জাতীয়:
রংপুর-৩ আসনের আসন্ন উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের পরিবারে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এই আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে এই দ্বন্দ্ব এখন বহুমুখী।
এরশাদের ভাগনি ড. মেহেজেবুন্নেছা রহমান (টুম্পা) ও এরশাদ-রওশন দম্পতির ছেলে রাহগির আল মাহির (সাদ এরশাদ) দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া। আর রংপুর মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির নিজের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন এরশাদ-বিদিশার ছেলে এরিক এরশাদকে দিয়ে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এরিককে দিয়ে ইয়াছির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করায় চটেছেন এরিকের মা বিদিশা, বিব্রত এরিকের চাচা ও জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও। এছাড়া জাপা থেকে বহিষ্কৃত, সাবেক এমপি ও এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারও দলের মনোনয়ন পেতে বেশ আগ্রহী।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, দু-তিন দিনের মধ্যেই রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এখানে ভোট গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।
জানা গেছে, এই উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এরশাদের পরিবার-স্বজনরা এখনো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেননি। সাদকে প্রার্থী করার বিষয়ে তার মা রওশন এরশাদেরও আগ্রহ রয়েছে। তবে সাদের চাচা ও জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে কোনো পক্ষ-বিপক্ষ না নিয়ে সাংগঠনিকভাবে এগোচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে প্রধান করে আট সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। জি এম কাদের বলেছেন, বোর্ড রংপুরের তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছ থেকে নাম চাইবে। এছাড়া যারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন তাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
জাপার একাধিক দায়িত্বশীল নেতা ইত্তেফাককে জানান, রওশন এবং জি এম কাদেরের মধ্যে চলমান মতপার্থক্য নিরসন হওয়া না হওয়ার বিষয়টিও এখন অনেকাংশে নির্ভর করছে রংপুরের প্রার্থী মনোনয়নের ওপর। যদিও জি এম কাদের বারবারই বলেছেন, পরিবারে ও জাপায় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, তবে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।
রংপুরের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা গতকাল বুধবার রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে ড. টুম্পার পক্ষে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখর-উজ-জামানও গতকাল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। আগের দিন মঙ্গলবার এরিককে দিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ইয়াছির। রবিবার থেকে জাপা মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করলেও গত চার দিনে এই তিনটি মনোনয়ন ফরমই বিক্রি হয়েছে। প্রার্থী হতে আগ্রহী হলেও সাদ এখনো দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।
সাদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমি তো বাবার আসনে প্রার্থী হতে চাই। দলের মনোনয়ন ফরম অবশ্যই সংগ্রহ করবো। প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই রংপুরে এরশাদকে দাফনের সময় সাদ উপস্থিত ছিলেন। দাফনের পরদিন এরশাদের কবর জিয়ারতের ছবিও প্রকাশ করেন সাদ। এবার কোরবানির ঈদেও সাদ কয়েকদিন পল্লীনিবাসে থেকেছেন। তবে কখনো রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থাকায় দলের কেন্দ্রে ও রংপুরের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে তাকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
এরশাদের ভাগনি ড. টুম্পা জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্ত্রী। টুম্পার বাবা প্রয়াত ড. আসাদুর রহমান ও মা মেরিনা রহমানও সংসদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রোগ্রামের পরিচালক হিসেবে কর্মরত টুম্পা—বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এরশাদের দাফনের সময় টুম্পা রংপুরে যান, এরপরেও একাধিকবার তিনি রংপুরে গিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মী ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এদিকে এরশাদের আরেক ছেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এরিককে দিয়ে ইয়াছির মঙ্গলবার দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এরিকের মা বিদিশা বলেছেন, ‘আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে এভাবে রাজনীতির ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা জঘণ্য, নিন্দনীয় ও অমানবিক।’ জাপার কয়েক নেতা ইত্তেফাককে বলেন, এরিককে দিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার মাধ্যমে সাদের সঙ্গেও এরিককে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। এরিককে পক্ষভুক্ত করার চেষ্টায় পারিবারিক কলহ বাড়তে পারে। অবশ্য জি এম কাদের বলেছেন, এরিককে দিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি তার জানা ছিল না, পরে ঘটনা জেনে তিনি নিজেও বিব্রতবোধ করেছেন।