ঢাকা ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ ৯ মে বিশ্ব মা দিবস:এক সংগ্রামী মায়ের গল্প

মাহবুব আলম আরিফ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

মোসাম্মদ রাশিদা আক্তার। একজন সফল মা। একজন সংগ্রামী মা। যার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে সীমাহীন সংগ্রামের গা শিউরে ওঠার মতো গল্প। তবে সব বাধার দেয়াল পেরিয়ে তিনি আজ একজন সফল মানুষ। দুই সন্তানের সফল জননী এই মায়ের দুই ছেলে-ই কর্মজীবনে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বড় ছেলে ঢাকার একটি সুনামধন্য কোম্পানীতে মার্কেটিং এন্ড মার্চেন্ডাইজিং এ চাকুরি করছেন। ছোট ছেলে শার্প আইটিতে টেকনিক্যাল ও ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট হিসেবে নিযুক্ত।
রতœগর্ভা এই মা নিজেও কর্মজীবী। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর আশ্রাফ কামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ৪৪ বছর বয়সেও এই মা সবকিছু করে চলেছেন সীমাহীন দক্ষতায়।

১৯৯০ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ১২ বছর বয়সেই সংসার জীবনে পা রাখতে হয় মা রাশিদ ডাক্তারের। বিয়ের পর স্বামী ডাঃ মোঃ জয়নাল আবেদীনের অনুপ্রেরণায় লেখাপড়া চালিয়ে যান তিনি। সাংসারিক জীবনের চার বছরের মাথায় জন্ম নেয় বড় ছেলে আশিকুর রহমান জুবায়ের। তার দু’বছর পরে জন্ম নেয় ছোট ছেলে আসিফুজ্জামান সোহাগ। এরই মধ্যে উচ্চা মাধ্যমিক শেষ করে ডিগ্রী সম্পন্ন করেন তিনি। সাংসারিক জীবনের ১১ টি বছর ভালই কাটছিল তার। ২০০২ সালে হঠাৎ কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চার মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে মৃত্যুবরণ করেন স্বামী ডাঃ জয়নাল আবেদীন।

স্বামীর মৃত্যুর পর একেবারেই একা হয়ে পড়েন রাশিদা আক্তার। শুরু থেকেই পরিবারে ছিল না শ্বশুর শাশুড়ী। স্বামীর একমাত্র ভাই থাকলেও কখনো রাশিদা ও তার সন্তানদের খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করেননি তিনি।

শুরু হয় অজানা এক জীবন সংগ্রামের কাহিনী। সন্তানদের বাবার পরিচয়ে মানুষ করতে ও তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামীর বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার পাকগাজিপুর গ্রামে থেকে শুরু করেন জীবন সংগ্রামের এক নতুন অধ্যায়। খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের নিয়ে একাকি দুই বছর সংগ্রামের পর দেখা মেলে ভাগ্য দেবীর। ২০০৪ সালে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর আশ্রাফ কামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরী পান তিনি। শুরু হয় জীবনের নতুন আরেক অধ্যায়। সেখানেও তিনি থেমে থাকেননি, সন্তানদের লেখাপড়ার পাশাপাশি লেখাপড়া করেছেন তিনি নিজেও চাকুরীরত অবস্থায় সম্পূর্ণ করেছেন মাস্টার্স-বিএড-এমএড। শিক্ষা ও চাকরি ক্যাটাগরিতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ২০১৮ সালে পেয়েছেন ‘জয়িতা’র সম্মাননা। রাশিদা আক্তার এরই মধ্যে তার বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে পেয়েছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক পদমর্যাদা।

যাত্রপুর এ কে উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোসাম্মদ রাশিদা ডাক্তার বলেন, স্বামীকে হারিয়েছি ২১ বছর হলো। শুধুমাত্র সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমার এই সংগ্রামী পথ বেছে নেয়া। আমি কখনো চাইনি আমার সন্তানরা তার বাবার পরিচয় থেকে বঞ্চিত থাকুক। একজন সন্তানের সবচাইতে বড় পরিচয় হচ্ছে তার বাবা। কাউকে জীবনসঙ্গী না করার কারণ কি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এই ভয়েই আসলে এখন পর্যন্ত জীবনসঙ্গী হিসেবে কাউকে বেছে নেওয়া হয়নি। আমার দুই সন্তানই এখন আমার পৃথিবী।

বড় ছেলে আশিকুর রহমান জুবায়ের বলেন, আমি যখন অনেক ছোট তখন বাবাকে হারিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত বাবার অভাব আমার মা কখনো বুঝতে দেয়নি। তিনি প্রতিটি সময় আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সংগ্রামী এক জীবন অতিবাহিত করছেন। আমার মায়ের তুলনা শুধু আমার মা নিজেই। আমার মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। আইলাভইউ মা।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

