ঢাকা ১০:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে কথিত ডাক্তার জহুর লালের চিকিৎসায় একাধিক রোগী পঙ্গু ও মৃত্যু হওয়ার অভিযোগ

রায়হান চৌধুরী, এন এ মুরাদ :

শ্রী জহুর লাল দেবনাথ পেশায় একজন ফার্মেসি ব্যাবসায়ী। এই ব্যাবসার মাঝে তিনিযে কখন একজন বড় ডাক্তার হয়ে গেছে তা তিনি নিজেই জানেনা? তিনি নিজেতে ভারতের একজন বড় ডাক্তার হিসেবে পরিচয়দেন। ফার্মেসি ব্যাবসার পাশা পাশি তারই ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানেই ডায়বেটিস, ড্রেসিং, ইস্টেজ, চোখ, কান, নাক, গলা, বক্ষ, হার্ট, ফোড়া, পঁচা গলা, চর্ম যৌন, মা, ও শিশুসহ এমন কোন চিকিৎসা নেই যে তিনি করেন না?

এমনটাই ঘটনা ঘটছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মেটংগর বাজারে নিজের শ্রী কৃষ্ণ ফার্মেসীতেই চিকিৎসা দিচ্ছেন শ্রী জহুর লাল দেবনাথ।

জহুর লালের এমবিবিএস ও বিডিএস কোন সার্টিফিকেট না থাকলেও রোগীদের অবলীলায় দিয়ে যাচ্ছে, রোগীকে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের এন্টিবায়োটিক। সহযোগী হিসাবে কাজ করছেন তারই ছেলে সেতু দেবনাথ। সেতু তার প্রেসক্রিপশনে রোগীকে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের এন্টিবায়োটিক লিখে। সেতু নিজেকে ডিএমএস ঢাকা, মা ও শিশু (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) চর্ম ও যৌন ঢাকা -রোগী দেখার প্যাডে উল্লেখ করে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। আবার অধিকাংশ সময়ে রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থ হয় ভুল চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছে। তার এই ভুল চিকিৎসায় অনেকের হাত-পা কেটে পঙ্গুসহ মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে অনেক রোগী।
তারই মতো এই উপজেলায় অধিকাংশ ঔষধ ব্যাবসায়িরা প্রায় সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেয়, সব রোগের চিকিৎসাও করে। ভুল চিকিৎসার কারণে অনেক সময় রোগী বড় ধরনের বিপদ এমনকি মৃত্যুমুখে পতিত হয় অনেক রোগী।

চিকিৎসায় দেওয়া হচ্ছে এক শিশু রোগীকে

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কথিত ডাক্তার জহুর লালের ভুল চিকিৎসায় পান্ডুঘর এলাকায় বেশ কয়েকজন রোগীর মৃত্যু হয়। তার ভূল চিকিৎসার কারনে মানবেতর জীবন যাপন করছেন পান্ডুঘরের কামাল মোল্লা।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, কথিত ডাক্তার জহুর লাল দেবনাথ প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কাগজ কলমে অভিযোগ করার সাহস পায়নি। তবে মুখে মুখে ভুক্তভোগী রোগীদের রয়েছে বহু অভিযোগ।

ভুক্তভোগী পান্ডুঘর গ্রামের মানিক মিয়া বলেন কয়েক বছর আগে আমার স্ত্রীকে জহুর লাল দুটি ইঞ্জেকশন পুস করেন। পুস করার পর আমার স্ত্রী আর বাড়ি আসতে পারেননি। জহুর লালের ফার্মেসি থেকে বের হয়ে রাস্তায় সে মৃত্যুবরণ করেন। মানিক মিয়া আরোও বলেন তার প্রতিবেশী বাচ্চু মিয়ার ছেলে সুমনের অকাল মৃত্যু হয় এই জহুর লালের ভূল চিকিৎসায় । স্থানীয়দের মুখে মুখেও এই কথা বিরাজমান, যে জহুর লালের ভুল চিকিৎসায় মানিক মিয়া ও বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী মারা যায়।

