মনির খাঁনঃ
গত দুইদিন টানা বৃষ্টিতে কুমিল্লার বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে প্রধান ফসল ধান, সরিষা, আলু ক্ষেতসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি ক্ষেত। এছাড়া আগাম আলু ও সরিষা ক্ষেতগুলোও তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার হাজার হাজার কৃষক। ফসল বাঁচাতে অতিরিক্ত মজুরি খরচ করেও রক্ষা হচ্ছে না তাদের।
এছাড়া জেলার দাউদকান্দি ও বরুড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার আগাম আলু ও সরিষা ক্ষেতগুলোও টানা বৃষ্টির কারণে এখন পানিতে তলিয়ে গেছে।
বরুড়া উপজেলার কৃষক তিতাস জানান, এক বিঘা জমিতে আমণের ৩০মণ হারে ফলন হয়। সেখানে বৃষ্টির কারণে পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৮ থেকে ১০মণের মতো ধান ঝরে যাবে। আবার বিচালিও পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
একই উপজেলার রামমোহনপুর এলাকায় আলু চাষী সালাম মিয়া জানান, হঠাৎ বৃষ্টিতে আমার তিনবিঘা আলু পানিতে ডুবে গেছে। প্রতি বিঘা জমি করতে খরচ হতো ২ হাজার ৫০০ টাকা। সেখানে এখন অতিরিক্ত শ্রমিক লাগবে তিন-চার হাজার টাকা। আবার সময়মতো শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কৃষক রহমত মিয়া জানান, দুই দিনের বৃষ্টিতে বিচালীর ক্ষতি হবে। এই ধান থেকে পরবর্তীতে বীজও করা সম্ভব হবে না। আবার ধান কালো হয়ে যাবে এবং ভাতও খাওয়া যাবে না। এ অবস্থায় সরকার যদি কোনো অনুদান দেয়, তাহলে হয়তো কিছু উপকার হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ইউনিয়ন কৃষি উপ-সহকারী মাঠে আসেননি। আবার কোনো পরামর্শও দেননি।
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা ইসমাইল ভূঁইয়া বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদের’ কারণে নিম্নচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে, এর প্রভাবেই বৃষ্টি হচ্ছে। কুমিল্লা গত ২৪ ঘণ্টায় রবিবার (০৬ডিসেম্বর) দুপুর থেকে সোমবার (০৬ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এবং চলমান নিম্নচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে কারণে বুধবার (০৮ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত থাকতে পারে।
কুমিল্লা কৃষি অফিস জানায়, জেলায় এ বছর আমন ধান রোপনের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ১০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩০৭ হেক্টর জমিতে। জেলায় আমন জাতের (হাইব্রিড ও উফশী) জাতের ১ লক্ষ ৯ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে চাষবাদ হয়েছে। স্থানীয় জাতের ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর ধান চাষ করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় এ বছর আলু রোপনের লক্ষ্য ছিল ১৩,৪০০। আবাদ হয়েছে ৩৪২৬ হেক্টর, সরিষা রোপনের লক্ষ্য ছিলো ১০,০০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৫.১৫৫ হেক্টর জমিতে।কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, এসময় বৃষ্টি কৃষি জমিগুলো চরম ক্ষতি সাধন হয়েছে। বিশেষ করে আগাম ফসলগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখনো ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।