ঢাকা ০৫:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫০ বছরেও পালন হয়নি মুরাদনগর হানাদার মুক্ত দিবস

॥সাদেকুর রহমান॥ লেখক : সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।

জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঐকমত্যে পৌছেছেন যে, ১৯৭১ সালে তৎকালীন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানা হানাদার মুক্ত হয় ৬ ডিসেম্বর। সে হিসেবে আজ সোমবার মুরাদনগর হানাদার মুক্ত দিবস। কিন্তু গত ৫০ বছরে পালন করা হয়নি গৌরবের এ দিনটি। এমনকি এবার মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরেও পাকিস্তানি দখলদারদের হটিয়ে স্থানীয় কতিপয় বীর মুক্তিযোদ্ধার বাংলাদেশের পতাকা উড়ানোর দিনটি পালনে কোন উদ্যোগ-আয়োজন নেই। পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে মুরাদনগরবাসীর বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মারক দিবস নীরবে অতিবাহিত হয় বলে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে!

দীর্ঘ পাঁচ দশকে মুরাদনগরের মুক্ত দিবস নিয়েও বিভ্রান্তি বা বিতর্ক ছিল। এ বিভ্রান্তি বা বিতর্ক অবসানে কেউ এগিয়ে এসেছেন- এমন তথ্য জানা যায়নি। বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী মুরাদনগরেও তা পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে শুধুই মুরাদনগরের মহান বিজয় দিবস তথা শত্রুমুক্ত দিবস পালনের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ভেবেছেন বলে মনে হচ্ছে না। যেন ‘কূম্ভকর্ণের ঘুম’ ঘুমাচ্ছেন তারা। তবে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুরাদনগর মুক্ত দিবসকে দেশের অন্যান্য জনপদের মতো উদযাপন করতে চান, নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সার্বিক ও স্থানীয় ইতিহাস জানাতে চান সেটা আলাপচারিতায় বোঝা গেল।

মুক্তিযুদ্ধে মুরাদনগর কিংবা মুরাদনগরের মানুষের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা ও অবদান নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় ইতিহাস বা কুমিল্লা জেলার বর্ণনার সাথে মুরাদনগরের প্রসঙ্গ বিক্ষিপ্তভাবে এলেও তা খন্ডিত বা প্রকৃত ইতিহাসের অংশবিশেষ মাত্র। জাতীয় তথ্য বাতায়ণেও এ সংক্রান্ত একটি শব্দও পাওয়া যায় না। মুরাদনগর উপজেলার সরকারি ওয়েবসাইটে এ নিয়ে কোন শিরোনাম বা উপশিরোনামও নেই। দায়বোধ থেকে আমি বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালে সশরীরের রণাঙ্গনে ছিলেন এমন কয়েকজন জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলি।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুরাদনগর থানার সহকারী কমান্ডার গিয়াস উদ্দিন মাহমুদের সাথে একাধিকবার আলাপ হয়। তিনি মনে করেন, মুরাদনগর হানাদার মুক্ত দিবস পালন করা সময়ের দাবি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ। কিন্তু সে কাজটি করবে কে? চাপা ক্ষোভ ও কষ্ট কিছুটা উগড়ে বললেন, “উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এ কাজে এগিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু তারা আসেন না। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা তো চাইলেই একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারি না। একটা আয়োজনের সাথে আর্থিক সংশ্লেষ আছে। সে ব্যয়টা কে করবে? এমপি সাহেব (বর্তমানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন) এদিকে নজর দিলে অবশ্যই তা হতে পারে। অনেক এলাকায়ই তো আঞ্চলিকভাবে মুক্ত দিবস পালন করা হয়। আপনি (এ গবেষক) বিষয়টা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, খুব ভালো লাগছে। আপনার চেষ্টায় হয়তো এবার না হোক, আগামীতে এদিনটি পালন করতে পারবো।”

এত বছরেও মুরাদনগর মুক্ত দিবসের তারিখ নিয়ে ঐকমত্যে পৌছানো যায়নি কেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে বর্তমান মুরাদনগর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “এ বিষয়ে কারো মনোযোগ নেই বলেই এমন অবস্থা। আমরা যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছি, তারা আলোচনা করে অবশ্যই একটা ঐকমত্যে পৌছতে পারি। আমি উত্তর মুরাদনগরে যুদ্ধ করেছি। পরাজিত পাকিস্তানিরা মুরাদনগর থেকে কোম্পানীগঞ্জ দিয়ে পলায়ন করলে ৬ ডিসেম্বর আমি আমার সতীর্থ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়াই। যুদ্ধকালে আমার কাছে নবীপুর এলাকায় অবস্থানরত ৩৪ জন খানসেনা ও দালাল আত্মসমর্পণ করেন।” আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “আমি উত্তর মুরাদনগরের কথা বললাম। দক্ষিণ মুরাদনগর এলাকায় কবে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়েছে তা বলতে পারবেন পীরকাশিমপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আর্মি তাহের সহ ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা।”

