ঢাকা ১০:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডায়াবেটিসজনিত চোখের সমস্যা

লাইফস্টাইল:

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ সম্পর্কে আমরা সবাই অবগতি আছি। এই রোগে শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতির কারণে শুধু রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে না, বহু বছর ধরে অনিয়মিত ডায়াবেটিসের কারণে পর্যায়ক্রমে স্নায়ুরোগ, কিডনি রোগ এমনকি চক্ষু রোগ হতে পারে।

ডায়াবেটিসজনিত চোখের রোগ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি

রেটিনা হলো চোখের সবচেয়ে দৃষ্টি সংবেদনশীল অংশ। রক্তে অতিরিক্ত শর্করার কারণে চোখের রেটিনার রক্তনালী সরু হয়ে যায়। এতে রেটিনার পুষ্টিহীনতার কারণে রক্তপাত, প্রদাহ, পানি জমা ইত্যাদির কারণে ধীরে ধীরে দৃষ্টিহীনতা হতে পারে। সময়মতো চিকিত্সা না করালে চোখের প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই প্রথমত, অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চক্ষু বিশেষজ্ঞর পরামর্শ প্রয়োজনে লেসার চিকিত্সার মাধ্যমে অনেকক্ষেত্রে এই রোগ নির্মূল করা সম্ভব হয়। প্রতি ছয় মাস পরপর চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিলে ভালো।

ডায়াবেটিসজনিত ছানি

চোখের স্বচ্ছ লেন্সের ভেতর দিয়ে আলো প্রবাহিত হয়ে রেটিনায় দৃষ্টির অনুভূতি সৃষ্টি করে। আলোর এ প্রভাবের জন্য লেন্সের স্বচ্ছতা অত্যন্ত জরুরি। ডায়াবেটিস রোগের কারণে স্বচ্ছ লেন্সের ভেতরে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বলে লেন্স ফুলে অস্বচ্ছ হয়ে যায়, তখন দৃষ্টি কমে যায়। আস্তে আস্তে এই অস্বচ্ছতা বা ছানির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং রোগী ক্রমাগত দুষ্টিহীন হয়ে পড়ে।

চিকিৎসা :ডায়াবেটিস জনিত ছানি অপসারণ করে কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন কর অনেকাংশে দৃষ্টি ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়। তবে কারো যদি রেটিনাতেও সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে দৃষ্টি সম্পূর্ণভাবে ফিরে না-ও আসতে পারে।

চোখের পাওয়ার সমস্যা : অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে স্বচ্ছ লেন্স ফুলে গিয়ে ক্ষীণদৃষ্টি বা মায়োপিয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে চশমা ব্যবহারে সাময়িক আরামবোধ হলেও পরবর্তীকালে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কারণে আবার চশমার পাওয়ার পরিবর্তন করতে হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় পাওয়ার পরীক্ষা করে চশমা দেয়া প্রয়োজন।

গ্লুকোমা :ডায়াবেটিক রোগীদের চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে গ্লুকোমা রোগ হতে পারে। প্রাইমারি গ্লুকোমাতে ডায়াবেটিস হলো একটি রিস্ক ফ্যাক্টর। বহুদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে চোখে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। তখন চোখের পুষ্টি প্রদানের জন্য নতুন রক্তনালী তৈরি হয়, যা হতে চোখে প্রদাহ, রক্তপাত এবং পরবর্তীতে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে গ্লুকোমা রোগ হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ, রেটিনাতে লেজার চিকিত্সা এবং গ্লুকোমা রোগের চিকিত্সার মাধ্যমে অন্ধত্ব থেকে চোখকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। এছাড়াও ডায়াবেটিসের কারণে চোখের স্নায়ু দুর্বলতা হতে পারে। দৃষ্টি স্নায়ুর প্রদাহ বা অপটিক নিউরাইটিসের কারণে হঠাৎ করে চোখের দৃষ্টি কমে যেতে পারে। মাংসপেশির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে চোখ টেরা হয়ে যেতে পারে। পরিশেষে বলতে হয়, ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ডায়াবেটিস জনিত চোখের সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব নয়। নিয়মিত চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং ডাক্তারের পরামর্শে দ্রুত চিকিসার মাধ্যমে অন্ধত্ব থেকে চোখকে রক্ষা করা যায়।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট

পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল

চেম্বার: চিটাগাং আই কেয়া সেন্টার

মেডিক্যাল কলেজ পূর্ব গেট

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

ডায়াবেটিসজনিত চোখের সমস্যা

আপডেট সময় ০৪:৩৯:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৯
লাইফস্টাইল:

