ধর্ম ও জীবন ডেস্কঃ
‘মাওতে কুল্লু কাঈছিন, কুল্লু নাফছিন শারিবুন, কবরে বাইতিন, কুল্লু নাছিন দাখিলুন।’ অর্থাৎ মৃত্যুর শরবতের পেয়ালা সব প্রাণীকেই পান করতে হবে। অজানা, অচেনা, অন্ধকার কবরগৃহে সব মানবজাতিকেই প্রবেশ করতে হবে। কই আগে রওয়ানা হায়, কই পিছে রওয়ানা, অর্থাৎ কেউ আগে যাবেন এবং কেউ পরে যাবেন। এখানে শুধু আগে এবং পরে—এই দুই সময়ের ব্যবধানের তারতম্য।
পার্থিব জীবনে অসুস্থবোধ, কঠিন রোগ অথবা করোনা ভাইরাস হলে এবং এটা থেকে সুস্থতালাভের জন্য মানুষের শেষ ঠিকানা হাসপাতাল। স্মরতব্য দুটি গতিপথ—এক. জীবিত অবস্থায় অসুস্থতা থেকে সুস্থতালাভের শেষ যাত্রা চিকিত্সানিকেতন তথা হাসপাতাল। দুই. মৃত্যুবরণ করলে শেষ যাত্রা কবর তথা গোর। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেলে আত্মীয়স্বজন সবাই দেখতে যাবে, সেবা-শুশ্রূষা করবে। কিন্তু মৃত্যুর পর রুহটা চলে যাবে আলমে আরওয়াহ, অর্থাৎ রুহের জগতে এবং নিষ্প্রাণ দেহটি পড়ে থাকবে আলমে বারজাখ, অর্থাৎ অন্ধকার কবরদেশে।
মৃত্যুর পর কবরেও কিন্তু অসুস্থতা এবং করোনা ভাইরাস-সদৃশ আজাব আছে। তখন যাব কোথায়? দুনিয়ায় করোনা ভাইরাস হলে কোনো না কোনোভাবে চিকিৎসা আছে। কিন্তু কবরে করোনা ভাইরাসের মতো যন্ত্রণাদায়ক আজাব শুরু হলে কী করবেন? অন্ধকার কবরদেশে পাশে কেউ থাকবে না। জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যু অবস্থায় হরহালতে তিনিই মহিমাময় সত্তা, যিনি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় আমাদের দীর্ঘ ১০ মাসের মতো তার গায়েবি কুদরত থেকে মায়ের উদরে খাদ্য ও অক্সিজেন দিয়েছেন।
তিনিই একমাত্র সত্তা, যিনি কত সুন্দর সুনিপুণ কারিগরি করে আমাদের আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে এ নশ্বর পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আমরা দুনিয়ায় এসেছি একমাত্র মহান আল্লাহর হুকুমে, আবারও একমাত্র মহান আল্লাহর হুকুমেই তার কাছে বাধ্যতামূলকভাবেই ফেরত চলে যেতে হবে। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন একমাত্র তার দাসত্ব করার জন্য। দুনিয়ার খুব অল্প সময়ের জিন্দেগিতে যে মহান আল্লাহর দাসত্ব করবে, সে কামিয়াব। আর যে মহান আল্লাহর নাফরমানি করবে, সে নাকাম। সুতরাং সব অবস্থায় আমাদের নিম্নের কতিপয় বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখা অপরিহার্য।
আমানতু বিল্লাহি—ইমান আনয়ন করলাম মহান আল্লাহর ওপর। ওয়া মালাইকাতিহি—মহান আল্লাহর সব ফিরিশতার ওপর। ওয়া কুতুবিহি—কিতাবসমূহের ওপর। ওয়া রসুলিহি—এবং তার সব রসুলের ওপর। ওয়াল ইয়ামুল আখেরি—পরকাল দিবসের ওপর। ওয়াল কাদরি খইরিহি—এবং ভাগ্যের মঙ্গল তথা ভালোর ওপর। ওয়া শাররিহি—তাকদিরের অমঙ্গল তথা মন্দের ওপর। মিনাল্লাহি তাআলা—সবকিছুই আসে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। ওয়াল বা’ছি বাআদাল মাউত—এবং মৃত্যুর পরে পরবর্তী জীবনের ওপর।
ওপরে উল্লিখিত বিষয়াদি হলো মজবুত ইমানের শাখা-প্রশাখা। ইমানের শাখা-প্রশাখাসমূহ মজবুত করে আঁকড়ে ধরলেই মৃত্যুর পর যাব কোথায়—এর উত্তর খুবই সহজ হয়ে যাবে। মাল লাহুল মাওলা, ফালাহুল কুল। কেউ যদি মাওলার হয়ে যায়, তার জন্য সারা কুল অর্থাৎ ইহকাল ও পরকাল সবই হয়ে যায়। মৃত্যুর পর যাব কোথায়? ফানাফিল্লাহ, বাকাবিল্লাহ এবং ফানা ফির রসুল (স) হয়ে যেতে পারলে কবরে জান্নাত মিছলে বাগ, অর্থাৎ কবরই জান্নতের বাগানের মতো হয়ে যাবে।
লেখক: অতিথি অনুবাদক, মক্কা আল মুকাররামাহ ও সাবেক খতিব, জাতীয় সংসদ জামে মসজিদ