ঢাকা ০৯:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে গোমতী নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে

মো: মোশাররফ হোসেন মনির:

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের কোম্পনীগঞ্জ এলাকার মালিশাইল গ্রামে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দলীয় প্রভাব ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দীর্ঘদি যাবত গোমতি নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবলীগের নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের মাটি বিক্রি করে তিনি এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। নদীতে গত ৩ বছর যাবত মাটি কাটার বিষয়টি পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীর না জানা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন বলছে বেশ কয়েকবার ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। কর্তমানে কার্যক্রম চালো থাকলে আবারও ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রাশাসনকে ম্যনেজ করেই যুবলীগ নেতা মাটি উত্তোলন করছেন! তা না হলে একটি নদী থেকে একই স্থান থেকে কিভাবে ৩টি বছর যাবত মাটি উত্তোলন করছেন। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন কারনে মাটি উত্তোলনের কার্যক্রম বন্ধ করেছে ঠিকই কিন্তু তা ছিলো শুধু লোক দেখানো মাত্র! প্রশাসনের লোক দেখানো অভিযান স্থানীয়দের মাঝে দিন দিন চরম ক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে পড়ছে।

দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে নদীর মাটি বিক্রি করা জাহাঙ্গীর আলম উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং কোম্পানীগঞ্জ এলাকার ত্রিশ গ্রামের রুপ মিয়ার ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই যুবলীগ নেতা শুধু গোমতির বালু এবং মাটিই উত্তোলন ও বিক্রি করে ক্ষান্ত থাকছেন না। দিন দিন তিনি হয়ে উঠছেন বেপরোয়া। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে নালিশ করে কেউ পার পায় না। গত ৩ বছর যাবত নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের উত্তর এবং দক্ষিন ত্রিশ গ্রামের গোমতীর চর এবং ফসলী জমি গুলোর অস্তিত্ব বিলিন করে দিয়েছেন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। দুটি গ্রামের সাধারণ মানুষ এবং কৃষকরা জাহাঙ্গীর বাহিনীর কাছে একেবারেই অসহায়। শুধু তাই নয়, তার ক্ষমতার দাপটে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। অভিযোগ রয়েছে এ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস নেই, কৃষকদের চরের জমির মাটি লুটে নিলেও কারো কিছু বলার ভাষা নেই। অসহায় হয়ে নাম মাত্র মুল্যে চরের সকল জমি জাহাঙ্গীরের কাছেই বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদেরকে। গত পাঁচ বছর যাবত তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ গ্রহন করছে না পুলিশ এবং প্রশাসন। অভিযোগ করতে গিয়ে অদৃশ্য শক্তির রোষানলে পড়তে হচ্ছে। প্রশ্ন এসেছে কে এই জাহাঙ্গীর? তার এতো ক্ষমতার উৎস কোথায়? তার কাছে কি প্রশাসনও অকার্যকর? ভূক্তভোগী ত্রিশ এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে এমন নানা প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।

ত্রিশ এলাকার কৃষক আদম আলী, আবু মুছা, ধনু মিয়া, আব্দুল করিমসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, নদী তীরে আমাদের নিজস্ব জমিতে আমরা চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু এখন এ বালু উত্তোলনকারী প্রভাবশালীরা যেভাবে চরের ফসলি জমির মাটি ও বালু উত্তোলন করে নিচ্ছে তাতে আমাদের সব জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে এবং আমরা নি:স্ব হয়ে যাব।

অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা বালু জাহাঙ্গীর আলম সরকার গোমতী নদীতে ড্রেজিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি গোমতী নদীতে ড্রেজার চালাই না। চলমান ড্রেজার কে চালায় তা ও আমি জানি না।

মুরাদনগর উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনী গোমতী নদী থেকে মাটি উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এর আগে আমি নিজে বেশ কয়েকবার মাটি উতেধালনের কার্যক্রম বন্ধ করেছি। বর্তমানে আবার মাটি উতেধালন করছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি মাটি উত্তোলন চালু থাকে আবারও প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খাণ মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান গোমতী নদী থেকে ৩ বছর যাবত মাটি কাটার বিষয়টি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। উপজেলা ও জেলায় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি ছাত্রদলের