পান্ডঘরের কামাল মোল্লা বলেন, আমি বিদেশে থাকতাম। দেশে আসার পর পায়ে একটি ছোট ফোড়া হয়। ঐ ফোড়ার চিকিৎসা করি কুমিল্লায়। কুমিল্লা থেকে বাড়ি আসলে জহুর লাল বলেন, আপনি কষ্ট করে কুমিল্লায় গিয়ে ড্রেসিং না করে আমার কাছে আসুন আমি ড্রেসিং করে দিলে ঠিক হয়ে যাবে। জহুর লাল আমাকে ড্রেসিং করলে পায়ের পচন বেড়ে যায়। পরবর্তীতে কুমিল্লা গেলে ডাক্তার বলেন, আপনার আগুল কেটে ফেলতে হবে। তারপর পায়ের চারটি আঙ্গুল কেটেফেলতে হয়। পা- নিয়ে চলাফেরা অসুবিধা হয় বলে এই চা দোকানে বউ বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্ট করে জীবন যাপন করছি।

পঙ্গু হয়ে যাওয়া কামাল মোল্লা পরিবার নিয়ে ব্যাবসা করছেন।

কামাল মোল্লার স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে জহুর লাল পঙ্গু বানিয়ে দিল। জহুর লালের কারনে আজ ছেলে মেয়ে নিয়ে দোকানের ভিতর থাকতে হয়। আমি জহুর লালের বিচার চাই।

এব্যাপারে কথিত ডাক্তার জহুর লাল বলেন, রোগী মরলে ভাল কথা কেউত আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। কামাল মোল্লার পা কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন আমি ড্রেসিং করছি তার ভালোর জন্য।

মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডাঃ নাজমুল আলম বলেন, পল্লী চিকিৎসকদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে প্রাথমিক চিকিৎসার বাহিরে তারা কোনধরনের চিকিৎসা দিতে পারবেনা। কোনধরনের অপারেশন করতে পারবেনা। এন্টিবায়োটিক লিখতে পারবেনা। এবিষয়ে যদি সুনিদিষ্ট কোন অভিযোগ পাই তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নিয়াতুজ্জামান, বলেন বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ওই পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান মেলার পুরস্কার বিতরন অনুষ্ঠিত

মুরাদনগরে কথিত ডাক্তার জহুর লালের চিকিৎসায় একাধিক রোগী পঙ্গু ও মৃত্যু হওয়ার অভিযোগ

আপডেট সময় ০১:১৫:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ মার্চ ২০২০

রায়হান চৌধুরী, এন এ মুরাদ :

শ্রী জহুর লাল দেবনাথ পেশায় একজন ফার্মেসি ব্যাবসায়ী। এই ব্যাবসার মাঝে তিনিযে কখন একজন বড় ডাক্তার হয়ে গেছে তা তিনি নিজেই জানেনা? তিনি নিজেতে ভারতের একজন বড় ডাক্তার হিসেবে পরিচয়দেন। ফার্মেসি ব্যাবসার পাশা পাশি তারই ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানেই ডায়বেটিস, ড্রেসিং, ইস্টেজ, চোখ, কান, নাক, গলা, বক্ষ, হার্ট, ফোড়া, পঁচা গলা, চর্ম যৌন, মা, ও শিশুসহ এমন কোন চিকিৎসা নেই যে তিনি করেন না?

এমনটাই ঘটনা ঘটছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মেটংগর বাজারে নিজের শ্রী কৃষ্ণ ফার্মেসীতেই চিকিৎসা দিচ্ছেন শ্রী জহুর লাল দেবনাথ।

জহুর লালের এমবিবিএস ও বিডিএস কোন সার্টিফিকেট না থাকলেও রোগীদের অবলীলায় দিয়ে যাচ্ছে, রোগীকে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের এন্টিবায়োটিক। সহযোগী হিসাবে কাজ করছেন তারই ছেলে সেতু দেবনাথ। সেতু তার প্রেসক্রিপশনে রোগীকে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের এন্টিবায়োটিক লিখে। সেতু নিজেকে ডিএমএস ঢাকা, মা ও শিশু (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) চর্ম ও যৌন ঢাকা -রোগী দেখার প্যাডে উল্লেখ করে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। আবার অধিকাংশ সময়ে রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থ হয় ভুল চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছে। তার এই ভুল চিকিৎসায় অনেকের হাত-পা কেটে পঙ্গুসহ মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে অনেক রোগী।
তারই মতো এই উপজেলায় অধিকাংশ ঔষধ ব্যাবসায়িরা প্রায় সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেয়, সব রোগের চিকিৎসাও করে। ভুল চিকিৎসার কারণে অনেক সময় রোগী বড় ধরনের বিপদ এমনকি মৃত্যুমুখে পতিত হয় অনেক রোগী।

