ঢাকা ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে শিশু অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় ৩ আসামীর যাবজ্জীন

সুমন সরকার, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়  শিশু আব্দুর রহমান (০৫) কে অপহরণ করে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে তিনজনকে যাবজ্জীবন ও একজনকে ১৪ বছরের কারদন্ড প্রদান করেন আদালত।

মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-০৩ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোয়াজ্জেম হোসেন এ রায় দেন। 

নিহত আব্দুর রহমান গাংকাটিয়া গ্রামের ওমান প্রবাসী ফারুক মিয়ার ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে আব্দুর রহমান সবার বড়।

দন্ডপ্রপ্তরা হলো, মুরাদনগর উপজেলার বোড়ারচর গ্রামের বাতেন বেপারীর ছেলে  ময়নাল হোসেন (৩৩), আবু মুসার ছেলে নাজমুল হাছান (৩০), রবিউল হাসান (৩৪) ও ছালামত খানের ছেলে শাহীন খান (২০)। রায় ঘোষণাকালে আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ ও মামলা সুত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী রাতে মুরাদনগর উপজেলার গাংগাটিয়া এলাকার নিজ বসত ঘর থেকে শিশু আব্দুর রহমানকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তার আপন ফুফা নাজমুল হাছান সহ উল্লেখিত আসামীরা। পরবর্তীতে আব্দুর রহমানের মুক্তিপণ হিসেবে  ৩০ লাখ টাকা দাবী করা হয়। পরে ২৪ ফেব্রæয়ারী আব্দুর রহমানের পিতা ফারুক মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মুরাদনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পর মামলাটির তদন্তভার পান মুরাদনগর থানার তৎকালীন এসআই হামিদুল ইসলাম। ২৯ মার্চ পরিবারের কাছে আসামীদের দাবীকৃত ৩০লাখ টাকা দেওয়ার জন্য আসামীরা আব্দুর রহমানের পরিবারকে উপজেলার আলীরচর এলাকায় আসতে বলে। পরে এসআই হামিদুল ইসলামে নেতৃত্বে ছদ্মবেশে একদল পুলিশ আলিরচর এলাকায় গেলে আসামীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। এসময় আসামী এবং পুলিশের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। আসামীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয় হয় এসআই হামিদুল ইসলাম। ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার সহ মামলার ১ নম্বর আসামী ময়নাল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ

মামলার তদন্তকারী এসআই হামিদুল ইসলাম বলেন জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী জানায় যে, আব্দুর রহমানকে অপহরণ করে তার পিতার নিকট ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করেন। উক্ত দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় অপহরণের ১০দিন পর ভিকটিম আব্দুর রহমানকে ময়নাল হোসেনসহ অন্য আসামিরা গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আসামি ময়নালের আবাদি জমিতে মাটি খুড়ে পুঁতে রাখা হয়। এবং ময়নাল হোসেনের দেখানো জমি থেকে থানা পুলিশ আব্দুর রহমানে লাশ উদ্ধার করে।

মামলার পিপি এডভোকেট আমজাদ হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি ময়নাল হোসেন, নাজমুল হাছান ও শাহীন খান কে যাবজ্জীবন ও প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড প্রদান ও আনাদয়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।  এবং অপর আসামি রবিউল হাসানকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড  প্রদান করেন আদালত।

ভিকটিম আব্দুর রহমানের মা শাহিনুর আক্তার বলেন, এ রায়ে আমাদের পরিবার সহ এলাকাবাসী অনেক খুশি হয়েছে। এ রায়ে আমার ছেলের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। দেশে এমন ঘটনা যেন না ঘটে তাই আমার ছেলে হত্যাকারী আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবী করছি। 

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

মুরাদনগরে শিশু অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় ৩ আসামীর যাবজ্জীন

আপডেট সময় ০৩:১১:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সুমন সরকার, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়  শিশু আব্দুর রহমান (০৫) কে অপহরণ করে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে তিনজনকে যাবজ্জীবন ও একজনকে ১৪ বছরের কারদন্ড প্রদান করেন আদালত।

মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-০৩ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোয়াজ্জেম হোসেন এ রায় দেন। 

নিহত আব্দুর রহমান গাংকাটিয়া গ্রামের ওমান প্রবাসী ফারুক মিয়ার ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে আব্দুর রহমান সবার বড়।

দন্ডপ্রপ্তরা হলো, মুরাদনগর উপজেলার বোড়ারচর গ্রামের বাতেন বেপারীর ছেলে  ময়নাল হোসেন (৩৩), আবু মুসার ছেলে নাজমুল হাছান (৩০), রবিউল হাসান (৩৪) ও ছালামত খানের ছেলে শাহীন খান (২০)। রায় ঘোষণাকালে আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ ও মামলা সুত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী রাতে মুরাদনগর উপজেলার গাংগাটিয়া এলাকার নিজ বসত ঘর থেকে শিশু আব্দুর রহমানকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তার আপন ফুফা নাজমুল হাছান সহ উল্লেখিত আসামীরা। পরবর্তীতে আব্দুর রহমানের মুক্তিপণ হিসেবে  ৩০ লাখ টাকা দাবী করা হয়। পরে ২৪ ফেব্রæয়ারী আব্দুর রহমানের পিতা ফারুক মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মুরাদনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পর মামলাটির তদন্তভার পান মুরাদনগর থানার তৎকালীন এসআই হামিদুল ইসলাম। ২৯ মার্চ পরিবারের কাছে আসামীদের দাবীকৃত ৩০লাখ টাকা দেওয়ার জন্য আসামীরা আব্দুর রহমানের পরিবারকে উপজেলার আলীরচর এলাকায় আসতে বলে। পরে এসআই হামিদুল ইসলামে নেতৃত্বে ছদ্মবেশে একদল পুলিশ আলিরচর এলাকায় গেলে আসামীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। এসময় আসামী এবং পুলিশের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। আসামীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয় হয় এসআই হামিদুল ইসলাম। ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার সহ মামলার ১ নম্বর আসামী ময়নাল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ

মামলার তদন্তকারী এসআই হামিদুল ইসলাম বলেন জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী জানায় যে, আব্দুর রহমানকে অপহরণ করে তার পিতার নিকট ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করেন। উক্ত দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় অপহরণের ১০দিন পর ভিকটিম আব্দুর রহমানকে ময়নাল হোসেনসহ অন্য আসামিরা গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আসামি ময়নালের আবাদি জমিতে মাটি খুড়ে পুঁতে রাখা হয়। এবং ময়নাল হোসেনের দেখানো জমি থেকে থানা পুলিশ আব্দুর রহমানে লাশ উদ্ধার করে।

মামলার পিপি এডভোকেট আমজাদ হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি ময়নাল হোসেন, নাজমুল হাছান ও শাহীন খান কে যাবজ্জীবন ও প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড প্রদান ও আনাদয়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।  এবং অপর আসামি রবিউল হাসানকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড  প্রদান করেন আদালত।

ভিকটিম আব্দুর রহমানের মা শাহিনুর আক্তার বলেন, এ রায়ে আমাদের পরিবার সহ এলাকাবাসী অনেক খুশি হয়েছে। এ রায়ে আমার ছেলের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। দেশে এমন ঘটনা যেন না ঘটে তাই আমার ছেলে হত্যাকারী আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবী করছি।