মুরাদনগরে গোমতী নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে

আপডেট সময় ০৩:৩৩:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মো: মোশাররফ হোসেন মনির:

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের কোম্পনীগঞ্জ এলাকার মালিশাইল গ্রামে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দলীয় প্রভাব ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দীর্ঘদি যাবত গোমতি নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবলীগের নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের মাটি বিক্রি করে তিনি এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। নদীতে গত ৩ বছর যাবত মাটি কাটার বিষয়টি পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীর না জানা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন বলছে বেশ কয়েকবার ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। কর্তমানে কার্যক্রম চালো থাকলে আবারও ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রাশাসনকে ম্যনেজ করেই যুবলীগ নেতা মাটি উত্তোলন করছেন! তা না হলে একটি নদী থেকে একই স্থান থেকে কিভাবে ৩টি বছর যাবত মাটি উত্তোলন করছেন। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন কারনে মাটি উত্তোলনের কার্যক্রম বন্ধ করেছে ঠিকই কিন্তু তা ছিলো শুধু লোক দেখানো মাত্র! প্রশাসনের লোক দেখানো অভিযান স্থানীয়দের মাঝে দিন দিন চরম ক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে পড়ছে।

দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে নদীর মাটি বিক্রি করা জাহাঙ্গীর আলম উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং কোম্পানীগঞ্জ এলাকার ত্রিশ গ্রামের রুপ মিয়ার ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই যুবলীগ নেতা শুধু গোমতির বালু এবং মাটিই উত্তোলন ও বিক্রি করে ক্ষান্ত থাকছেন না। দিন দিন তিনি হয়ে উঠছেন বেপরোয়া। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে নালিশ করে কেউ পার পায় না। গত ৩ বছর যাবত নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের উত্তর এবং দক্ষিন ত্রিশ গ্রামের গোমতীর চর এবং ফসলী জমি গুলোর অস্তিত্ব বিলিন করে দিয়েছেন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। দুটি গ্রামের সাধারণ মানুষ এবং কৃষকরা জাহাঙ্গীর বাহিনীর কাছে একেবারেই অসহায়। শুধু তাই নয়, তার ক্ষমতার দাপটে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। অভিযোগ রয়েছে এ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস নেই, কৃষকদের চরের জমির মাটি লুটে নিলেও কারো কিছু বলার ভাষা নেই। অসহায় হয়ে নাম মাত্র মুল্যে চরের সকল জমি জাহাঙ্গীরের কাছেই বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদেরকে। গত পাঁচ বছর যাবত তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ গ্রহন করছে না পুলিশ এবং প্রশাসন। অভিযোগ করতে গিয়ে অদৃশ্য শক্তির রোষানলে পড়তে হচ্ছে। প্রশ্ন এসেছে কে এই জাহাঙ্গীর? তার এতো ক্ষমতার উৎস কোথায়? তার কাছে কি প্রশাসনও অকার্যকর? ভূক্তভোগী ত্রিশ এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে এমন নানা প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।

ত্রিশ এলাকার কৃষক আদম আলী, আবু মুছা, ধনু মিয়া, আব্দুল করিমসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, নদী তীরে আমাদের নিজস্ব জমিতে আমরা চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু এখন এ বালু উত্তোলনকারী প্রভাবশালীরা যেভাবে চরের ফসলি জমির মাটি ও বালু উত্তোলন করে নিচ্ছে তাতে আমাদের সব জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে এবং আমরা নি:স্ব হয়ে যাব।

অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা বালু জাহাঙ্গীর আলম সরকার গোমতী নদীতে ড্রেজিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি গোমতী নদীতে ড্রেজার চালাই না। চলমান ড্রেজার কে চালায় তা ও আমি জানি না।

মুরাদনগর উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনী গোমতী নদী থেকে মাটি উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এর আগে আমি নিজে বেশ কয়েকবার মাটি উতেধালনের কার্যক্রম বন্ধ করেছি। বর্তমানে আবার মাটি উতেধালন করছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি মাটি উত্তোলন চালু থাকে আবারও প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খাণ মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান গোমতী নদী থেকে ৩ বছর যাবত মাটি কাটার বিষয়টি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। উপজেলা ও জেলায় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।