যোগাযোগ করলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আর্মি তাহেরের সাথে। তিনি মুরাদনগরের আলোচিত চাপিতলা সম্মুখ যুদ্ধ সম্পর্কে কিছু তথ্য দিলেন। তাঁর তথ্য অনুযায়ী, “১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর (মোতাবেক ৩ কার্তিক, ১০ রমযান) ভোরে পাকিস্তানিরা বৃষ্টিপুর, গাজীপুর থেকে চাপিতলা ও খামারগ্রাম এলাকায় হামলা চালায়। এতে স্থানীয় তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন এবং ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পাকিস্তানি সেনারা এলাকা ছাড়ে।” একই সাথে তিনি মুরাদনগর মুক্ত দিবস ও স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বাখরনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস মুহুরীর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

সেই পরামর্শ মতো একাধিকবারের চেষ্টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস মুহুরীর সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই। তিনি জানান, “সশস্ত্র পাকিস্তানিদের সাথে মুক্তিকামী স্থানীয়দের অসম লড়াই পুষ্কুরনীপাড়ের রমিজউদ্দিন, কদমতলীর বাচ্চু মিয়া এবং বলিঘরের আবুল বাশার শহীদ হন। নিজ বাড়ি বাখরনগর থেকে নানা কৌশলে টনকি গিয়ে হানিফ চেয়ারম্যানের বাড়ির পশ্চিমপাশে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেই। এক পর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তানিরা পিছু হটে। এ সময় পাকিস্তানিদের এলোপাতাড়ি গুলিতে চাপিতলা গ্রামের জনৈক কাশেম মারা যান। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। কিন্তু এখন কাশেমের ছেলেরাও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে নানা সুবিধা ভোগ করছে।”

প্রবীণ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস মুহুরীর কাছে জানার বিষয় ছিল, মুরাদনগর কবে হানাদার মুক্ত হয়? তিনি বললেন, “বয়স হইছে। এখন তো অনেক কিছুই মনে নাই। কুমিল্লা মুক্ত হইছে ৮ ডিসেম্বর। আমাদেরটা (মুরাদনগরের) ঠিক জানি না। তবে এই সময়ই হবে। পাশের থানা দেবীদ্বার দখলদার মুক্ত হইছে ৪ ডিসেম্বর।” বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন মাহমুদের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পতাকা উড়ানোর প্রসঙ্গটি তাঁকে অবহিত করলে বাখরনগর গ্রামের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় কামরুল হাসান ভূঁইয়া থানা কমান্ডার ছিলেন আর সহকারী কমান্ডার ছিলেন গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ। কামরুল হাসান মারা গেছেন। গিয়াস উদ্দিন যেহেতু ৬ ডিসেম্বর পতাকা উড়িয়েছেন সেদিনটাকেই মুরাদনগরের হানাদার মুক্ত দিবস ধরা যায়। দক্ষিণ মুরাদনগর এলাকায় পতাকা উড়ানোর কোন ঘটনা আমার মনে পড়ছে না।”

অবশ্য মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও গণপরিষদের সাবেক সদস্য হাজি আবুল হাশেম তার জীবদ্দশায় একটি জাতীয় দৈনিকের সাথে আলাপকালে জানিয়েছিলেন, “১২ ডিসেম্বর মুরাদনগরে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী মুক্ত হবার খবর পেয়ে ভারতের আগরতলা থেকে সাড়ে ৪শ’ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হাইস্কুলে প্রবেশ করে উড়িয়ে দেয়া হয় স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা। তখন মুরাদনগরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন কামরুল হাসান ও গিয়াস উদ্দিন।” (তথ্যসূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক; ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭)

কিন্তু হাজি আবুল হাশেম মুরাদনগর মুক্ত দিবস পালনে নিজেও উদ্যোগী হননি কিংবা প্রশাসনের সাথেও এ নিয়ে কথা বলেছেন বলে কারো জানা নেই। অন্যদিকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধারাও এ তারিখের সাথে এক মত নন।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কুমিল্লা ৯ (মুরাদনগর) আসনে বিজয়ী হন আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী হাজি আবুল হাশেম। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৫। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আব্দুল ওদুদ পান ৩ হাজার ৬১৪ ভোট, মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) মনোনীত প্রার্থী হারুন আর রশীদ পান ৪ হাজার ৭১৫ ভোট এবং ন্যাপ (ওয়ালী) প্রার্থী আব্দুল করিম সর্বনি¤œ ১ হাজার ৪৬৬ ভোট পান। হাজি আবুল হাশেম ভাষা সংগ্রামী হিসেবেও পরিচিত। তিনি এলাকায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল রবিবার অপরাহ্নে কথা হয় মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশের সঙ্গে। তিনি বললেন, “পার্শ্ববর্তী দেবীদ্বারের মুক্ত দিবস ছিল ৪ ডিসেম্বর। এটা পত্রিকায় দেখার পর মনে হচ্ছিল মুরাদনগরে কেন মুক্ত দিবস নেই বা পালন করা হয় না। আপনার (এ গবেষক) কাছ থেকে ৬ ডিসেম্বর মুরাদনগর মুক্ত দিবস জানার পর আমি আরও তাগিদ বোধ করছি। মুক্তিযোদ্ধাদের ডেকে সীমিত পরিসরে হলেও কিছু একটা আয়োজনের চেষ্টা করবো।”

ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর কুমিল্লা জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা মুরাদনগর। এটি কুমিল্লা জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ উপজেলার আয়তন ৩৪০.৯৩ বর্গ কিলোমিটার। ২২টি ইউনিয়নের ৩০৫টি গ্রাম নিয়ে গঠিত দেশের অন্যতম বৃহৎ এ উপজেলা। এর উত্তরে নবীনগর; দক্ষিণে চান্দিনা ও দেবীদ্ধার; পূর্বে দেবীদ্ধার, ব্রাহ্মনপাড়া ও কসবা এবং পশ্চিমে দাউদকান্দি, হোমনা ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা। বাংলাদেশের পুরনো থানাগুলোর মধ্যে মুরাদনগর অন্যতম। ১৮৫৮ সালে এ থানা সৃষ্টি হয়। মুক্তিযুদ্ধে এ থানার রয়েছে গৌরবজনক ভূমিকা। যুদ্ধকালীন সময়ে কুমিল্লা ২ নং সেক্টর ‘কে ফোর্স (সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে ফোর্সের নামকরণ)’ এর আওতাধীন ছিল।

পাঠকের কৌতূহল নিবৃত্তের প্রয়াস হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকালে মুরাদনগরে সংঘটিত ঘটনাবলীর কিছুটা তুলে ধরা হলো। ১৯৭১ এর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পাকিস্তানি বাহিনী প্রথম ক্যাম্প স্থাপন করে। কোম্পানীগঞ্জ সহ গোমতী নদীর দক্ষিণ তীরে সরকারি খাদ্য গুদামে। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। গোমতী নদীতে কোম্পানীগঞ্জ ব্রিজের উপর মুক্তিযোদ্ধাদের দাঁড় করিয়ে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হতো। এ লাশ ভাসতে ভাসতে চলে যেতো মেঘনা নদীতে। এছাড়া গোমতী নদী দিয়ে ময়নামতি ক্যান্টেম্যান্ট থেকে খানসেনারা ছোট ছোট লঞ্চযোগে এসে মুরাদনগরের বিভিন্ন গ্রামে আক্রমন করতো। পানিবেষ্টিত মুরাদনগরের অন্যান্য নদী আর্চি, নৈলা ও বুড়ি যুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার সাথে জড়িত। ১৮ আগষ্ট পাকিস্তানি সেনাদের তিনটি দল মুরাদনগর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে হোমনা যাবার পথে মুক্তিযোদ্ধারা দুটি নৌকায় অ্যামবুশ করলে নৌকা দুটি ডুবে যায়। এতে একজন ক্যাপ্টেনসহ ২৯ জন শত্রুসেনা ও ৫ জন রাজাকার নিহত হয়।

এছাড়া মুরাদগরের উত্তরাংশে অবস্থিত ‘অদের খাল’ দিয়ে পার্শ্ববর্তী থানা কসবা থেকে নৌকাযোগে এসে গ্রামবাসীদের উপর অতর্কিত আক্রমন চালাত। তাছাড়া মুরাদনগরের আন্দিকোট ইউনিয়নের গাঙ্গেরকোট গ্রামের রনজিত সাহার বাড়িতে নভেম্বরের প্রথম দিকে পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা এখানে অবস্থান করে। আত্মসমর্পনের ব্যাপারটি নিশ্চিত হলে কুটি হয়ে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে আক্রমন করে। তখন ২০-২৫ জনের প্লাটুনটির বেশ কজন মারা যায়। অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ৩১ অক্টোবর চাপিতলা ইউনিয়নের চাপিতলা অজিফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। মুরাদনগর সদরে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প ছিল মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

পঁচিশে মার্চ কালরাতে গণহত্যার পর পরই মুরাদনগরের জনসাধারণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা মুরাদনগরের বিভিন্ন গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করে। কাশিমপুরের কুদ্দুস কমান্ডারের বাড়িতে বড় ধরনের ক্যাম্প ছিল। চাপিতলা গ্রামে ক্যাম্প ছিল রহমান ডাক্তারের বাড়ি, জহিরুদ্দিন ফকিরের বাড়ি, আলীমুদ্দীনের বাড়ি ও তছন আলী ভূইয়ার বাড়ি। এছাড়া খামারগাঁও মাদ্রাসা, দিগলদী গ্রামের দোতলা বাড়ি, রামচন্দ্রপুর সরকার বাড়ি, কৃষ্ণপুর খোকন ভুইয়ার বাড়ি, বৃন্দারামপুর বড়বাড়ি, ফোগরারচর হিন্দু বাড়ি, জাহাপুর জমিদার বাড়ি, চৌহদ্দী বেপারী বাড়ি, কাজিয়াতল প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাহাড়পুর মাদ্রাসা, পাঁচপুকুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দরানীপাড়া বারেক মাস্টারের বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে দখলদার বাহিনী মুরাদনগরে হিন্দু-মুসলমন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষকে হত্যা করে। তারা জাঙ্গাল গ্রামের অজ্ঞাতনামা এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। গাঙ্গেরকোট গ্রামের পাক বাহিনীর ক্যাম্পে অবস্থানকারী সেনারা আন্দিকোট ও ইসলামপুর থেকে ধরে আনা লোকদের বুড়ি নদীর তীরে এনে হত্যা করে। তারা সবাই ছিল সাধারণ গ্রামবাসী। পাকিস্তানিদের বর্বর হত্যাকান্ডের শিকারদের মধ্যে মনমোহন দেবনাথ, পিতা দারীকা নাথ, মতিলাল দেবনাথ ও ইন্দ্রজিত সাহার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০ অক্টোবর চাপিতলা থেকে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে ময়নামতি ক্যন্টেমেন্টে হত্যা করা হয়। তাদের কবর সেখানে রয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন শাহজাহান, বিল্লাল হোসেন ও রাজা মিয়া। কৈজুরি গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা একজন গ্রামবাসীকে হত্যা করে।

