মো. আবু রায়হান চৌধুরী, হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার হোমনায় দুর্দশা আর ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছেন এলাকার শত শত মানুষ। এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসা একটি মাত্র বাশের সাকোঁ। চলাচল করতে গিয়ে আহতও হচ্ছেন অনেকে। এটাই যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তারপরও থেমে নেই তাদের চলাচল। বর্ষাকাল এলে শেষ ভরসা নৌকা,পানি কমলে এলাকাবাসীর উদ্যোগে নির্মিত হয় বাশের সাকোঁ। বছর পেরিয়ে নতুন বছর আসলেও দুর্দশা আর ভোগান্তি পিছু ছাড়েনি তাদের। বর্ষা এলে মারাত্বক ঝুঁকিতে পড়েন ভিটি ভাষানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্বারপ্রান্ত হলেও কোনো প্রতিকার পাননি এলাকাবাসী। দীর্ঘকাল সাকোঁটি হোমনা উপজেলার ভাষানিয়া ইউনিয়নের কোরের কান্দি হতে ভিটি ভাষানিয়া এলাকায় অবস্থিত।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কোরের কান্দি হতে ভিটি ভাষানিয়া এলাকা ভেদ করে প্রবাহিত খরস্রোতা নদী কাজির দোয়া। সকাল থেকেই দুই প্রান্তের মানুষ চলাচল করেন বাশেঁর তৈরি সাকোঁ দিয়ে। এক পাড়ে ভিটি ভাষানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, অপরপ্রান্তে কোরের কান্দি গ্রাম ও জামে মসজিদ। প্রতিদিন খরস্রোতা নদী পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয় কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের।
এছাড়াও স্থানীয় হোমনা সরকারি ডিগ্রী কলেজ, কাশিপুর হাসেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিপুর বাজার মুক্তিযোদ্ধা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন এই পথ দিয়ে। নদী পারাপারে মারাত্বক ঝুঁকি, অপরদিকে রাস্তার নাজুক অবস্থা। সব মিলিয়ে যেমনি রয়েছে ঝুঁকি, তেমনি হচ্ছে কষ্টের কারন। এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকায় প্রতিদিন সকালে বের হয়ে আবার গভীর রাত পর্যন্ত চলাচল করেন। এলাকাবাসী এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে চান বলে জানান।
এব্যাপারে উপজেলার কোরের কান্দি গ্রামের মুরব্বি মনির হোসেন ভোরের পাতা কে জানান, প্রতিবছর বর্ষকালে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেলে বাশেঁর তৈরি সাকোঁটি তছনছ হয়ে যায়। বছরের বাংলার বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগ ও ব্যয়ে তৈরি করতে হয় সাকোঁটি। নদীর এপার-ওপার দীর্ঘ হওয়ায় সাকোঁ তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ১৫/২০ হাজার টাকা। দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর থেকে এভাবে এ এলাকাবাসী যাতায়াত করছেন।
ফারুক মিয়া ও দুলাল মিয়া জানান, বর্ষাকালে বাড়ি থেকে দুই সেট কাপড় নিয়ে বের হতে হয়। কাঁদা আর নদী মাড়িয়ে ময়লাযুক্ত কাপড় পরিবর্তন করে আমাদের যেতে হয় গন্তব্য স্থানে। বিশেষ করে শিশু ও মহিলাদের এ পথে যাতায়াত অনেক বেশি কষ্টদায়ক। এছাড়া এ পাড়ের কোন মানুষ অসুস্থ হলে সব থেকে বেশী কষ্ট পোহাতে হয় এলাকাবাসীর। সরকারিভাবে কাজির দোয়া নদীর উপর একটি ব্রীজ ও রাস্তা নির্মাণ করে দিলে এই এলাকার জীবনমান বৃদ্ধি ও কষ্টের অবসান ঘটবে।
ভিটি ভাষানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, কোরের কান্দি গ্রাম হতে কাজির দোয়া নদীর উপর নির্মিত সাকোঁটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০/৬০ জন শিশু বিদ্যালয়ে আসে। বর্ষাকালে বিদ্যালয়ের আশপাশ ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেলে অভিভাবকরা নৌকাযোগে শিশুদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। শিক্ষার্থীরা প্রায় সময়ই বিদ্যালয়ে আসতে পারে না।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য বজলুর রহমান জানান, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি একটি ব্রীজ ও রাস্তার। বাশেঁর সাকোঁর স্থানে সরকারি উদ্যোগে একটি ব্রীজ ও রাস্তা নির্মাণ করা হলে এলাকাবাসীর কষ্ট লাঘব হবে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।
এবিষয়ে ভাষানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাদেক সরকার বলেন, আমি নিজে সরেজমিনে গিয়ে সাকোঁটি পরিদর্শন করে এসেছি। প্রকৃত পক্ষেই এই এলাকার মানুষ তুলনামূলক ভাবে অনেক দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। এখানে একটি ব্রীজ ও রাস্তা একান্তই দরকার। আমি কুমিল্লা-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাময়ী নেত্রি সেলিমা আহমাদ মেরি, সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ও বাংলাদেশ সরকার এর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সু-দৃষ্টি কামনা করছি। এ এলাকায় ব্রীজ ও রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে জনগণের দীর্ঘ্য দিনের দুঃখ,কষ্ট যেন দূর হয় সেদিকে একটু দৃষ্টি দেওয়ার জন্য।