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ সম্পর্কে আমরা সবাই অবগতি আছি। এই রোগে শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতির কারণে শুধু রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে না, বহু বছর ধরে অনিয়মিত ডায়াবেটিসের কারণে পর্যায়ক্রমে স্নায়ুরোগ, কিডনি রোগ এমনকি চক্ষু রোগ হতে পারে।

ডায়াবেটিসজনিত চোখের রোগ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি

রেটিনা হলো চোখের সবচেয়ে দৃষ্টি সংবেদনশীল অংশ। রক্তে অতিরিক্ত শর্করার কারণে চোখের রেটিনার রক্তনালী সরু হয়ে যায়। এতে রেটিনার পুষ্টিহীনতার কারণে রক্তপাত, প্রদাহ, পানি জমা ইত্যাদির কারণে ধীরে ধীরে দৃষ্টিহীনতা হতে পারে। সময়মতো চিকিত্সা না করালে চোখের প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই প্রথমত, অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চক্ষু বিশেষজ্ঞর পরামর্শ প্রয়োজনে লেসার চিকিত্সার মাধ্যমে অনেকক্ষেত্রে এই রোগ নির্মূল করা সম্ভব হয়। প্রতি ছয় মাস পরপর চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিলে ভালো।

ডায়াবেটিসজনিত ছানি

চোখের স্বচ্ছ লেন্সের ভেতর দিয়ে আলো প্রবাহিত হয়ে রেটিনায় দৃষ্টির অনুভূতি সৃষ্টি করে। আলোর এ প্রভাবের জন্য লেন্সের স্বচ্ছতা অত্যন্ত জরুরি। ডায়াবেটিস রোগের কারণে স্বচ্ছ লেন্সের ভেতরে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বলে লেন্স ফুলে অস্বচ্ছ হয়ে যায়, তখন দৃষ্টি কমে যায়। আস্তে আস্তে এই অস্বচ্ছতা বা ছানির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং রোগী ক্রমাগত দুষ্টিহীন হয়ে পড়ে।

চিকিৎসা :ডায়াবেটিস জনিত ছানি অপসারণ করে কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন কর অনেকাংশে দৃষ্টি ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়। তবে কারো যদি রেটিনাতেও সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে দৃষ্টি সম্পূর্ণভাবে ফিরে না-ও আসতে পারে।

চোখের পাওয়ার সমস্যা : অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে স্বচ্ছ লেন্স ফুলে গিয়ে ক্ষীণদৃষ্টি বা মায়োপিয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে চশমা ব্যবহারে সাময়িক আরামবোধ হলেও পরবর্তীকালে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কারণে আবার চশমার পাওয়ার পরিবর্তন করতে হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় পাওয়ার পরীক্ষা করে চশমা দেয়া প্রয়োজন।

গ্লুকোমা :ডায়াবেটিক রোগীদের চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে গ্লুকোমা রোগ হতে পারে। প্রাইমারি গ্লুকোমাতে ডায়াবেটিস হলো একটি রিস্ক ফ্যাক্টর। বহুদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে চোখে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। তখন চোখের পুষ্টি প্রদানের জন্য নতুন রক্তনালী তৈরি হয়, যা হতে চোখে প্রদাহ, রক্তপাত এবং পরবর্তীতে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে গ্লুকোমা রোগ হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ, রেটিনাতে লেজার চিকিত্সা এবং গ্লুকোমা রোগের চিকিত্সার মাধ্যমে অন্ধত্ব থেকে চোখকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। এছাড়াও ডায়াবেটিসের কারণে চোখের স্নায়ু দুর্বলতা হতে পারে। দৃষ্টি স্নায়ুর প্রদাহ বা অপটিক নিউরাইটিসের কারণে হঠাৎ করে চোখের দৃষ্টি কমে যেতে পারে। মাংসপেশির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে চোখ টেরা হয়ে যেতে পারে। পরিশেষে বলতে হয়, ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ডায়াবেটিস জনিত চোখের সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব নয়। নিয়মিত চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং ডাক্তারের পরামর্শে দ্রুত চিকিসার মাধ্যমে অন্ধত্ব থেকে চোখকে রক্ষা করা যায়।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট

পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল

চেম্বার: চিটাগাং আই কেয়া সেন্টার

মেডিক্যাল কলেজ পূর্ব গেট