ঢাকায় পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর মুরাদনগর ডিআর হাই স্কুলের ছাত্র রফিক বিজয়োল্লাস করতে করার সময় (নবীপুরের) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। দরানীপাড়া গ্রামের কয়েকজন যুবক ভোরে ফযরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় তাদেরকে ধরে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে মেরে ফেলে বাচ্চু মিঞা, ওহাব আলী ও সামশুল হক সহ ৭ জনকে। তাদেরকে তাদের পারিবারিক গোরস্থানে কবর দেয়া হয়। পান্তি বাজারে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড চার্জ করলে পাকিস্তানি সেনারা বাজারে তল্লাশী চালিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে যায় ইলিয়টগঞ্জ। সেখানে তাকে হত্যা করা হয়। উপজেলায় সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ড ঘটে চাপিতলা ও রামচন্দ্রপুরের নিকটবর্তী বাখরাবাদ গ্রামে। তবে তাদেরকে একত্রে কবর দেয়া হয়নি। অধিকাংশ শহীদদেরকে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ন অবদানের জন্য মুরাদনগরের ৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ‘বীর বিক্রম’ ও ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। তারা হলেন- আব্দুল মালেক বীর বিক্রম (কড়ইবাড়ী), বীর বিক্রম আব্দুল মান্নান বীর বিক্রম (সিদ্বেশ্বরী), আবু মুসলিম বীর প্রতীক (জারেরা), মোহাম্মদ আবু তাহের বীর প্রতীক (পীর কাশেমপুর) ও মনসুর আলী বীর প্রতীক (গুঞ্জর)। এছাড়া অন্তত ৬৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেছেন। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের একটি তালিকায় সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদস্য মুরাদনগরের ৪০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন।

মুরাদনগরে রাজাকার, আলবদর, আল শামস তথা স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রকাশ্য তৎপরতা কম ছিল। তবে পর্দার আড়ালে তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে তথ্য দিত। মুক্তিযুদ্ধকালে ১৭ আগস্ট কুমিল্লার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (রাজস্ব) রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যাপারে সদর উত্তর মহকুমা হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে মুরাদনগরের বিভিন্ন স্থানে শান্তি কমিটির লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। রাজাকারগন তার সাথে সাক্ষাৎ করে সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মুরাদনগরের উল্লেখযোগ্য রাজাকারদের মধ্যে রয়েছেন আ. জব্বার (ইউসুফনগর) এবং মরহুম মাজেদুল ইসলাম ভূইয়া, মরহুম মর্তুজ আলী ভূইয়া ও মরহুম আব্দুল হালিম (চাপিতলা)। (তথ্যসূত্র : সাপ্তাহিক ‘আমোদ’, কুমিল্লা; ২৬ আগস্ট ১৯৭১)

যুদ্ধের শুরুতেই উপজেলা পর্যায়ে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। তারা সার্বক্ষণিকভাবে পাকিস্তান সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতো। পর্যায়ক্রমে তারা মুরাদনগরের প্রতিটি ইউনিয়নে তাদের কমিটি গঠন করে। যুদ্ধের প্রথম দিকে পাকিস্তানি সেনারা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে কুমিল্লা-সিলেট সড়কে মুরাদনগরের বিভিন্ন রাস্তায় টহল দিত। ক্রমেই তারা ঘন ঘন এলাকায় আসতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যপারে তথ্য দেয়া ছাড়াও তাদের সন্ধানে বের হতো। তাদেরকে না পেলে তাদের পরিবারের উপর নির্যাতন চালাতো। কোম্পানীগঞ্জে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন ছাড়াও উপজেলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন স্থানে পাকিস্তানিরা মিলিশিয়া ক্যাম্প স্থাপন করে। তাদের মদতে রাজাকাররা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ট্রেনিং করতে যাওয়া তরুণদের পরিবারের লোকদের উপর নির্যাতন চালাতো।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রবাসীর বাড়ি ঘরে হামলা, নারীসহ আহত ৩

