখার পরই স্ক্রিনে ভেসে উঠবে ওই এলাকার দূষণের মাত্রা। এমনকি আপনার যদি সিওপিডি, লাং, হার্টের অসুখ থাকে, তবে সংস্থাই আপনাকে জানিয়ে দেবে সেখানে যাওয়া উচিত কি না? গেলে কোন সময় যাওয়া উচিত, কোন সময় দূষণের ধূলিকণা সক্রিয়। পরিবেশ দপ্তরের আধিকারিকদের কথায়, এই অ্যাপ সব থেকে বেশি বয়স্ক লোকদের কাজে লাগবে। কারণ ষাটোর্ধ্ব প্রৌঢ়রা বেশিরভাগই হার্ট এবং লাংয়ের অসুখে ভোগেন। দূষণের জেরে বের হওয়া ধূলিকণা তাদের শরীরেই সব থেকে বেশি আক্রমণ করবে। কারণ তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম। ফলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই এই অ্যাপ ব্যবহার করে তারা অন্তত দূষণের জেরে নিজের শরীরের ক্ষতি হওয়া কিছুটা হলেও আটকাতে পারবেন।

কিন্তু এত দূষণের কারণ কী? পরিবেশবিদদের কথায়, রাতভর শহরে বাইরে থেকে ট্রাক ঢোকে। সেখান থেকে বেরনো দূষণের ধূলিকণা রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত থাকে। তাছাড়া নির্মীয়মাণ বহুতল ভবনের কাজকর্মও এখন সারারাত চলে। সেখান থেকেও পিএম ২.৫ ধূলিকণা ছড়ায় প্রচুর; যা সকাল পর্যন্ত থাকে। তাদের কথায়, পিএম ৫ ধূলিকণা তবু মানুষের নাকে আটকাতে পারে, শরীরে প্রবেশ করে না। কিন্তু পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ এতই ছোটো ধূলিকণা যে, সরাসরি হার্টে চলে যায়। কোনোভাবেই তা আটকানো সম্ভব হয় না। আর এই পুরোনো গাড়ির ধোঁয়াতে এই ধূলিকণার পরিমাণই সবচেয়ে বেশি। অ্যাপ প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্তা সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘মাসখানেকের মধ্যেই নতুন এই অ্যাপ চলে আসবে। তা দিয়ে যে কেউ দেখে নিতে পারবেন, কোন এলাকায় দূষণের মাত্রা কতটা! সেটা বুঝে তারা বাড়ি থেকে বেরুতে পারবেন।’

মেডিসিন বিভাগের বিশিষ্ট চিকিত্সক ড. অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘সবাই আমরা দূষণের শিকার। এই অ্যাপের মাধ্যমে আমরা আগাম জানতে পারব ঠিকই, তবে দূষণ তো কমবে না। দূষণের জেরে নাক, কান, গলা সব থেকে বেশি এফেক্ট করে। তাই সাবধানতা অবলম্বন খুব জরুরি। তবে কোথায় কেমন দূষণের মাত্রা তা জানলে যতটা সম্ভব এড়ানো সম্ভব হতে পারে।’ পরিবেশ দপ্তরের আধিকারিকদের কথায়, সকালের দিকেই দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। সবচেয়ে ছোটো যে ধূলিকণা পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫, সবচেয়ে বেশি এই সময়েই শরীরে প্রবেশ করে; যা থেকে হার্ট ও লাংয়ের অসুখ বেশি হয়। এমনকি সন্তানসম্ভবা মায়ের শরীরে তা প্রবেশ করলে শিশুরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই মর্নিং ওয়াকে বেরুনোর আগে এই অ্যাপ কার্যকরী ভূমিকা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, দেখে নেওয়া যাবে কোথাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা কতটা! সেটা বুঝে বেরুনো যাবে রাস্তায়।