ঢাকা ০৬:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানবজীবনে যা কিছু প্রথম

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক কাজই করি। প্রতিটি কাজেরই সূচনাবিন্দু আছে, সে হিসাবে প্রথম সংঘটিত হওয়া কাজের দিনটির আবেদনই আলাদা। প্রথমবারের মতো সংঘটিত হওয়া কাজটি একটু ব্যতিক্রমই থাকে! কেমন ব্যতিক্রম—সে সুলুকসন্ধানেই এই ‘প্রথম’নামা।

প্রথম কান্না: জন্ম মাত্রই বিকট শব্দের মাধ্যমে মানবশিশুর পৃথিবী-যাত্রা শুরু হয়—কান্নার মাধ্যমে বোঝাতে চায়, তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে এলে? কেন আনলে? কান্নার আওয়াজে বাবা-মা তো বটেই চারপাশের সবাই খুব খুশি হয়! যেন কান্নাটা পবিত্র কিছু! এই শিশুই যখন বড়ো হয়ে কাঁদে—সে কান্না আর কারো কাছেই ভালো লাগে না! শুধু প্রথম কান্নাটাই কানে সুধা বর্ষণ করার যোগ্যতা রাখে!

প্রথম কলেজে যাওয়া: স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যখন কিশোরটি কলেজে যায়, তখন নিজেকে কিশোর ভাবতে চায় না! তরুণ-যুবা ভাবতেই পছন্দ করে। সে অনেক বড় হয়ে গেছে, আকাশসমান উঁচু—শাসনবারণের সকল কিছুর ঊর্ধ্বে! পৃথিবী তার চোখে নতুন রূপে ধরা দেয়। সবকিছুর মাঝেই নতুন কোনো মাত্রা আবিষ্কার করে। কলেজটি কো-এডুকেশনের হলে সে খুশি হয়; অন্যথা হলে ভাগ্য এবং অভিভাবককে মনে মনে অভিসম্পাত করে। যদিও মুখে এ কথা উচ্চারণ করার জো নাই!

প্রথম ঘুষ: কেউ চাকরি করবে, ঘুষ খাবে না—হতেই পারে না! চাকরিটি পেতেই প্রচুর টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল। সে ঘুষের টাকাটা না তুললে চলবে কেন! প্রথম ঘুষ খাওয়ার দিন একটু ইতস্তত বোধ করে। গলা শুকিয়ে আসে। চারদিকে বারবার তাকায়—কেউ দেখে ফেলল না তো! তারপর টাকাটা কাঁপা কাঁপা হাতে নিরাপদ জায়গায় রেখে দেয়! এই ঘুষ নিতে বাধে না। এটাও মনে আসে না, সে নিজেই যখন কোনো কাজের জন্য কাউকে বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়েছিল—মনে কী পরিমাণ ঘৃণা পোষণ করেছিল!

প্রথম মা-বাবা ডাক: আধো আধো বোলে যখন শিশু দুর্বোধ্য কিছু উচ্চারণ করে তখন মা ধরেই নেয়—শিশু মা ডেকেছে! যদিও শিশু মোটেই কাজটি করেনি! অবশ্য তার অনেক আগ থেকেই শুরু হয় শিশুর কানের কাছে সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে মা ডাকার ‘বালখিল্য’ আবদার! কিন্তু শিশু শুনলেও তো! না শোনার মধ্য দিয়েই যখন পুলকিত মা ঘোষণা দেয় বাবু তাকে মা বলে ডেকেছে অমনি বাবাও উঠে-পড়ে লাগে—বাবা ডাক শুনেই ছাড়বে! শেষপর্যন্ত শিশু বলুক বা না বলুক, স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাবা-মা ডাক শোনার গৌরবে গর্বিত থাকে!