চিকিৎসায় দেওয়া হচ্ছে এক শিশু রোগীকে

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কথিত ডাক্তার জহুর লালের ভুল চিকিৎসায় পান্ডুঘর এলাকায় বেশ কয়েকজন রোগীর মৃত্যু হয়। তার ভূল চিকিৎসার কারনে মানবেতর জীবন যাপন করছেন পান্ডুঘরের কামাল মোল্লা।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, কথিত ডাক্তার জহুর লাল দেবনাথ প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কাগজ কলমে অভিযোগ করার সাহস পায়নি। তবে মুখে মুখে ভুক্তভোগী রোগীদের রয়েছে বহু অভিযোগ।

ভুক্তভোগী পান্ডুঘর গ্রামের মানিক মিয়া বলেন কয়েক বছর আগে আমার স্ত্রীকে জহুর লাল দুটি ইঞ্জেকশন পুস করেন। পুস করার পর আমার স্ত্রী আর বাড়ি আসতে পারেননি। জহুর লালের ফার্মেসি থেকে বের হয়ে রাস্তায় সে মৃত্যুবরণ করেন। মানিক মিয়া আরোও বলেন তার প্রতিবেশী বাচ্চু মিয়ার ছেলে সুমনের অকাল মৃত্যু হয় এই জহুর লালের ভূল চিকিৎসায় । স্থানীয়দের মুখে মুখেও এই কথা বিরাজমান, যে জহুর লালের ভুল চিকিৎসায় মানিক মিয়া ও বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী মারা যায়।

পান্ডঘরের কামাল মোল্লা বলেন, আমি বিদেশে থাকতাম। দেশে আসার পর পায়ে একটি ছোট ফোড়া হয়। ঐ ফোড়ার চিকিৎসা করি কুমিল্লায়। কুমিল্লা থেকে বাড়ি আসলে জহুর লাল বলেন, আপনি কষ্ট করে কুমিল্লায় গিয়ে ড্রেসিং না করে আমার কাছে আসুন আমি ড্রেসিং করে দিলে ঠিক হয়ে যাবে। জহুর লাল আমাকে ড্রেসিং করলে পায়ের পচন বেড়ে যায়। পরবর্তীতে কুমিল্লা গেলে ডাক্তার বলেন, আপনার আগুল কেটে ফেলতে হবে। তারপর পায়ের চারটি আঙ্গুল কেটেফেলতে হয়। পা- নিয়ে চলাফেরা অসুবিধা হয় বলে এই চা দোকানে বউ বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্ট করে জীবন যাপন করছি।

পঙ্গু হয়ে যাওয়া কামাল মোল্লা পরিবার নিয়ে ব্যাবসা করছেন।

কামাল মোল্লার স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে জহুর লাল পঙ্গু বানিয়ে দিল। জহুর লালের কারনে আজ ছেলে মেয়ে নিয়ে দোকানের ভিতর থাকতে হয়। আমি জহুর লালের বিচার চাই।

এব্যাপারে কথিত ডাক্তার জহুর লাল বলেন, রোগী মরলে ভাল কথা কেউত আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। কামাল মোল্লার পা কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন আমি ড্রেসিং করছি তার ভালোর জন্য।

মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডাঃ নাজমুল আলম বলেন, পল্লী চিকিৎসকদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে প্রাথমিক চিকিৎসার বাহিরে তারা কোনধরনের চিকিৎসা দিতে পারবেনা। কোনধরনের অপারেশন করতে পারবেনা। এন্টিবায়োটিক লিখতে পারবেনা। এবিষয়ে যদি সুনিদিষ্ট কোন অভিযোগ পাই তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নিয়াতুজ্জামান, বলেন বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ওই পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।