লাইফস্টাইল :
সুস্থতা অমূল্য সম্পদ। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। দীর্ঘ জীবনে এই সুখ ধরে রাখতে হলে স্বাস্থ্য সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। একটা সময় পর্যন্ত আমাদের শরীর কিছু রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। তারপর ধীরে ধীরে সে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বিশেষ করে বয়স ৩০ পার হলেই কমতে থাকে এই ক্ষমতা। সুতরাং এ বয়স থেকে কিছু কিছু রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেই হবে, না হলে বড় কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক অসুখই নিঃশব্দে বাস করে শরীরে। লক্ষণও প্রকাশ পায় না। বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছালে তবেই জানান দেয়। তাই উপযুক্ত পরীক্ষা না করালে চিকিৎসা শুরু হতেও দেরি হয় ও ক্ষতির শঙ্কা থেকে যায়।
তিন মাস অন্তর বিভিন্ন ক্রনিক অসুখের গতিবিধি জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ, নিয়মিত শরীরচর্চা, ডায়েট করে নিজের যত্ন নিতে বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখাটা জরুরি বলেই মত চিকিৎসকদের।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স ৩০ পেরোলেই কিছু কিছু পরীক্ষা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। শরীরে কোনো সমস্যা না হয়েও বয়স ৩০-এর পর দেহে আসতে পারে বিশেষ কিছু অসুখ। সেসব অসুখের উপলক্ষ বা লক্ষণ বোঝা নাও যেতে পারে। তাই বয়স ৩০ পার হলেই অন্তত ছয় মাস বা এক বছর অন্তর অন্তর মূল পাঁচটি পরীক্ষা করানো বুদ্ধিমানের কাজ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চলুন জেনে নেওয়া যাক পরীক্ষাগুলো কী কীঃ
ইসিজি
হৃদযন্ত্রের গতিবিধি জানতে বা শরীরে কোনো জটিল রোগের বীজ ঘাপটি মেরে আছে কি না তা বুঝতে বয়স ৩০ পেরোলেই ৬ মাস অন্তর ইসিজি করান। যারা এই বয়সে পৌঁছানোর আগেই হৃদরোগের শিকার হয়েছেন, তারা ইসিজির পরিবর্তে বছরে একবার টিএমটি করিয়ে রাখুন। হৃদযন্ত্রে কোনো প্রকার সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি না, ব্লক রয়েছে কি না এগুলো জানতে বিশেষ সাহায্য করে টিএমটি। যত দ্রুত নির্ণীত হবে সমস্যা, তত তাড়াতাড়ি শুরু করতে পারবেন চিকিৎসা। অনেক সময় ওষুধের চেয়ে জীবনযাপনের কোনো কোনো দিক পরিবর্তন করেও কিছু অসুখ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
জেনেটিক পরীক্ষা
বয়স ৩০ পার হলে অনেক জিনঘটিত অসুখ মাথাচাড়া দেয়। এত দিন শরীরে যে অসুখ প্রকাশ পায়নি তা মিউটেশনের ফলে সে সব অসুখ প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে। জিনগত কোনো অসুখ দেখা দিচ্ছে কি না তা বুঝতে বছরে একবার অন্তত জেনেটিক টেস্ট করিয়ে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ডিএনএ পরিবর্তন, ক্যানসারের ঝুঁকি ইত্যাদি বুঝতে এই ধরনের পরীক্ষা বিশেষ কার্যকরী।
লিপিড প্রোফাইল
অনিয়মিত জীবনযাপন, ভুল খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চায় অবহেলা ইত্যাদির কারণে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। কমতে থাকে ভালো কোলেস্টেরল। বিলিরুবিনের মাত্রার তারতম্য ঘটতে শুরু করে। এসজিপিটি, এসজিওটির মাত্রাও কম-বেশি হতে শুরু করে। মূলত বয়স ৩০ পার হলেই এই প্রবণতা দেখা যায়। তাই বছরে দু’বার সম্পূর্ণ লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
লিভার ফাংশন
রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল ক্ষতি করে যকৃতেরও। বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়লে যেমন হেপাটাইটিসের শঙ্কা বাড়ে, তেমনি প্রোটিন ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা এদিক-ওদিক হলেও লিভারের অসুখ দানা বাঁধে। তাই সতর্ক থাকতে বছরে একবার সম্পূর্ণ লিভার ফাংশন টেস্ট করুন।
প্যাপ স্মিয়ার
মহিলাদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটি ৩০ পার হলেই করা জরুরি। জরায়ুমুখের ক্যানসার শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে এটি একটি সহজ পরীক্ষা। ইদানীং জরায়ুমুখের ক্যানসারের পরিমাণ যে হারে বেড়েছে, তাতে বছরে অন্তত একবার এই পরীক্ষা করিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।