হালিম সৈকত,কুমিল্লা:
জিয়ারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পিইসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহেরর সময় কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট হাতেনাতে ধরা পরেন কেন্দ্রের হল সুপার ও একলারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম।
বিষয়টি মোবাইল ফোনে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে জানালে তিনি কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে হল সুপার জহিরুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে আসে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাম্মৎ রাশেদা আক্তার হল সুপারকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার ও বিভাগীয় মামলা রুজু করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার শরীফ রফিকুল ইসলামকে নির্দেশ দেন।
ঘটনাটি ঘটে গত ২০ নভেম্বর বিজ্ঞান পরীক্ষার সময়। অভিযুক্ত শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলামকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দেখুন বিষয়টি হলো কে বা কারা পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল ফেলে দেয়, পরীক্ষার্থীর পায়ের নিচে দেখে তারা আমাকে দেখায় এবং আমার হাতে তুলে দেয় বাইরে ফেলে দেবার জন্য। ঠিক সেই সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক আমার হাতে নকল দেখে ফেলে। আমি এটা ফেলে দিতে উদ্যত হতেই ঘটনাটি ঘটে। আমি নকল সরবরাহ করিনি।
জানা যায়, জহিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবত গৌরীপুর থাকেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ান এবং পিইসি পরীক্ষায় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ প্লাস কিংবা বৃত্তি পাইয়ে দেবার কথা বলে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এটা দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। নকল সরবরাহে ধরা পড়ার পর বিষয়টি সামনে আসে এবং অনেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার দীঘদিনের কার্যাকলাপ তুলে ধরেন। তারা বলেন, এটা নতুন কিছু না, তিনি সব সময় এ রকম করে থাকেন।
শুধু জহিরুল ইসলাম নন। তিতাসের প্রত্যেকটি কেন্দ্রে অবাধে নকল চলেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের খাতায় লিখে দিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক। সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে কি হবে এই পরীক্ষা নিয়ে। কোমলমতি শিশুরা কি শিখছে? তারা ছোটবেলা থেকেই একটি খারাপ ধারণা নিয়ে বড় হবে। আমাদের জন্য বিষয়টি কি লজ্জাজনক নয়? তবে বিষয়টি বিরাট আকার ধারণ করার আরেকটি কারণ হচ্ছে সৃজনশীল পদ্ধতি। বিষয়টি শিশুদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই ভাবা উচিত সৃজনশীল রাখা হবে কিনা? আরেকটি কারণ হচ্ছে শিক্ষকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
কারণ কোন স্কুল কত % পাশ করেছে, কে কতটা বৃত্তি পেল এবং কে কতটা জিপিএ ৫ পেল এই নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। কোন কোন শিক্ষক গ্যারান্টি দিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন, আমার কাছে পড়লে ছেলেটি বা মেয়েটি ভালো ফলাফল করবে নিশ্চিত। আর ওই শিক্ষক অভিভাবকদের কাছ থেকে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবেই ওই শিক্ষকের তাড়না থাকে কিভাবে তার কাছে প্রাইভেট পড়া ছাত্রটিকে সহযোগিতা করা যায়? এমনও শোনা যায় যাদের কোন দায়িত্ব নেই তারা হলে অযথা ঘুরাফেরা করেন।
এমন কয়েকজন শোকজ নোটিশও খেয়েছেন। সাধারণ মনে ধারণা জাতিকে নষ্ট করে দিচ্ছেন তারা। এভাবে চললে পিইসি পরীক্ষা রাখার আদৌ কোন যুক্তি নাই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সাধারণ জনগণ।