শামীম আহাম্মদ :
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বজাার থানাধীন আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে আগ্রহী প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
রোববার বিকেলে ভোটার তালিকা সংশোধন করে পুনরায় তফসিল ঘোষণাসহ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিখা রানী রায়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচনে আগ্রহী ৬ প্রার্থী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সে মতে গত ১০ আগষ্ট তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুসারে সোমবার মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম নিতে এসে ভোটার তালিকা ত্রুটি দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন। বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের অঘটন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
অভিযোগকারী শিরিনা বেগম জানান, আমার স্বামী জীবন মিয়া দীর্ঘদিন যাবত প্রবাসে থাকার পরও তার নামে ভোটার করা হয়। (যার ভোটার নং ২৭২)। শুধু তাই নয়, ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তিসহ অনেক প্রবাসীদের পরিকল্পিত ভাবে ভোটার করা হয়েছে। আমি যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি এ কৌশল অবলম্বন করা হয়।
সফিকুল ইসলাম জানান, আমার ৬ষ্ঠ ও ১০ম শ্রেণিতে দু’জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আমি যেন প্রার্থী হতে না পারি সে জন্য ১০ম শ্রেনির শিক্ষার্থীর অনুকুলে ভোটার করা হয়েছে। (যার ভোটার নং ৩২২)। তিনি আরো জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর ভোটার তালিকায় শফিকুল ইসলামের স্থলে পরিকল্পিত ভাবে ইসলাম মিয়া লিপিবদ্ধ করেছে। (যার ভোটার নং ২৬)।
বিল্লাল হোসেন জানান, আমার ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। রোল নং ০১ থাকা সত্বেও ভোটার তালিকায় আমার নামের স্থলে সুফিয়া খাতুনের নাম রয়েছে। তিনি আরো জানান, ভোটার তালিকায় নাম আসার জন্য আমি প্রধান শিক্ষকের কাছে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপিও প্রদান করি। যেন আমি প্রার্থী হতে না পারি তাই উদ্দেশ্য প্রনোদীত ভাবে আমাকে ভোটার
তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যা অত্যন্ত দু:খজনক।
ছাদেকুর রহমান জানান, ভোটার তালিকায় আমার নামের স্থলে হাফেজ সাদেকুর রহমান লিপিবদ্ধ করেছে। (যার ভোটার নং ১৮৭)। আমি হাফেজ না হওয়া সত্বেও পরিকল্পিত ভাবে আমার নামের পূর্বে হাফেজ লাগানো হয়েছে। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেও আমি প্রার্থীতা নিয়ে শংকিত।
হেলাল মিয়া জানান, আমার নামের স্থলে ভোটার তালিকায় ছামদানী লিপিবদ্ধ করেছে। (যার ভোটার নং ১৭)। বিধি মোতাবেক খসড়া ভোটার তালিকা শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠ করে শোনানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি এবং নোটিশ বোর্ডেও খসড়া ভোটার তালিকা টানানো হয়নি।
নিজাম খান জানান, ভোটার তালিকায় আমার নামের স্থলে দেলোয়ার খান লিপিবদ্ধ করেছে। (যার ভোটার নং ৫১)। ভোটার তালিকা দেখার জন্য বিদ্যালয়ে গেলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কোন অভিভাবককে তালিকাটি দেখাননি। এছাড়াও অনেক অভিভাবকের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।
ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিখা রানী রায় আমতা আমতা করে বলেন, এখানে আমার কোন হাত নেই। সরকারি নিয়ম ও বিধি অনুসরণ করে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার ও উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা কবির আহামেদ জানান, তফসিল ঘোষণা করার পর ভোটার তালিকা সংশোধন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিষেক দাস উক্ত বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা শিকার করে জানান, অভিযোগ গুলো প্রিজাইডিং অফিসারের নিকট পাঠানো হবে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।