মো: মোশাররফ হোসেন মনির:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের উপর হামলাকারী, শ্রীকাইল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির ব্যানার সজ্জিত একটি গাড়ি বহরের মাধ্যমে তার বাড়িতে পৌছে দেওয়ার মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে পূর্নবাসনের চেষ্ঠার অভিযোগ উঠেছে নব-গঠিত ওই দলটির বিরুদ্ধে।
রবিবার বিকেলে পালিয়ে থাকা যুবলীগের নেতা আনোয়ার হোসেনকে উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়নের পেন্নই গ্রামের নিজ বাড়িতে জাতীয় নাগরিক পার্টির ব্যানারে করে পৌছে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় স্থানীয়দের বাধার মুখে পরে ওই দলটি। এতে করে স্থানীয়ওেদর সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা-কর্মীদের সাথে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। এতে করে দোকানপাট ও ঘর বাড়ি ভাঙচুরসহ ১০/১২ জন স্থানীয় আহতের খবর পাওয়া যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উত্তর পেন্নাই গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে আনোয়ার (ডাকাত)। তিনি ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। গেল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভোট কেন্দ্র দখল করে মেম্বার হোন তিনি। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামী মুরাদনগরের সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের ঘনিষ্ঠতার প্রভাব দেখিয়ে গ্রামের মানুষকে জিম্মি করে রাখতেন আনোয়ার। আওয়ামী লীগের শাসনামলে মাদক ব্যবসা, নদী দখল,ড্রেজার, চাঁদাবাজি এমনকি নারীদের যৌন হয়রানিও করত সে। ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এবং স্থানীয় মেম্বার হওয়ায় তার কাছে জিম্মি ছিল ২নং ওয়ার্ডের মানুষ। তাকে চাঁদা না দিলে কারো ঘর নির্মান হত না। দোকান করতে হলেও তাকে চাঁদা দিতে হত। জুলাই আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার অপরাধে রাজু মিয়া নামে এক শিক্ষার্থীর পরিবারকে হুমকি এবং তার বাবার দোকান জ্বালিয়ে দেয় সেই আনোয়ার ডাকাত। গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর এলাকা থেকে পালিয়ে যায় যুবলীগ সভাপতি আনোয়ার।
এরই মাঝে গত রবিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির ব্যানারে সজ্জিত ১০ টি প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে উত্তর পেন্নাই বাজারে প্রবেশ করে। এ সময় স্থানীয়রা প্রতিবাধ করলে আনোয়ারের সন্ত্রাসীরা স্থানীয়দের উপর হামলা করে। পরে খবর পেয়ে গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসীদেরকে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায় এবং ৩ জনকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ আটককৃতদের ছেরে দেয়। তবে প্রশাসন যুবলীগ নেতার ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের আটক না করায় প্রশাসনের ব্যাপারে জনতার সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ২ নং ওয়ার্ড উত্তর পেন্নাই এর ৫ বারের সাবেক মেম্বার ফিরোজ মিয়া বলেন, মনু চোরার পোলা আনোয়ার আওয়ামী লীগের লোক। সে বিভিন্ন জনের থেকে এমনকি তার সাঙ্গ পাঙ্গরাও ২০ লাখ ৩০ লাখ কইরা প্রতিডা মানুষ থেইকা নিছে। আমি মুরুব্বি মানুষ আমার লগেও যে আচরনডা করছে ভুলতারতাম না। তার জ্বালায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। চরিত্রের ঠিক নাই,এহন বেয়াইন লইয়া ঘুরে! বিয়া করছেনি কে জানে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী রাজু মিয়া বলেন, আমরা যখন আন্দোলন করছি। তখন এই যুবলীগ সভাপতি আনোয়ার আমাদেরকে বিভিন্ন মোড়ে এ্যাটাক করছে। আমি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে যাওয়ায় তার ভাইয়েরা আমার বাবার কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় আমাদের দোকান তালা দিয়ে দেয়। আমরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করলাম এখন দেখি এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া লোকদের নতুন দলের নেতৃত্বে আনোয়ার মেম্বারকে এলাকায় নিয়ে আসে? এটা কিভাবে সম্ভব?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, পুলিশ খবর পেয়ে সাথে সাথে বাঙ্গরা থানা পুলিশ ঘটনার স্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এখন পর্যন্ত কেহই থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।