এন এ মুরাদঃ
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের একজন সফল উদ্যেক্তা কৃষক ইউনুছ ভূইয়া, তিনি তার অদম্য ইচ্ছা আর মনোবলের জোড়ে ৬০ বিঘা মাছের প্রজেক্টের ভীতর গড়ে তোলেছেন নানা জাতের ফল ও সবজি বাগান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় কৃষক ইউনুছ ভূইয়া আঠারশ’শতক বিস্তৃর্ণ মাঠে বড়ই, লেবু, মাল্টা, ফুল কপি, মরিচ, টামাটোর বাম্পার ফলন ফলিয়ে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।
এই প্রজেক্টের ভীতর ২ হাজার ৫শ বল সুন্দরী জাতের বড়ই , ৭ হাজার লেবু , সাথী ফসল ও মাল্টাগাছ লাগিয়েছেন। এই মূহর্তে তার বাগানে বড়ইয়ের চমৎকার ফলন রয়েছে। গাছের পাতায় পাতায় বড়ই দোলছে। বল সুন্দরী জাতের বড়ই দেখতে খুব সুন্দর। খেতে মিষ্টি অধিক রসালো ও পুষ্টিগুনে ভরপুর।
বাগানের মালিক কৃষক ইউনুছ ভূইয়া বলেন, আমি বিদেশে ছিলাম। দেশে এসে করুনার কারনে আর বিদেশ যেতে পারি নাই। বেকার হয়ে পড়ছিলাম। অনেক ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেই যে আর অন্যের অধীনে চাকুরী করবনা। এবার উদ্যেক্তা হয়ে নীজেই কিছু একটা করব। তাই আমার পরিত্যাক্ত ১০ বিঘা জমির সাথে আরো ৫০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে একটি মাছের প্রজেক্ট তৈরি করি।
মাছের ব্যবসা ভালো না হওয়ায় প্রজেক্টের ভীতর বড়ই ও লেবুর বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। মাছের প্রজেক্টের মত নীচু জায়গায় ফলবাগান করছি দেখে এলাকার মানুষ আমাকে পাগল বলছে। নানা রকম সমালোচনাও করছে – পুকুরের ভীতর ফলগাছ লাগাইতাছি এগুলো বৃষ্টি আসলে পানিতে ডুবে মারা যাবে। সমালোচকের কথায় কান না দিয়ে নাটোর থেকে আড়াই মাস বয়সী বড়ই ও লেবুর চারা এনে রোপন করি। চারা রোপনের পর মুরাদনগর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মাইন উদ্দিন স্যার সার্বক্ষনিক বাগানটির খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং গাছের পরিচর্যায় প্রয়োজন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। চারা রোপনের ৩ মাস পর বাগানের প্রতিটা গাছে বড়ই এসেছে – বড়ই বাজারে নিয়ে বিক্রি করা লাগেনা। প্রতিদিন প্রচুর মানুষ বাগানে এসে বড়ই নিয়ে যায়। একটি গাছ ২৫-৩০ কেজি বড়–ই আসে । ১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেছি। এই বাগানে প্রতিদিন ১৫ জন শ্রমিক কাজ করে। এছাড়াও বাগানের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষনিক দুইজন লোক নিয়োজিত আছে। আমার বিশ্বাস ছিল সফল হবো এবং হয়েছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য বাগানের চতুর দিকে খাল খনন করা আছে , বাগানের পানি খালে গড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে মেশিনের সাহায্যে পানি বাহির করে দেওয়া হয়। আবার পানি দেওয়া লাগলে খাল থেকে মেশিন দিয়ে পানি দিয়ে দিচ্ছি।
বাগানটি করতে গিয়ে আমি আমার জমিজমা মরগেজ দিয়ে মাত্র ৩ লাখ টাকার কৃষি লোন পেয়েছি। প্রজেক্টের অনেক কাজ বাকী আছে যেগুলো টাকার জন্য করতে পারতেছিনা। সরকার যদি আমাকে সহজ শর্তে কিছু লোন দেয়, তাহলে এই ফল বাগানটা আরো ব্যাবপক ভাবে করতে পারব।
মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন, কুমিল্লায় সম্ভবত এর চেয়ে বড় প্রজেক্ট নাই। বিষ্ময় হলেও সত্য চারদিকে পার বাঁধানো ৬০ বিঘা জমির মাছের প্রজেক্ট এখন ফল আর সবজিতে ভরপুর। বড়ই গাছে বড়–ই এসেছে, বিক্রিও করা হচ্ছে। আর লেবু রমজানের মধ্যে বিক্রি করতে পারবে। লেবুর ফাঁকে রয়েছে সাথী ফসল। আমি রীতিমত এই কৃষি প্রজেক্টটি দেখাশোনা করতেছি। কৃষক ইউনুছ ভূইয়ার মত যারা উদ্যেক্তা হয়ে পরিত্যাক্ত কৃষি জমিতে ফসল ফলাতে চান তাদের সার্বিক সহযোগীতায় মুরাদনগর কৃষি অফিস পাশে থাকবে।