শামীম আহম্মেদ, মুরাদনগরঃ
কুমিল্লার মুরাদনগর সোনালী ব্যাংকে অভিনব কৌশলে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। গত কয়েক বছরে ৮/১০ জন গ্রাহকের টাকা হারানোর ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক কারণে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছেন না। ফলে ব্যাংকের ভিতরে বা বাহিরে একজন প্রতারকও ধরা পড়েনি। এ ঘটনায় ভূক্তভোগিরা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন।
ভূক্তভোগি দিলালপুর গ্রামের কাঠ মিস্ত্রি নজরুল মিয়া বলেন, ‘বিদেশ থেকে ফোন করে আমার ছেলে বলেছে, বাবা আপনার জন্য ১ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছি। ফোন পেয়ে টাকা তোলার জন্য আমি বুধবার দুপুরে ব্যাংকে আসি। কাউন্টার থেকে টাকা তোলে গননার সময় দেখি কিছু টাকা অনেক পুরাতন। ভিড় ঠেলে পুরান টাকা পাল্টাতে কাউন্টারে যাওয়ার সময় একজন লোক এসে বলে, দেন স্যার আপনার পুরাতন টাকা রেখে নতুন টাকার বান্ডিল আইন্না দেই। সরল বিশ্বাসে ব্যাংকের লোক মনে করে তার হাতে টাকা তুলে দেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে একটি টাকার বান্ডিল দেয়। যে বান্ডিলে উপরে ও নিচে কিছু এক হাজার টাকার নোট আর ভিতরে অন্য নোট। টাকা গননা দেখি মাত্র বিশ হাজার। বাকি আশি হাজার টাকা নাই। চোখের বালি পাত্তায় (ইশারায়) এ লোক কই গেল আর পাইলাম না। করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক দিন আমার ছেলে টাকা দিতে পারে নাই। টাকা পাঠানোর খবর পাইয়া অনেক খুশি হয়ে ব্যাংকে আইছিলাম এ বলেই, সে হাউমাউ করে বিলাপের সুরে কেঁদে উঠে।
ব্যাংকের আশ-পাশের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যাত্রাপুর ইউনিয়নের মরিয়ম আক্তার গত জুলাইতে ৩০ হাজার, ঘোড়াশাল গ্রামের জসিম উদ্দিন ৭০ হাজার টাকা হারান। গত বছর মোচাগড়া গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রীর কাছ থেকে ৫০ হাজার, কামাল্লা গ্রামের ফরিদ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগম হারান ১ লক্ষ টাকা। ২০১৮ সালের নভেম্বরে সদর ইউনিয়নের কাবিল মিয়ার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায় প্রতারক চক্র। ২০১৭ সালে ৩ জন ও ২০১৬ সালে ২ জন টাকা হারিয়েছেন। এই পাঁচজনের সঠিক নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদশর্ীরা জানায়, কারো মুখে রোমাল শুকিয়ে আবার করো টাকা গননা করে দেওয়ার নামে পকেট কেটে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।
সোনালী ব্যাংক মুরাদনগর শাখার ম্যানেজার মাকসুদ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। একই ঘটনা অনেক বার হয়েছে ব্যাংকের ভিতরে। এই চক্রটি ধরতে আমাদের হাতে তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। ব্যাংকের ভিতরে সিসি ক্যামেরা না থাকায় এই চক্রটি বারবার অভিনব কৌশলে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে একাধিকবার লিখিত ভাবে জানিয়েছি।