৫০ বছরেও পালন হয়নি মুরাদনগর হানাদার মুক্ত দিবস

আপডেট সময় ০৩:০৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

॥সাদেকুর রহমান॥ লেখক : সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।

জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঐকমত্যে পৌছেছেন যে, ১৯৭১ সালে তৎকালীন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানা হানাদার মুক্ত হয় ৬ ডিসেম্বর। সে হিসেবে আজ সোমবার মুরাদনগর হানাদার মুক্ত দিবস। কিন্তু গত ৫০ বছরে পালন করা হয়নি গৌরবের এ দিনটি। এমনকি এবার মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরেও পাকিস্তানি দখলদারদের হটিয়ে স্থানীয় কতিপয় বীর মুক্তিযোদ্ধার বাংলাদেশের পতাকা উড়ানোর দিনটি পালনে কোন উদ্যোগ-আয়োজন নেই। পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে মুরাদনগরবাসীর বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মারক দিবস নীরবে অতিবাহিত হয় বলে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে!

দীর্ঘ পাঁচ দশকে মুরাদনগরের মুক্ত দিবস নিয়েও বিভ্রান্তি বা বিতর্ক ছিল। এ বিভ্রান্তি বা বিতর্ক অবসানে কেউ এগিয়ে এসেছেন- এমন তথ্য জানা যায়নি। বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী মুরাদনগরেও তা পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে শুধুই মুরাদনগরের মহান বিজয় দিবস তথা শত্রুমুক্ত দিবস পালনের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ভেবেছেন বলে মনে হচ্ছে না। যেন ‘কূম্ভকর্ণের ঘুম’ ঘুমাচ্ছেন তারা। তবে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুরাদনগর মুক্ত দিবসকে দেশের অন্যান্য জনপদের মতো উদযাপন করতে চান, নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সার্বিক ও স্থানীয় ইতিহাস জানাতে চান সেটা আলাপচারিতায় বোঝা গেল।

মুক্তিযুদ্ধে মুরাদনগর কিংবা মুরাদনগরের মানুষের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা ও অবদান নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় ইতিহাস বা কুমিল্লা জেলার বর্ণনার সাথে মুরাদনগরের প্রসঙ্গ বিক্ষিপ্তভাবে এলেও তা খন্ডিত বা প্রকৃত ইতিহাসের অংশবিশেষ মাত্র। জাতীয় তথ্য বাতায়ণেও এ সংক্রান্ত একটি শব্দও পাওয়া যায় না। মুরাদনগর উপজেলার সরকারি ওয়েবসাইটে এ নিয়ে কোন শিরোনাম বা উপশিরোনামও নেই। দায়বোধ থেকে আমি বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালে সশরীরের রণাঙ্গনে ছিলেন এমন কয়েকজন জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলি।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুরাদনগর থানার সহকারী কমান্ডার গিয়াস উদ্দিন মাহমুদের সাথে একাধিকবার আলাপ হয়। তিনি মনে করেন, মুরাদনগর হানাদার মুক্ত দিবস পালন করা সময়ের দাবি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ। কিন্তু সে কাজটি করবে কে? চাপা ক্ষোভ ও কষ্ট কিছুটা উগড়ে বললেন, “উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এ কাজে এগিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু তারা আসেন না। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা তো চাইলেই একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারি না। একটা আয়োজনের সাথে আর্থিক সংশ্লেষ আছে। সে ব্যয়টা কে করবে? এমপি সাহেব (বর্তমানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন) এদিকে নজর দিলে অবশ্যই তা হতে পারে। অনেক এলাকায়ই তো আঞ্চলিকভাবে মুক্ত দিবস পালন করা হয়। আপনি (এ গবেষক) বিষয়টা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, খুব ভালো লাগছে। আপনার চেষ্টায় হয়তো এবার না হোক, আগামীতে এদিনটি পালন করতে পারবো।”

এত বছরেও মুরাদনগর মুক্ত দিবসের তারিখ নিয়ে ঐকমত্যে পৌছানো যায়নি কেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে বর্তমান মুরাদনগর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “এ বিষয়ে কারো মনোযোগ নেই বলেই এমন অবস্থা। আমরা যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছি, তারা আলোচনা করে অবশ্যই একটা ঐকমত্যে পৌছতে পারি। আমি উত্তর মুরাদনগরে যুদ্ধ করেছি। পরাজিত পাকিস্তানিরা মুরাদনগর থেকে কোম্পানীগঞ্জ দিয়ে পলায়ন করলে ৬ ডিসেম্বর আমি আমার সতীর্থ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়াই। যুদ্ধকালে আমার কাছে নবীপুর এলাকায় অবস্থানরত ৩৪ জন খানসেনা ও দালাল আত্মসমর্পণ করেন।” আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “আমি উত্তর মুরাদনগরের কথা বললাম। দক্ষিণ মুরাদনগর এলাকায় কবে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়েছে তা বলতে পারবেন পীরকাশিমপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আর্মি তাহের সহ ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা।”