প্রথম প্রেম: সহপাঠী, কাজিন কিংবা পাড়াতো যে কোনো ‘অসাধারণ’ মানুষটি দিয়েই প্রেমের সূত্রপাত হতে পারে। প্রেমের পরশ পেয়ে কখন যে সে মাটির তিন হাত উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে জানেই না! কারো কারো হাতে এ সময়ে জটিল-কঠিন কিছু কবিতাও সৃজিত হয়—তোমাকে দেখেছিলাম রাতে/মাছের মুড়ো আমার পাতে…। প্রেম বাড়তে বাড়তে একসময় ফুস করে বাস্তবতার শক্ত মাটিতে আছাড় খায়—প্রেমিকপ্রবর শুরুতে জীবন ও জগতের অসারতা, তুচ্ছতা আবিষ্কার করার দার্শনিক প্রজ্ঞায় প্রজ্ঞাবান হয়। এ প্রজ্ঞার প্রতি অবজ্ঞা ভাব সৃষ্টি হলে বোঝে—প্রেম মাত্র শুরু হলো, আরো প্রেম অপেক্ষা করছে!

প্রথম বিয়ে: বাংলাদেশে দ্বিতীয় বিয়েও করে এমন লোকের সংখ্যা খুব একটা কম নয়। প্রথম বিয়ে বললেই যে দ্বিতীয় বিয়ের আলোচনা কিংবা প্রস্তুতির প্রসঙ্গ উঠবে, তাও নয়। ভদ্রলোক বিয়ে করে একবার, সেই বিয়ের নামই প্রথম বিয়ে। এবার সে যদি বাসর রাতে বিড়াল মারতে পারে তো বীর পুরুষ; বিড়ালের বদলে অন্য কিছু মেরে বসে তখন বীর পুরুষ থাকে না সাধারণ পুরুষে নেমে আসে। আবার কেউ কেউ নিজেই বিড়ালে রূপান্তরিত হয়! বিয়ের পরপরই তার আফসোস জন্মায়—জীবিত থাকাটাই তো ভালো ছিল, কেন শুধু শুধু দিল্লিকা লাড্ডুর স্বাদ চাখতে গেল!

প্রথম স্কুলে যাওয়া: সন্তান বিদ্বান হবে, অনেক বড় মানুষ হবে—প্রতিটি বাবা-মায়ের মনে বাসনাটি সুপ্ত থাকে! কিন্তু প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে শিশু মোটামুটি হকচকিয়ে যায়—অনেক নতুন মুখ দেখে! তার উপর তাকে নিজের নামটি একাধিকবার অনেক লোককে বলতে হয়! এ অহেতুক উত্পাতে ভেতরে ভেতরে সে ক্ষুব্ধ হলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না! অবশ্য নেতিবাচক মনোভাবটি বেশিদিন থাকে না!

প্রথম চাকরি: পড়াশোনার পাট চুকানোর অনেক বছর পর হয়তো টেনেটুনে একটা চাকরি জোগাড় করা গেল। তাও চড়া ঘুষের বিনিময়ে। অফিস করতে গিয়ে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্ম হয়। এক লাফে অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেকটাই পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় চাকরি যে আসলে কী জিনিস—এ সত্যে উপনীত হওয়ার সুযোগের মাধ্যমে জ্ঞানবৃক্ষ ডালপালা মেলে। অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে প্রথম চাকরিটি বাদ দিয়ে নতুন আরেকটি চাকরিতে যোগদান করার সুযোগ এলেও—হা-হুতাশ! অবস্থা দেখে মনে হয়, চাকরি আগেরটাই হাজার গুণে ভালো ছিল!

প্রথম মৃত্যু: দীর্ঘদিন সংসারযাপনের কারণে মানুষের পরিচয়ের পরিধি বিস্তৃত হয়—বাবা, চাচা, খালু, মামা, দাদা, নানা ইত্যাদি পরিচয়ে নিজেকে আবিষ্কার করে। কিন্তু সব সম্পর্কই লোপ পায় মৃত্যুতে। প্রথম মৃত্যুর মাধ্যমেই জাগতিক লীলার অবসান ঘটে। প্রথম মৃত্যুর মানে যদি কেউ খুঁজতে যায়, তাহলে খুঁজতে হবে দ্বিতীয় মৃত্যুকে! সঙ্গত কারণেই ওটার নাগাল পাওয়া যাবে না, সুতরাং ঘুরেফিরে প্রথম মৃত্যু নিয়েই থাকতে হবে!



ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

মানবজীবনে যা কিছু প্রথম

আপডেট সময় ০৩:০০:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক কাজই করি। প্রতিটি কাজেরই সূচনাবিন্দু আছে, সে হিসাবে প্রথম সংঘটিত হওয়া কাজের দিনটির আবেদনই আলাদা। প্রথমবারের মতো সংঘটিত হওয়া কাজটি একটু ব্যতিক্রমই থাকে! কেমন ব্যতিক্রম—সে সুলুকসন্ধানেই এই ‘প্রথম’নামা।

প্রথম কান্না: জন্ম মাত্রই বিকট শব্দের মাধ্যমে মানবশিশুর পৃথিবী-যাত্রা শুরু হয়—কান্নার মাধ্যমে বোঝাতে চায়, তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে এলে? কেন আনলে? কান্নার আওয়াজে বাবা-মা তো বটেই চারপাশের সবাই খুব খুশি হয়! যেন কান্নাটা পবিত্র কিছু! এই শিশুই যখন বড়ো হয়ে কাঁদে—সে কান্না আর কারো কাছেই ভালো লাগে না! শুধু প্রথম কান্নাটাই কানে সুধা বর্ষণ করার যোগ্যতা রাখে!

প্রথম কলেজে যাওয়া: স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যখন কিশোরটি কলেজে যায়, তখন নিজেকে কিশোর ভাবতে চায় না! তরুণ-যুবা ভাবতেই পছন্দ করে। সে অনেক বড় হয়ে গেছে, আকাশসমান উঁচু—শাসনবারণের সকল কিছুর ঊর্ধ্বে! পৃথিবী তার চোখে নতুন রূপে ধরা দেয়। সবকিছুর মাঝেই নতুন কোনো মাত্রা আবিষ্কার করে। কলেজটি কো-এডুকেশনের হলে সে খুশি হয়; অন্যথা হলে ভাগ্য এবং অভিভাবককে মনে মনে অভিসম্পাত করে। যদিও মুখে এ কথা উচ্চারণ করার জো নাই!

প্রথম ঘুষ: কেউ চাকরি করবে, ঘুষ খাবে না—হতেই পারে না! চাকরিটি পেতেই প্রচুর টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল। সে ঘুষের টাকাটা না তুললে চলবে কেন! প্রথম ঘুষ খাওয়ার দিন একটু ইতস্তত বোধ করে। গলা শুকিয়ে আসে। চারদিকে বারবার তাকায়—কেউ দেখে ফেলল না তো! তারপর টাকাটা কাঁপা কাঁপা হাতে নিরাপদ জায়গায় রেখে দেয়! এই ঘুষ নিতে বাধে না। এটাও মনে আসে না, সে নিজেই যখন কোনো কাজের জন্য কাউকে বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়েছিল—মনে কী পরিমাণ ঘৃণা পোষণ করেছিল!

প্রথম মা-বাবা ডাক: আধো আধো বোলে যখন শিশু দুর্বোধ্য কিছু উচ্চারণ করে তখন মা ধরেই নেয়—শিশু মা ডেকেছে! যদিও শিশু মোটেই কাজটি করেনি! অবশ্য তার অনেক আগ থেকেই শুরু হয় শিশুর কানের কাছে সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে মা ডাকার ‘বালখিল্য’ আবদার! কিন্তু শিশু শুনলেও তো! না শোনার মধ্য দিয়েই যখন পুলকিত মা ঘোষণা দেয় বাবু তাকে মা বলে ডেকেছে অমনি বাবাও উঠে-পড়ে লাগে—বাবা ডাক শুনেই ছাড়বে! শেষপর্যন্ত শিশু বলুক বা না বলুক, স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাবা-মা ডাক শোনার গৌরবে গর্বিত থাকে!

