ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর ( ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ) প্রতিনিধি :
মেঘনা নদীতে (ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়ক) মেঘনা সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ডাইয়ূ, হুন্দাই ও কোরিয়া এক্সওয়ে কপোরেশনের একটি যৌথ কনসোর্টিয়াম প্রতিনিধি দল বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সেতু এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কড়িকান্দী ও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিষনন্দী এলাকায় ৭হাজার ৪শত ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১.৬৪ কিলোমিটার দৈঘ্যের ৪ লেনের এ সেতুটি নির্মাণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ অর্থায়নে এই মেঘনা সেতুটি নির্মান করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীতে এই সেতু নির্মাণ হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ওপর দিয়ে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প বাংলাদেশ-ভারত (আখাউড়া-আগরতলা-স্থলবন্দর) যোগাযোগও সহজ হবে। এতে অন্তত ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। পাশাপাশি ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্বও কমে আসবে। সেতুটি নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লার হোমনা, তিতাস, মুরাদনগর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, নবীনগরসহ অন্তত ১৫টি উপজেলার ৫০লক্ষাধিক মানুষের যোগাযোগ সহজতর হবে।
১.৬৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সেতুটি দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক সহায়তায় নির্মিত হবে । এই সেতু নির্মাণ হলে সোনারগাঁ উপজেলার বাস্তুল ও রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকায় ঢাকা বাইপাস (এশিয়ান হাইওয়ে) দিয়ে বিকল্প হিসেবে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যান চলাচল করতে পারবে। এতে ঢাকা-মেঘনা-দাউদকান্দি-ময়নামতির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার কমে আসবে। অন্যদিকে ঢাকা-সিলেট রুটের দূরত্বও ১৫ কিলোমিটার কমবে। এতে ঢাকার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের সঙ্গে ঢাকার দূরত্বও কমে যাবে।
দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিনিধি দলের সেতু এলাকা পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ডাইয়ূর প্রকল্প পরিচালক মি. কাহংবু লি, প্রকল্প বিশেষজ্ঞ মি.জাংগিয়ন লি, কেইসির ঢাকা অফিসের মি.জিনহুপার্ক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) এর সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন(অব:) এবি তাজুল ইসলাম, নারায়নগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, যুগ্ম সচিব ড. মনিরুজ্জামান, মেঘনা সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন, উপসচিব আলতাফ শেখ, রাহিমা আক্তার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অতিরিক্ত প্রশাসক(রাজস্ব) আশরাফ রাসেল, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অহিদুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী ডা:মাহমুদ,আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সোহাগ হোসেন, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো: জাহাঙ্গীর হোসেন।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে পরিকল্পনা কমিশন সেতু নির্মাণে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেয়। এরই মধ্যে সেতু কর্তৃপক্ষ সাব সয়েল ইনভেস্টিকেশন, টপো সার্ভে ও সেতুর ডিজাইনসহ চ‚ড়ান্ত আনুষ্ঠানিক কাজগুলো সম্পন্ন করছে। ‘কনস্ট্রাকশন অব ব্রিজ অন ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর ওভার দ্য রিভার মেঘনা’ নামে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭হাজার ৪ শত ৬৩ কোটি টাকা ।
প্রস্তাবিত মেঘনা সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন জানান, আজকে দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ প্রতিনিধি দলটি সেতু এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত তাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল মাটি পরীক্ষা, গভীরতা ও নানা বিষয় নিয়ে কাজ করবেন। আশাকরা যাচ্ছে ২০২২ সালের জুন মাসে মন্ত্রী পরিষদ কমিটিতে চুড়ান্তভাবে সেতু নির্মাণের বিষয়টি পাস হবে। তার পরই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের এমপি ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে এই সেতুটি নির্মাণ হবে। কোরিয়ান ৩টি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি আজ সেতু এলাকা পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে, এই সেতু নির্মাণ হলে বদলে যাবে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা; বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের দূরত্ব কমে আসবে। পাশাপাশি সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ঢাকা-আগরতলা সড়কের দূরত্ব অনেক কমে আসবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে মালামাল পরিবহণ করা যাবে। আশা করা যায় দ্রুত সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে। মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হলে কয়েকটি জেলার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমে এই এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে একটি বড় ক্ষেত্র তৈরি হবে। সর্বোপরি মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
উল্লেখ্য, সেতু নির্মাণের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ২০১১ সালে মেঘনা নদীতে বিষনন্দী-কড়িকান্দিতে ফেরি চালু হওয়ায় আড়াইহাজার ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা জেলাসহ অনেক জেলার লাখো মানুষ অতি স্বল্প সময়ে ঢাকা যাতায়াত করছেন।