মুরাদনগর বার্তা ডেস্কঃ
কুমিল্লা দেবীদ্বারে ৫ম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক বেলাল হোসেনকে অবরুদ্ধ করেছে এলাকাবাসী। অবরুদ্ধ ওই শিক্ষককে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে ৬১নং এলাহাবাদ পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, স্কুলের টিউবওয়েল নষ্ট থাকায় রোববার(৩০জুলাই) কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে পানি পান করতে একটু দূরে যায়। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ফিরলে সকল শিক্ষার্থীদের বেধরক মারধর করেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ বেলাল হোসেন। মারধরের ফলে এলাহাবাদ পূর্ব পাড়ার সুলতান আহমেদের মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ফারজানা আক্তার(১০) মারাত্মকভাবে আহত হয়।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোঃ বেলাল হোসেনের বাড়ি একই গ্রামে হওয়ায় ক্ষমতা দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত, একাদিক শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের নানান অভিযোগে ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার ( ৩১জুলাই) দুপুরে ওই শিক্ষক’কে বিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী। পরে পুলিশ এসে অভিযুক্ত শিক্ষক বেলাল হোসেনকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় বন্ধ ছিল বিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম। আতঙ্কিত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
আহত শিক্ষার্থীর বড় ভাই রোবেল হোসেন জানান, শিক্ষকের বেধরক মারধরে বোনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একটু পর আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এলাহাবাদ পূর্ব পাড়ার শাহ জালাল সহ একাধিক ব্যাক্তি জানায়, শিক্ষক বেলালের নিজ বাড়ি বিদ্যালয়ের অতি নিকটে। এজন্যে এই বিদ্যালয়ে চলে তার একক আধিপত্য। আমরা এই শিক্ষককে এই বিদ্যালয় দেখতে চাই না। বিগত সময়ে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিদ্যালয় ছাড়তে হয়েছে। বর্তমানেও এই শিক্ষকের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস পায় না। এই শিক্ষকের কারণে আমাদের এই এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পথে৷ আমরা তার বহিষ্কার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানায়, বেলাল স্যারের চরিত্র খুবই বাজে প্রকৃতির। উনার মনে ইচ্ছামতো স্কুলে আসে আবার চলে যায়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠেছিল। কয়েকবার বিচার হয়েছে। প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয় না।
অভিযুক্ত শিক্ষক বেলাল হোসেনে’কে বাড়িতে গিয়ে না পাওয়ায় তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনে একাধিক বার কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোবারক হোসেন জানায়, আমি এখানে যোগদান করেছি বেশিদিন হয়নি। বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলার কোনো আইন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নীতিমালায় নেই। আমরা ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন জানায়, এ বিষয়ে আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ কিছু জানায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টা জেনেছি।
উপজেলার সহকারি শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান জানায়, খবর পেয়ে তদন্তের জন্য আমরা ওই বিদ্যালয়ে গিয়েছি। শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্র-ছাত্রী ও আহত ওই শিক্ষার্থীর লিখিত বক্তব্য এনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
দেবীদ্বার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর জানায়, অবরুদ্ধের খবরে পুলিশ গিয়ে শিক্ষককে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, অবরুদ্ধ শিক্ষককে পুলিশ উদ্ধার করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।