ঢাকা ১২:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট প্রকট, ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান

মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাউল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোন সহকারি শিক্ষক। স্কুলটিতে রয়েছে ১৬৫ শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক নিজেই পাঠদানের পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজ চালাচ্ছেন। এত করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তেমনি ভাবে কৈজুরী, কদমতলি, মাধবপুর ও কাজিয়াতল উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো চলছে ২ জন করে সহকারি শিক্ষক দিয়ে। তাদের মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়ে প্রায় সময় স্কুলের বাহিরে থাকতে হচ্ছে এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে এক জন সহকারি শিক্ষক দিয়ে।

কেবল ওই বিদ্যালয় গুলোতেই নয়, উপজেলার ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। এসব স্কুল গুলোতে ৫৩টি স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে ১০৭টি সহকারি শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে। বর্তমান সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও মোট জনসংখ্যার শতভাগ প্রাইমারী শিক্ষা নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে কাজ করলেও সব দিকে পিছিয়ে রয়েছে এ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো। পাঠদানের পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজে বেশি সময় দিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। একটি ক্লাসে শিক্ষক গেলে অন্য ক্লাসগুলো থাকে ফাঁকা। এতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম চরম ভাবে বিঘিœত হচ্ছে। সন্তানদের স্কুলে পাঠালেও ক্লাস না হওয়ায় সামনে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে প্রাইমারী স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে শিক্ষকদের পদোন্নতি দেয়ার কাজ বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের শতকরা ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। বাকি ৬৫ শতাংশ পূরণ করা হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে। এই উপজেলার উপজেলায় ২০৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ খালি থাকায় সহকারী শিক্ষকেরা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষকসংকটে থাকা বিদ্যালয়গুলোর কোনো শিক্ষক (নারী-পুরুষ) যখন অসুস্থ হন কিংবা মাতৃত্বকালীন বা অন্য কোনো কারণে ছুটিতে থাকেন তখন দায়িত্বরতদের পাঠদানে হিমশিম খেতে হয়। এ অবস্থায় একজন শিক্ষককে একটানা চার-পাঁচটি ক্লাসে পাঠদান করতে হয়, অথবা কখনো কোনো একটি শ্রেণির পাঠদান বন্ধ থাকে। গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট রয়েছে।

উপজেলার সবচেয়ে বেশি শিক্ষক সংকটে থাকা স্কুল গুলো হলো, কৈজুরী, কদমতলি, মাধবপুর , কাজিয়াতল উত্তর, পেন্নই, ইসলামপুর, শাগদা, হায়দ্রাবাদ, শোনারামপুর, আন্দিকোট, চুলুড়িয়া, নওগাঁ উত্তর, নোয়া পুষ্কনিপাড়, রঘুরামপুর, নোয়াখলা, গণিপুর, কালারাইয়া, কচুয়ার পাড়, উত্তর ঘোড়াশাল, রামপুর দক্ষিন, কৃষ্ণপুর, খোরুইল, কাজিয়াতল দক্ষিন, পুটিয়াজুরী, পান্তি সাহেবনগর, সলফা, ভাঙ্গানগর, হাটবলিবাড়ি, রাজনগর, বাড়িয়াচড়া, পিপিড়িয়া কান্দা ও লক্ষিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এ ব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা ফওজিয়া আক্তার বলেন, ওই বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষকের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশাকরি অল্প দিনের মধ্যেই বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করব।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ: স্বাগত জানাতে মুরাদনগরে ব্যাপক প্রস্ততি

মুরাদনগরে ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট প্রকট, ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান

আপডেট সময় ০২:০৯:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাউল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোন সহকারি শিক্ষক। স্কুলটিতে রয়েছে ১৬৫ শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক নিজেই পাঠদানের পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজ চালাচ্ছেন। এত করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তেমনি ভাবে কৈজুরী, কদমতলি, মাধবপুর ও কাজিয়াতল উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো চলছে ২ জন করে সহকারি শিক্ষক দিয়ে। তাদের মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়ে প্রায় সময় স্কুলের বাহিরে থাকতে হচ্ছে এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে এক জন সহকারি শিক্ষক দিয়ে।

কেবল ওই বিদ্যালয় গুলোতেই নয়, উপজেলার ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। এসব স্কুল গুলোতে ৫৩টি স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে ১০৭টি সহকারি শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে। বর্তমান সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও মোট জনসংখ্যার শতভাগ প্রাইমারী শিক্ষা নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে কাজ করলেও সব দিকে পিছিয়ে রয়েছে এ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো। পাঠদানের পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজে বেশি সময় দিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। একটি ক্লাসে শিক্ষক গেলে অন্য ক্লাসগুলো থাকে ফাঁকা। এতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম চরম ভাবে বিঘিœত হচ্ছে। সন্তানদের স্কুলে পাঠালেও ক্লাস না হওয়ায় সামনে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে প্রাইমারী স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে শিক্ষকদের পদোন্নতি দেয়ার কাজ বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের শতকরা ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। বাকি ৬৫ শতাংশ পূরণ করা হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে। এই উপজেলার উপজেলায় ২০৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ খালি থাকায় সহকারী শিক্ষকেরা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষকসংকটে থাকা বিদ্যালয়গুলোর কোনো শিক্ষক (নারী-পুরুষ) যখন অসুস্থ হন কিংবা মাতৃত্বকালীন বা অন্য কোনো কারণে ছুটিতে থাকেন তখন দায়িত্বরতদের পাঠদানে হিমশিম খেতে হয়। এ অবস্থায় একজন শিক্ষককে একটানা চার-পাঁচটি ক্লাসে পাঠদান করতে হয়, অথবা কখনো কোনো একটি শ্রেণির পাঠদান বন্ধ থাকে। গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট রয়েছে।

উপজেলার সবচেয়ে বেশি শিক্ষক সংকটে থাকা স্কুল গুলো হলো, কৈজুরী, কদমতলি, মাধবপুর , কাজিয়াতল উত্তর, পেন্নই, ইসলামপুর, শাগদা, হায়দ্রাবাদ, শোনারামপুর, আন্দিকোট, চুলুড়িয়া, নওগাঁ উত্তর, নোয়া পুষ্কনিপাড়, রঘুরামপুর, নোয়াখলা, গণিপুর, কালারাইয়া, কচুয়ার পাড়, উত্তর ঘোড়াশাল, রামপুর দক্ষিন, কৃষ্ণপুর, খোরুইল, কাজিয়াতল দক্ষিন, পুটিয়াজুরী, পান্তি সাহেবনগর, সলফা, ভাঙ্গানগর, হাটবলিবাড়ি, রাজনগর, বাড়িয়াচড়া, পিপিড়িয়া কান্দা ও লক্ষিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এ ব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা ফওজিয়া আক্তার বলেন, ওই বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষকের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশাকরি অল্প দিনের মধ্যেই বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করব।