যোগাযোগ করলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আর্মি তাহেরের সাথে। তিনি মুরাদনগরের আলোচিত চাপিতলা সম্মুখ যুদ্ধ সম্পর্কে কিছু তথ্য দিলেন। তাঁর তথ্য অনুযায়ী, “১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর (মোতাবেক ৩ কার্তিক, ১০ রমযান) ভোরে পাকিস্তানিরা বৃষ্টিপুর, গাজীপুর থেকে চাপিতলা ও খামারগ্রাম এলাকায় হামলা চালায়। এতে স্থানীয় তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন এবং ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পাকিস্তানি সেনারা এলাকা ছাড়ে।” একই সাথে তিনি মুরাদনগর মুক্ত দিবস ও স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বাখরনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস মুহুরীর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

সেই পরামর্শ মতো একাধিকবারের চেষ্টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস মুহুরীর সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই। তিনি জানান, “সশস্ত্র পাকিস্তানিদের সাথে মুক্তিকামী স্থানীয়দের অসম লড়াই পুষ্কুরনীপাড়ের রমিজউদ্দিন, কদমতলীর বাচ্চু মিয়া এবং বলিঘরের আবুল বাশার শহীদ হন। নিজ বাড়ি বাখরনগর থেকে নানা কৌশলে টনকি গিয়ে হানিফ চেয়ারম্যানের বাড়ির পশ্চিমপাশে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেই। এক পর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তানিরা পিছু হটে। এ সময় পাকিস্তানিদের এলোপাতাড়ি গুলিতে চাপিতলা গ্রামের জনৈক কাশেম মারা যান। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। কিন্তু এখন কাশেমের ছেলেরাও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে নানা সুবিধা ভোগ করছে।”

প্রবীণ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস মুহুরীর কাছে জানার বিষয় ছিল, মুরাদনগর কবে হানাদার মুক্ত হয়? তিনি বললেন, “বয়স হইছে। এখন তো অনেক কিছুই মনে নাই। কুমিল্লা মুক্ত হইছে ৮ ডিসেম্বর। আমাদেরটা (মুরাদনগরের) ঠিক জানি না। তবে এই সময়ই হবে। পাশের থানা দেবীদ্বার দখলদার মুক্ত হইছে ৪ ডিসেম্বর।” বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন মাহমুদের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পতাকা উড়ানোর প্রসঙ্গটি তাঁকে অবহিত করলে বাখরনগর গ্রামের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় কামরুল হাসান ভূঁইয়া থানা কমান্ডার ছিলেন আর সহকারী কমান্ডার ছিলেন গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ। কামরুল হাসান মারা গেছেন। গিয়াস উদ্দিন যেহেতু ৬ ডিসেম্বর পতাকা উড়িয়েছেন সেদিনটাকেই মুরাদনগরের হানাদার মুক্ত দিবস ধরা যায়। দক্ষিণ মুরাদনগর এলাকায় পতাকা উড়ানোর কোন ঘটনা আমার মনে পড়ছে না।”

অবশ্য মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও গণপরিষদের সাবেক সদস্য হাজি আবুল হাশেম তার জীবদ্দশায় একটি জাতীয় দৈনিকের সাথে আলাপকালে জানিয়েছিলেন, “১২ ডিসেম্বর মুরাদনগরে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী মুক্ত হবার খবর পেয়ে ভারতের আগরতলা থেকে সাড়ে ৪শ’ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হাইস্কুলে প্রবেশ করে উড়িয়ে দেয়া হয় স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা। তখন মুরাদনগরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন কামরুল হাসান ও গিয়াস উদ্দিন।” (তথ্যসূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক; ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭)

কিন্তু হাজি আবুল হাশেম মুরাদনগর মুক্ত দিবস পালনে নিজেও উদ্যোগী হননি কিংবা প্রশাসনের সাথেও এ নিয়ে কথা বলেছেন বলে কারো জানা নেই। অন্যদিকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধারাও এ তারিখের সাথে এক মত নন।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কুমিল্লা ৯ (মুরাদনগর) আসনে বিজয়ী হন আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী হাজি আবুল হাশেম। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৫। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আব্দুল ওদুদ পান ৩ হাজার ৬১৪ ভোট, মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) মনোনীত প্রার্থী হারুন আর রশীদ পান ৪ হাজার ৭১৫ ভোট এবং ন্যাপ (ওয়ালী) প্রার্থী আব্দুল করিম সর্বনি¤œ ১ হাজার ৪৬৬ ভোট পান। হাজি আবুল হাশেম ভাষা সংগ্রামী হিসেবেও পরিচিত। তিনি এলাকায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল রবিবার অপরাহ্নে কথা হয় মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশের সঙ্গে। তিনি বললেন, “পার্শ্ববর্তী দেবীদ্বারের মুক্ত দিবস ছিল ৪ ডিসেম্বর। এটা পত্রিকায় দেখার পর মনে হচ্ছিল মুরাদনগরে কেন মুক্ত দিবস নেই বা পালন করা হয় না। আপনার (এ গবেষক) কাছ থেকে ৬ ডিসেম্বর মুরাদনগর মুক্ত দিবস জানার পর আমি আরও তাগিদ বোধ করছি। মুক্তিযোদ্ধাদের ডেকে সীমিত পরিসরে হলেও কিছু একটা আয়োজনের চেষ্টা করবো।”

ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর কুমিল্লা জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা মুরাদনগর। এটি কুমিল্লা জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ উপজেলার আয়তন ৩৪০.৯৩ বর্গ কিলোমিটার। ২২টি ইউনিয়নের ৩০৫টি গ্রাম নিয়ে গঠিত দেশের অন্যতম বৃহৎ এ উপজেলা। এর উত্তরে নবীনগর; দক্ষিণে চান্দিনা ও দেবীদ্ধার; পূর্বে দেবীদ্ধার, ব্রাহ্মনপাড়া ও কসবা এবং পশ্চিমে দাউদকান্দি, হোমনা ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা। বাংলাদেশের পুরনো থানাগুলোর মধ্যে মুরাদনগর অন্যতম। ১৮৫৮ সালে এ থানা সৃষ্টি হয়। মুক্তিযুদ্ধে এ থানার রয়েছে গৌরবজনক ভূমিকা। যুদ্ধকালীন সময়ে কুমিল্লা ২ নং সেক্টর ‘কে ফোর্স (সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে ফোর্সের নামকরণ)’ এর আওতাধীন ছিল।

পাঠকের কৌতূহল নিবৃত্তের প্রয়াস হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকালে মুরাদনগরে সংঘটিত ঘটনাবলীর কিছুটা তুলে ধরা হলো। ১৯৭১ এর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পাকিস্তানি বাহিনী প্রথম ক্যাম্প স্থাপন করে। কোম্পানীগঞ্জ সহ গোমতী নদীর দক্ষিণ তীরে সরকারি খাদ্য গুদামে। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। গোমতী নদীতে কোম্পানীগঞ্জ ব্রিজের উপর মুক্তিযোদ্ধাদের দাঁড় করিয়ে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হতো। এ লাশ ভাসতে ভাসতে চলে যেতো মেঘনা নদীতে। এছাড়া গোমতী নদী দিয়ে ময়নামতি ক্যান্টেম্যান্ট থেকে খানসেনারা ছোট ছোট লঞ্চযোগে এসে মুরাদনগরের বিভিন্ন গ্রামে আক্রমন করতো। পানিবেষ্টিত মুরাদনগরের অন্যান্য নদী আর্চি, নৈলা ও বুড়ি যুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার সাথে জড়িত। ১৮ আগষ্ট পাকিস্তানি সেনাদের তিনটি দল মুরাদনগর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে হোমনা যাবার পথে মুক্তিযোদ্ধারা দুটি নৌকায় অ্যামবুশ করলে নৌকা দুটি ডুবে যায়। এতে একজন ক্যাপ্টেনসহ ২৯ জন শত্রুসেনা ও ৫ জন রাজাকার নিহত হয়।

এছাড়া মুরাদগরের উত্তরাংশে অবস্থিত ‘অদের খাল’ দিয়ে পার্শ্ববর্তী থানা কসবা থেকে নৌকাযোগে এসে গ্রামবাসীদের উপর অতর্কিত আক্রমন চালাত। তাছাড়া মুরাদনগরের আন্দিকোট ইউনিয়নের গাঙ্গেরকোট গ্রামের রনজিত সাহার বাড়িতে নভেম্বরের প্রথম দিকে পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা এখানে অবস্থান করে। আত্মসমর্পনের ব্যাপারটি নিশ্চিত হলে কুটি হয়ে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে আক্রমন করে। তখন ২০-২৫ জনের প্লাটুনটির বেশ কজন মারা যায়। অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ৩১ অক্টোবর চাপিতলা ইউনিয়নের চাপিতলা অজিফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। মুরাদনগর সদরে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প ছিল মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

