আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
এবার রাশিয়ার সঙ্গে ২০ বছরের অর্থনৈতিক ও সামরিক চুক্তির রোডম্যাপ প্রস্তুত করছে ইরান। শিগগিরই এ চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এর আগে চলতি বছরের মার্চে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ২৫ বছরের একটি চুক্তি করে ইরান। এর ফলে চীন ইরানে তাদের সেনা মোতায়েন করতে পারবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার জন্য একটি চুক্তির রোডম্যাপ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অবৈধ নিষেধাজ্ঞা বানচাল করার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিবেশী, আঞ্চলিক ও বন্ধুসুলভ দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার অংশ হিসেবে তেহরান এই সহযোগিতা চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে।
গতকাল (শনিবার) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদে একথা বলেছেন। তিনি প্রতিবেশী আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন।
গত মাসে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইবরাহিম রায়িসি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছিলেন যে, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার জন্য পূর্ণাঙ্গ চুক্তি চূড়ান্ত করতে তেহরান প্রস্তুত রয়েছে। জবাবে পরমাণু শক্তিধর ও জাতিসংঘে ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তেহরানের সহযোগিতা প্রস্তাবের রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা এ চুক্তি চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন করতে আমরা প্রস্তুত।”
সম্ভাব্য চুক্তি সম্পর্কে খাতিবজাদে বলেন, “চীনের সঙ্গে যেমন ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করা হয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও তেমনই চুক্তি করার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমতি নিয়ে আমরা আলোচনা শুরু করব।”
চুক্তিতে সই করছেন ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ (ডানে) এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই (বামে)।
২০১৮ সালে মার্কিন সরকার পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের অর্থনীতি ধ্বংস করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় এবং কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করার জন্য ইরানের সর্বোচ্চ নেতা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। এর আওতায় ইরান পূর্ব-মুখী অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করেছে এবং প্রতিবেশী ও এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত মার্চে চীনের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ইরান।
চুক্তির রোডম্যাপ অনুযায়ী ইরানে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ আগামী ২৫ বছরে কমপক্ষে চার হাজার ৪০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ হতে পারে। সেই সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তিতে সামরিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ‘যৌথ প্রশিক্ষণ, মহড়া, গবেষণা, যুদ্ধাস্ত্র তৈরি এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের’ কথা রয়েছে। এছাড়াও, চুক্তিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আগামী এক দশকের মধ্যে দশগুণ বাড়িয়ে ৬০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ।
নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ইরানি ক্ষেপণাস্ত।
পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তেহরান সফরকালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রথম এ চুক্তির প্রস্তাব দেন। ১৯৭১ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন রয়েছে তেহরানের।
গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে বিশ্লেষকরা বলে আসছেন, পূর্ব এশিয়া, চীন ও ইরানের এ চুক্তি মধ্যপ্রাচ্য তথা এশিয়ার বিরাট একটি অংশের ভূ-রাজনৈতিক চালচিত্র বদলে দেবে।