ঢাকা ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সূর্যের জন্মের আগের বিরল পদার্থ মিলল উল্কাপিণ্ডে!

তথ্যপ্রযুক্তি :

সূর্যের জন্মের আগেই ব্রহ্মাণ্ডের যে আদিমতম কঠিন পদার্থের সৃষ্টি হয়েছিল, তার হদিস মিলেছে পৃথিবীতে। প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি বছর আগে ব্রহ্মাণ্ডের প্রচণ্ড তাপমাত্রায় ঐ কঠিন পদার্থের পক্ষে বেশিক্ষণ টিকে থাকা অসম্ভব ছিল। সেই প্রচণ্ড তাপমাত্রায় যে কোনো পদার্থেরই গলে বা বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঐ তাপমাত্রায় যে পদার্থ গলেনি সেরকম একটি পদার্থকে উল্কাপিণ্ডের খাঁজে খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। এই বিরল পদার্থটির হদিস মিলেছে আজ থেকে ৫১ বছর আগে উত্তর মেক্সিকোতে আঁছড়ে পড়া একটি উল্কাপিণ্ডের গায়ে। সেই উল্কাপিণ্ডের নাম—‘অ্যালেন্দে’। ১৯৬৯-র ফেব্রুয়ারিতে অ্যালেন্দে আঁছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে।

ব্রহ্মাণ্ডের আদিমতম ঐ কঠিন পদার্থকে বলা হয়, ‘প্রি-সোলার গ্রেইনস’। সেন্ট লুইয়ে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-অ্যাস্ট্রোনমি’তে।

অ্যালেন্দে উল্কাপিণ্ডটির খাঁজেই ছিল ঝাপসাটে সাদা পদার্থটি। কিন্তু সেটি আদতে কী, তা কী দিয়ে তৈরি, এত দিন জানা সম্ভব হয়নি। আর তাই ঐ পদার্থটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কিউরিয়াস মারি’। দুই-দুইবার নোবেল পুরস্কার জয়ী রসায়নবিদ মারি কুরির স্মরণে। রাসায়নিক বিশ্লেষণের পর এবার জানা গেল, অ্যালেন্দের খাঁজে থাকা পদার্থটি আসলে ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর একটি যৌগ। আর তার মধ্যে রয়েছে সিলিকন ও কার্বনের একটি যৌগ-সিলিকন কার্বাইড। যা রয়েছে আদ্যোপান্ত কঠিন অবস্থায়। যার জন্ম হয়েছিল সূর্যের জন্মেরও আগে। আজ থেকে অন্তত ৫০০/৫৫০ কোটি বছর আগে।

মূল গবেষক ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওলগা প্রাভদিভ্তসেভা বলেছেন, ব্রহ্মাণ্ডের যে সময়ে ঐ কঠিন পদার্থের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সময় তার পক্ষে বেশিক্ষণ কঠিন অবস্থায় থাকা সম্ভব ছিল না। কারণ ব্রহ্মাণ্ডের তাপমাত্রা তখন খুব বেশি ছিল। যে তাপমাত্রায় যে কোনো পদার্থই কঠিন অবস্থায় বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারে না। যা আমাদের যথেষ্টই অবাক করে দিয়েছে। আরো অবাক করেছে সেই পদার্থটি তৈরি হয়েছিল ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো দুইটি ধাতু (যাদের বলা হয়, ‘ক্যালসিয়াম-অ্যালুমিনিয়াম-রিচ ইনক্লুশন (সিএআই)’ দিয়ে। যাদের গলনাঙ্ক (মেল্টিং পয়েন্ট) খুব বেশি নয়।

৫১ বছর আগে পৃথিবীর বুকে আঁছড়ে পড়া অ্যালেন্দে উল্কাপিণ্ডটি সংরক্ষিত আছে শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়ামের ‘প্রিত্জকার সেন্টার ফর মেটিওরিটিক্স অ্যান্ড পোলার স্টাডিজ’-এ। এই উল্কাপিণ্ডটি এর আগেও খবরের শিরোনাম হয়েছিল। বেশ কয়েক বছর আগে যখন তার খাঁজে আটকে থাকা পদার্থটি সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ না জানা সত্ত্বেও তার নামকরণ করা হয়েছিল দুই-দুইবার নোবেল পুরস্কারজয়ী রসায়নবিদ মারি কুরির নামে।

মূল গবেষক প্রাভদিভ্তসেভার কথায়, আমাদের সূর্যের জন্মের আগে নেবুলার কোনো কোনো জায়গায় হয়তো এমন তাপমাত্রা ছিল, যাতে সিলিকন কার্বাইডের মতো কঠিন পদার্থ সৃষ্টির পর তা কয়েক শ কোটি বছর ধরে স্থায়ী হতে পারে। এর মানে সূর্যের জন্মের আগে যে কঠিন পদার্থগুলোর জন্ম হয়েছিল, তাদের সবাই প্রচণ্ড তাপমাত্রায় গলে বা বাষ্পীভূত হয়ে যায়নি।—আনন্দবাজার।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

সূর্যের জন্মের আগের বিরল পদার্থ মিলল উল্কাপিণ্ডে!