পঁচিশে মার্চ কালরাতে গণহত্যার পর পরই মুরাদনগরের জনসাধারণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা মুরাদনগরের বিভিন্ন গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করে। কাশিমপুরের কুদ্দুস কমান্ডারের বাড়িতে বড় ধরনের ক্যাম্প ছিল। চাপিতলা গ্রামে ক্যাম্প ছিল রহমান ডাক্তারের বাড়ি, জহিরুদ্দিন ফকিরের বাড়ি, আলীমুদ্দীনের বাড়ি ও তছন আলী ভূইয়ার বাড়ি। এছাড়া খামারগাঁও মাদ্রাসা, দিগলদী গ্রামের দোতলা বাড়ি, রামচন্দ্রপুর সরকার বাড়ি, কৃষ্ণপুর খোকন ভুইয়ার বাড়ি, বৃন্দারামপুর বড়বাড়ি, ফোগরারচর হিন্দু বাড়ি, জাহাপুর জমিদার বাড়ি, চৌহদ্দী বেপারী বাড়ি, কাজিয়াতল প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাহাড়পুর মাদ্রাসা, পাঁচপুকুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দরানীপাড়া বারেক মাস্টারের বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে দখলদার বাহিনী মুরাদনগরে হিন্দু-মুসলমন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষকে হত্যা করে। তারা জাঙ্গাল গ্রামের অজ্ঞাতনামা এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। গাঙ্গেরকোট গ্রামের পাক বাহিনীর ক্যাম্পে অবস্থানকারী সেনারা আন্দিকোট ও ইসলামপুর থেকে ধরে আনা লোকদের বুড়ি নদীর তীরে এনে হত্যা করে। তারা সবাই ছিল সাধারণ গ্রামবাসী। পাকিস্তানিদের বর্বর হত্যাকান্ডের শিকারদের মধ্যে মনমোহন দেবনাথ, পিতা দারীকা নাথ, মতিলাল দেবনাথ ও ইন্দ্রজিত সাহার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০ অক্টোবর চাপিতলা থেকে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে ময়নামতি ক্যন্টেমেন্টে হত্যা করা হয়। তাদের কবর সেখানে রয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন শাহজাহান, বিল্লাল হোসেন ও রাজা মিয়া। কৈজুরি গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা একজন গ্রামবাসীকে হত্যা করে।

ঢাকায় পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর মুরাদনগর ডিআর হাই স্কুলের ছাত্র রফিক বিজয়োল্লাস করতে করার সময় (নবীপুরের) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। দরানীপাড়া গ্রামের কয়েকজন যুবক ভোরে ফযরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় তাদেরকে ধরে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে মেরে ফেলে বাচ্চু মিঞা, ওহাব আলী ও সামশুল হক সহ ৭ জনকে। তাদেরকে তাদের পারিবারিক গোরস্থানে কবর দেয়া হয়। পান্তি বাজারে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড চার্জ করলে পাকিস্তানি সেনারা বাজারে তল্লাশী চালিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে যায় ইলিয়টগঞ্জ। সেখানে তাকে হত্যা করা হয়। উপজেলায় সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ড ঘটে চাপিতলা ও রামচন্দ্রপুরের নিকটবর্তী বাখরাবাদ গ্রামে। তবে তাদেরকে একত্রে কবর দেয়া হয়নি। অধিকাংশ শহীদদেরকে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ন অবদানের জন্য মুরাদনগরের ৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ‘বীর বিক্রম’ ও ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। তারা হলেন- আব্দুল মালেক বীর বিক্রম (কড়ইবাড়ী), বীর বিক্রম আব্দুল মান্নান বীর বিক্রম (সিদ্বেশ্বরী), আবু মুসলিম বীর প্রতীক (জারেরা), মোহাম্মদ আবু তাহের বীর প্রতীক (পীর কাশেমপুর) ও মনসুর আলী বীর প্রতীক (গুঞ্জর)। এছাড়া অন্তত ৬৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেছেন। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের একটি তালিকায় সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদস্য মুরাদনগরের ৪০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন।

মুরাদনগরে রাজাকার, আলবদর, আল শামস তথা স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রকাশ্য তৎপরতা কম ছিল। তবে পর্দার আড়ালে তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে তথ্য দিত। মুক্তিযুদ্ধকালে ১৭ আগস্ট কুমিল্লার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (রাজস্ব) রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যাপারে সদর উত্তর মহকুমা হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে মুরাদনগরের বিভিন্ন স্থানে শান্তি কমিটির লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। রাজাকারগন তার সাথে সাক্ষাৎ করে সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মুরাদনগরের উল্লেখযোগ্য রাজাকারদের মধ্যে রয়েছেন আ. জব্বার (ইউসুফনগর) এবং মরহুম মাজেদুল ইসলাম ভূইয়া, মরহুম মর্তুজ আলী ভূইয়া ও মরহুম আব্দুল হালিম (চাপিতলা)। (তথ্যসূত্র : সাপ্তাহিক ‘আমোদ’, কুমিল্লা; ২৬ আগস্ট ১৯৭১)

যুদ্ধের শুরুতেই উপজেলা পর্যায়ে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। তারা সার্বক্ষণিকভাবে পাকিস্তান সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতো। পর্যায়ক্রমে তারা মুরাদনগরের প্রতিটি ইউনিয়নে তাদের কমিটি গঠন করে। যুদ্ধের প্রথম দিকে পাকিস্তানি সেনারা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে কুমিল্লা-সিলেট সড়কে মুরাদনগরের বিভিন্ন রাস্তায় টহল দিত। ক্রমেই তারা ঘন ঘন এলাকায় আসতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যপারে তথ্য দেয়া ছাড়াও তাদের সন্ধানে বের হতো। তাদেরকে না পেলে তাদের পরিবারের উপর নির্যাতন চালাতো। কোম্পানীগঞ্জে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন ছাড়াও উপজেলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন স্থানে পাকিস্তানিরা মিলিশিয়া ক্যাম্প স্থাপন করে। তাদের মদতে রাজাকাররা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ট্রেনিং করতে যাওয়া তরুণদের পরিবারের লোকদের উপর নির্যাতন চালাতো।