আজ ৯ মে বিশ্ব মা দিবস:এক সংগ্রামী মায়ের গল্প

আপডেট সময় ০৩:৩১:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ মে ২০২৩

মাহবুব আলম আরিফ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

মোসাম্মদ রাশিদা আক্তার। একজন সফল মা। একজন সংগ্রামী মা। যার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে সীমাহীন সংগ্রামের গা শিউরে ওঠার মতো গল্প। তবে সব বাধার দেয়াল পেরিয়ে তিনি আজ একজন সফল মানুষ। দুই সন্তানের সফল জননী এই মায়ের দুই ছেলে-ই কর্মজীবনে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বড় ছেলে ঢাকার একটি সুনামধন্য কোম্পানীতে মার্কেটিং এন্ড মার্চেন্ডাইজিং এ চাকুরি করছেন। ছোট ছেলে শার্প আইটিতে টেকনিক্যাল ও ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট হিসেবে নিযুক্ত।
রতœগর্ভা এই মা নিজেও কর্মজীবী। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর আশ্রাফ কামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ৪৪ বছর বয়সেও এই মা সবকিছু করে চলেছেন সীমাহীন দক্ষতায়।

১৯৯০ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ১২ বছর বয়সেই সংসার জীবনে পা রাখতে হয় মা রাশিদ ডাক্তারের। বিয়ের পর স্বামী ডাঃ মোঃ জয়নাল আবেদীনের অনুপ্রেরণায় লেখাপড়া চালিয়ে যান তিনি। সাংসারিক জীবনের চার বছরের মাথায় জন্ম নেয় বড় ছেলে আশিকুর রহমান জুবায়ের। তার দু’বছর পরে জন্ম নেয় ছোট ছেলে আসিফুজ্জামান সোহাগ। এরই মধ্যে উচ্চা মাধ্যমিক শেষ করে ডিগ্রী সম্পন্ন করেন তিনি। সাংসারিক জীবনের ১১ টি বছর ভালই কাটছিল তার। ২০০২ সালে হঠাৎ কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চার মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে মৃত্যুবরণ করেন স্বামী ডাঃ জয়নাল আবেদীন।

স্বামীর মৃত্যুর পর একেবারেই একা হয়ে পড়েন রাশিদা আক্তার। শুরু থেকেই পরিবারে ছিল না শ্বশুর শাশুড়ী। স্বামীর একমাত্র ভাই থাকলেও কখনো রাশিদা ও তার সন্তানদের খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করেননি তিনি।

শুরু হয় অজানা এক জীবন সংগ্রামের কাহিনী। সন্তানদের বাবার পরিচয়ে মানুষ করতে ও তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামীর বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার পাকগাজিপুর গ্রামে থেকে শুরু করেন জীবন সংগ্রামের এক নতুন অধ্যায়। খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের নিয়ে একাকি দুই বছর সংগ্রামের পর দেখা মেলে ভাগ্য দেবীর। ২০০৪ সালে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর আশ্রাফ কামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরী পান তিনি। শুরু হয় জীবনের নতুন আরেক অধ্যায়। সেখানেও তিনি থেমে থাকেননি, সন্তানদের লেখাপড়ার পাশাপাশি লেখাপড়া করেছেন তিনি নিজেও চাকুরীরত অবস্থায় সম্পূর্ণ করেছেন মাস্টার্স-বিএড-এমএড। শিক্ষা ও চাকরি ক্যাটাগরিতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ২০১৮ সালে পেয়েছেন ‘জয়িতা’র সম্মাননা। রাশিদা আক্তার এরই মধ্যে তার বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে পেয়েছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক পদমর্যাদা।

যাত্রপুর এ কে উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোসাম্মদ রাশিদা ডাক্তার বলেন, স্বামীকে হারিয়েছি ২১ বছর হলো। শুধুমাত্র সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমার এই সংগ্রামী পথ বেছে নেয়া। আমি কখনো চাইনি আমার সন্তানরা তার বাবার পরিচয় থেকে বঞ্চিত থাকুক। একজন সন্তানের সবচাইতে বড় পরিচয় হচ্ছে তার বাবা। কাউকে জীবনসঙ্গী না করার কারণ কি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এই ভয়েই আসলে এখন পর্যন্ত জীবনসঙ্গী হিসেবে কাউকে বেছে নেওয়া হয়নি। আমার দুই সন্তানই এখন আমার পৃথিবী।

বড় ছেলে আশিকুর রহমান জুবায়ের বলেন, আমি যখন অনেক ছোট তখন বাবাকে হারিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত বাবার অভাব আমার মা কখনো বুঝতে দেয়নি। তিনি প্রতিটি সময় আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সংগ্রামী এক জীবন অতিবাহিত করছেন। আমার মায়ের তুলনা শুধু আমার মা নিজেই। আমার মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। আইলাভইউ মা।