আপডেট সময় ০২:৩১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০

তথ্যপ্রযুক্তি :

সূর্যের জন্মের আগেই ব্রহ্মাণ্ডের যে আদিমতম কঠিন পদার্থের সৃষ্টি হয়েছিল, তার হদিস মিলেছে পৃথিবীতে। প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি বছর আগে ব্রহ্মাণ্ডের প্রচণ্ড তাপমাত্রায় ঐ কঠিন পদার্থের পক্ষে বেশিক্ষণ টিকে থাকা অসম্ভব ছিল। সেই প্রচণ্ড তাপমাত্রায় যে কোনো পদার্থেরই গলে বা বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঐ তাপমাত্রায় যে পদার্থ গলেনি সেরকম একটি পদার্থকে উল্কাপিণ্ডের খাঁজে খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। এই বিরল পদার্থটির হদিস মিলেছে আজ থেকে ৫১ বছর আগে উত্তর মেক্সিকোতে আঁছড়ে পড়া একটি উল্কাপিণ্ডের গায়ে। সেই উল্কাপিণ্ডের নাম—‘অ্যালেন্দে’। ১৯৬৯-র ফেব্রুয়ারিতে অ্যালেন্দে আঁছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে।

ব্রহ্মাণ্ডের আদিমতম ঐ কঠিন পদার্থকে বলা হয়, ‘প্রি-সোলার গ্রেইনস’। সেন্ট লুইয়ে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-অ্যাস্ট্রোনমি’তে।

অ্যালেন্দে উল্কাপিণ্ডটির খাঁজেই ছিল ঝাপসাটে সাদা পদার্থটি। কিন্তু সেটি আদতে কী, তা কী দিয়ে তৈরি, এত দিন জানা সম্ভব হয়নি। আর তাই ঐ পদার্থটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কিউরিয়াস মারি’। দুই-দুইবার নোবেল পুরস্কার জয়ী রসায়নবিদ মারি কুরির স্মরণে। রাসায়নিক বিশ্লেষণের পর এবার জানা গেল, অ্যালেন্দের খাঁজে থাকা পদার্থটি আসলে ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর একটি যৌগ। আর তার মধ্যে রয়েছে সিলিকন ও কার্বনের একটি যৌগ-সিলিকন কার্বাইড। যা রয়েছে আদ্যোপান্ত কঠিন অবস্থায়। যার জন্ম হয়েছিল সূর্যের জন্মেরও আগে। আজ থেকে অন্তত ৫০০/৫৫০ কোটি বছর আগে।

মূল গবেষক ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওলগা প্রাভদিভ্তসেভা বলেছেন, ব্রহ্মাণ্ডের যে সময়ে ঐ কঠিন পদার্থের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সময় তার পক্ষে বেশিক্ষণ কঠিন অবস্থায় থাকা সম্ভব ছিল না। কারণ ব্রহ্মাণ্ডের তাপমাত্রা তখন খুব বেশি ছিল। যে তাপমাত্রায় যে কোনো পদার্থই কঠিন অবস্থায় বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারে না। যা আমাদের যথেষ্টই অবাক করে দিয়েছে। আরো অবাক করেছে সেই পদার্থটি তৈরি হয়েছিল ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো দুইটি ধাতু (যাদের বলা হয়, ‘ক্যালসিয়াম-অ্যালুমিনিয়াম-রিচ ইনক্লুশন (সিএআই)’ দিয়ে। যাদের গলনাঙ্ক (মেল্টিং পয়েন্ট) খুব বেশি নয়।

৫১ বছর আগে পৃথিবীর বুকে আঁছড়ে পড়া অ্যালেন্দে উল্কাপিণ্ডটি সংরক্ষিত আছে শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়ামের ‘প্রিত্জকার সেন্টার ফর মেটিওরিটিক্স অ্যান্ড পোলার স্টাডিজ’-এ। এই উল্কাপিণ্ডটি এর আগেও খবরের শিরোনাম হয়েছিল। বেশ কয়েক বছর আগে যখন তার খাঁজে আটকে থাকা পদার্থটি সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ না জানা সত্ত্বেও তার নামকরণ করা হয়েছিল দুই-দুইবার নোবেল পুরস্কারজয়ী রসায়নবিদ মারি কুরির নামে।

মূল গবেষক প্রাভদিভ্তসেভার কথায়, আমাদের সূর্যের জন্মের আগে নেবুলার কোনো কোনো জায়গায় হয়তো এমন তাপমাত্রা ছিল, যাতে সিলিকন কার্বাইডের মতো কঠিন পদার্থ সৃষ্টির পর তা কয়েক শ কোটি বছর ধরে স্থায়ী হতে পারে। এর মানে সূর্যের জন্মের আগে যে কঠিন পদার্থগুলোর জন্ম হয়েছিল, তাদের সবাই প্রচণ্ড তাপমাত্রায় গলে বা বাষ্পীভূত হয়ে যায়নি।—আনন্দবাজার।