ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর ( ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি :
শীত আসলেই মেঘনা-তিতাস নদীঘেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানুষের মধ্যে ৭ থেকে ১০ বছর আগেও কুস্তি খেলা নিয়ে চায়ের আড্ডা থেকে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনা আর আগ্রহ নিয়ে কথা হতো।কথা হতো এ বছর কে কুস্তিতে চ্যাম্পিয়ন হবে,কবে কোথায় খেলা হবে,তাতে কোন কোন কুস্তিবিদ অংশ নিবে,এসব।কিন্তু, মাদক, স্পন্সর, আয়োজক কমিটির অনীহা আর জায়গার অভাবে কুস্তি খেলা প্রায় বিলুপ্তির পথে।
আবহমান গ্রামবাংলার প্রাচীনতম ঐহিত্য কুস্তি খেলার প্রতি এদত অঞ্চলের মানুষের একটা র্দূবলতা সবসময় ছিল এবং আজো আছে। বাঞ্ছারামপুর ও পার্শ্ববর্তী কুমিল্লার হোমনা-মেঘনা- তিতাস উপজেলায় কুস্তি খেলার স্থানীয় নাম হলো ‘ডুগ খেলা’।
কালের বিবর্তনে কুস্তি বা ডুগ খেলা হারিয়ে যেতে বসলেও আজো গ্রাম বাংলায় এই কুস্তি খেলা অতি জনপ্রিয় হয়ে রযেছে। এক সময় বর্ষা আসলে গ্রামের উঠোনে হাডুডু, খেলার প্রচলন ছিল প্রতি গ্রামেই। এখন এই খেলাটি আস্তে আস্তে বিলিন হয়ে গেছে। সুস্থ দেহ আর মন মানসিকতার বিকাশ গঠাতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। বাঞ্ছারামপুরের ১৩ টি ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামেই এলাকা ভিত্তিক কুস্তি খেলার আয়োজন এখন আরো জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে।
তাই বর্ষা আসলেই প্রতি গ্রামের যুবক, মধ্য বয়সি ছেলেরা কুস্তি খেলার প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে। কিছু দিন প্রশিক্ষন দেয়ার পর আবার অন্য এলাকার লোক জনকে আমন্ত্রন জানিয়ে হুল্লুড় করে খেলার আয়োজন করা হয়। এই খেলার ভাল কুস্তিগীরকে “ ডুগ প্লেয়ার” বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই সকল কুস্তিগীর যারা থাকেন তারা প্রতিটি গ্রামে জামাই আদরে থাকেন। এলাকার প্রত্যেকেই তাকে শক্তি ও সাহস যোগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন এলাকায় কুস্তিগীর যারা আছে তারা বিশেষ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই খেলা বড় গ্রাম হলে এক গ্রামে নতুবা, দুই তিন গ্রামে মিলে (কুস্তি গীর) প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। এলাকায় যেসব গ্রামে কুস্তিগীর আছে তাদেরকে খেলার জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়। যে এলাকায় খেলার আয়োজন করা হয় ঐ এলাকার শত শত দাওয়াতি লোক গ্রামে আগের দিন চলে যায়। আনন্দ উৎসাহে তাদেরকে গরু জবাই করে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পরদিন চলে কুস্তি খেলা, মাঠে হাজার হাজার লোক জমায়েত হয়। খেলা পরিচালনার জন্য এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি সহ দুই / তিন জনকে রেফারী দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা খেলা পরিচালনা করেন।
তেমনি এক কুস্তি খেলা অনুষ্ঠিত হলো মঙ্গলবার দিনব্যপী উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নে।সেখানে বহুদিন পর খেলা দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল।
কুস্তি খেলা নিয়ে গবেষনা ও কুস্তিখেলা পাগল ব্লগার শামীমুর রহমান বলেন, বাঞ্ছারামপুরে আগে যেখানে শতাধিক কুস্তিবিদ খেলার জন্য অপেক্ষা করতো,কখন শীতকালে আয়োজকদের ডাক শুনবে,সেখানে এখন ভালো মানের ১ ডজন প্লেয়ার পাওয়াটাই দুস্কর।খেলোয়াড় সংকটের কারন হিসেবে,বলেন পার্শ্ববর্তী হোমনা-তিতাস থেকে মাদকের সহজলভ্যতা বাঞ্ছারামপুরে বেশী।উঠতি যুবকরা সেদিকে ঝুকছে।আগে আমাদের মাদক বন্ধ করতে হবে।
জানা গেছে,বাঞ্ছারামপুরে এখন যে হাতেগুনা খেলা হয়,সেখানে অন্য এলাকা থেকে প্লেয়ার চুক্তিতে আনতে হয়। চট্টগ্রামের জব্বারের বলীখেলায় শেষ ২০১৮ সালে বাঞ্ছারামপুরের অলি বলী চ্যাম্পিয়ন হয়।তারপর,আর তেমন কোন অর্জন উল্লেখ করার মতো নেই।
মাহবুবুর রহমান নয়ন নামে কুস্তিপ্রেমী বলেন, বাঞ্ছারামপুরে কুস্তি খেলাকে পুনরায় জাগ্রত করতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি/সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।মাদক নির্মুল করতে হবে।
নইলে কুস্তি খেলা ইতিহাসের পাতায় ‘ঠাঁই ‘ হয়ে যাবে।