প্রথম প্রেম: সহপাঠী, কাজিন কিংবা পাড়াতো যে কোনো ‘অসাধারণ’ মানুষটি দিয়েই প্রেমের সূত্রপাত হতে পারে। প্রেমের পরশ পেয়ে কখন যে সে মাটির তিন হাত উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে জানেই না! কারো কারো হাতে এ সময়ে জটিল-কঠিন কিছু কবিতাও সৃজিত হয়—তোমাকে দেখেছিলাম রাতে/মাছের মুড়ো আমার পাতে…। প্রেম বাড়তে বাড়তে একসময় ফুস করে বাস্তবতার শক্ত মাটিতে আছাড় খায়—প্রেমিকপ্রবর শুরুতে জীবন ও জগতের অসারতা, তুচ্ছতা আবিষ্কার করার দার্শনিক প্রজ্ঞায় প্রজ্ঞাবান হয়। এ প্রজ্ঞার প্রতি অবজ্ঞা ভাব সৃষ্টি হলে বোঝে—প্রেম মাত্র শুরু হলো, আরো প্রেম অপেক্ষা করছে!

প্রথম বিয়ে: বাংলাদেশে দ্বিতীয় বিয়েও করে এমন লোকের সংখ্যা খুব একটা কম নয়। প্রথম বিয়ে বললেই যে দ্বিতীয় বিয়ের আলোচনা কিংবা প্রস্তুতির প্রসঙ্গ উঠবে, তাও নয়। ভদ্রলোক বিয়ে করে একবার, সেই বিয়ের নামই প্রথম বিয়ে। এবার সে যদি বাসর রাতে বিড়াল মারতে পারে তো বীর পুরুষ; বিড়ালের বদলে অন্য কিছু মেরে বসে তখন বীর পুরুষ থাকে না সাধারণ পুরুষে নেমে আসে। আবার কেউ কেউ নিজেই বিড়ালে রূপান্তরিত হয়! বিয়ের পরপরই তার আফসোস জন্মায়—জীবিত থাকাটাই তো ভালো ছিল, কেন শুধু শুধু দিল্লিকা লাড্ডুর স্বাদ চাখতে গেল!

প্রথম স্কুলে যাওয়া: সন্তান বিদ্বান হবে, অনেক বড় মানুষ হবে—প্রতিটি বাবা-মায়ের মনে বাসনাটি সুপ্ত থাকে! কিন্তু প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে শিশু মোটামুটি হকচকিয়ে যায়—অনেক নতুন মুখ দেখে! তার উপর তাকে নিজের নামটি একাধিকবার অনেক লোককে বলতে হয়! এ অহেতুক উত্পাতে ভেতরে ভেতরে সে ক্ষুব্ধ হলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না! অবশ্য নেতিবাচক মনোভাবটি বেশিদিন থাকে না!

প্রথম চাকরি: পড়াশোনার পাট চুকানোর অনেক বছর পর হয়তো টেনেটুনে একটা চাকরি জোগাড় করা গেল। তাও চড়া ঘুষের বিনিময়ে। অফিস করতে গিয়ে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্ম হয়। এক লাফে অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেকটাই পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় চাকরি যে আসলে কী জিনিস—এ সত্যে উপনীত হওয়ার সুযোগের মাধ্যমে জ্ঞানবৃক্ষ ডালপালা মেলে। অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে প্রথম চাকরিটি বাদ দিয়ে নতুন আরেকটি চাকরিতে যোগদান করার সুযোগ এলেও—হা-হুতাশ! অবস্থা দেখে মনে হয়, চাকরি আগেরটাই হাজার গুণে ভালো ছিল!

প্রথম মৃত্যু: দীর্ঘদিন সংসারযাপনের কারণে মানুষের পরিচয়ের পরিধি বিস্তৃত হয়—বাবা, চাচা, খালু, মামা, দাদা, নানা ইত্যাদি পরিচয়ে নিজেকে আবিষ্কার করে। কিন্তু সব সম্পর্কই লোপ পায় মৃত্যুতে। প্রথম মৃত্যুর মাধ্যমেই জাগতিক লীলার অবসান ঘটে। প্রথম মৃত্যুর মানে যদি কেউ খুঁজতে যায়, তাহলে খুঁজতে হবে দ্বিতীয় মৃত্যুকে! সঙ্গত কারণেই ওটার নাগাল পাওয়া যাবে না, সুতরাং ঘুরেফিরে প্রথম মৃত্যু নিয়েই থাকতে হবে!