ঢাকা ১১:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাড়ি তো নয় যেন ‘উদ্ভিদ জাদুঘর’

লুৎফর রহমান, কুমিল্লা থেকে:

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার গুণানন্দী গ্রামের এক জন বৃক্ষপ্রেমী চিকিত্সক মো. আবু নাঈম। তিনি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের প্রভাষক। তার পুরো বাড়িটি যেন এক ‘উদ্ভিদ জাদুঘর’।

বাড়ির ছাদ, আঙিনা, বারান্দা, সিঁড়ি সর্বত্র বর্ণিল উদ্ভিদের সমাহার, বাদ যায়নি খাবারের টেবিলও। বাড়িটির প্রতি ইঞ্চি জায়গা নানা প্রজাতির ক্যাকটাস আর দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফুল ও অর্কিডে সাজানো। বর্তমানে তার বাড়িতে আছে ১ হাজারেরও অধিক দেশি-বিদেশি ফলদ-বনজ, ঔষধিসহ নানা প্রজাতির ফুলের গাছ। তার এ ‘উদ্ভিদ জাদুঘরের’ কথা এখন বৃক্ষপ্রেমী মানুষের মুখে মুখে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে উত্সুক মানুষের ভিড় জমে বাড়িতে। গুণানন্দী ও আশপাশের এলাকায় ঐ বাড়িটি এখন ‘গাছবাড়ি’ নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডা. আবু নাঈমের বাড়ির পুরোটাই গাছের দখলে, কোথায়ও যেন পা ফেলার স্থান নেই। ভবনের ছাদ যেন ফুলের মেলা। সেখানে দেখা মেলে অন্তত ৪৬ প্রজাতির গোলাপের। আরেকটি ভবন যেন দেশি-বিদেশি অর্কিড, ক্যাকটাস, ফুল ও নানা প্রজাতির গাছে মোড়ানো। আছে পারুল ফুল, মাংকি ব্রাশ ফ্লাওয়ার, লাল কদম, বারমাসি কদম, সাদা ও নীল মণিলতা, সোলান্ড্রা, পেন্ডাসহ পাঁচ শতাধিক রকমের ফুল। ডা. নাঈমের উদ্ভিদ বাগানে জলজ গাছের মধ্যে আছে দেশি শাপলা, থাই শাপলা, জলজ লজ্জাবতী, ফ্ল্যাগ প্ল্যান্ট, স্বর্ণ কুমুদ, জল গোলাপ, জলজ পপি ও পানি ফল গাছ। আছে অন্তত ৬৪ প্রজাতির ক্যাকটাস। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জিমনো, ম্যামিলারিয়া, ওলডম্যান, সাকুলেন্ট ও জীবন্ত পাথর। অর্কিডের মধ্যে আছে শতাধিক প্রজাতির ডেনড্রবিয়াম, ক্যাটেলিয়া, ফ্যালনপ্সিস, ভ্যান্ডা ও মোকারা প্রভৃতি। মাটিতে জন্মেছে ২১ প্রজাতির অর্কিড। বাড়ির ভবনের ছাদে ঝুলছে মাটির সঙ্গে সংযোগহীন দূর্বা ঘাসের মতো এক প্রকার গাছ, যার নাম এয়ারপ্ল্যান্ট। মেয়েদের কানের ঝুমকার মতো এক প্রকারের ফুলও আছে সেখানে, নাম চাইনিজ লণ্ঠন।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য উদার মনে কাজ করে যাচ্ছেন ডা. আবু নাঈম। নিজের ব্যস্ত জীবনের মধ্যেও ব্যতিক্রমী এ সবুজ আন্দোলন সমাজের প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

ডা. আবু নাঈম বলেন, শখের বশে বাগান করেছেন। তিনি চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি গাছ আর ফুলের পরিচর্যায় আনন্দ খুঁজে পান। প্রতি তিন মাস অন্তর মেলার আয়োজন করে উদ্ভিদগুলো বিনা মূল্যে বিতরণ করেন। এভাবে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজারেরও অধিক গাছ বিতরণ করেছেন।

সামাজিক বন বিভাগ কুমিল্লার বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য গাছের বিকল্প নেই। তবে নানা কারণে গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে ডা. নাঈমের এ প্রচেষ্টা তরুণদের সবুজ আন্দোলনকে উদ্বুদ্ধ করবে। বন বিভাগের কাছ থেকে সহায়তা চাইলে পাশে থাকবেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

ট্যাগস

মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ চাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ 

বাড়ি তো নয় যেন ‘উদ্ভিদ জাদুঘর’

আপডেট সময় ০৯:৫৪:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

লুৎফর রহমান, কুমিল্লা থেকে:

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার গুণানন্দী গ্রামের এক জন বৃক্ষপ্রেমী চিকিত্সক মো. আবু নাঈম। তিনি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের প্রভাষক। তার পুরো বাড়িটি যেন এক ‘উদ্ভিদ জাদুঘর’।

বাড়ির ছাদ, আঙিনা, বারান্দা, সিঁড়ি সর্বত্র বর্ণিল উদ্ভিদের সমাহার, বাদ যায়নি খাবারের টেবিলও। বাড়িটির প্রতি ইঞ্চি জায়গা নানা প্রজাতির ক্যাকটাস আর দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফুল ও অর্কিডে সাজানো। বর্তমানে তার বাড়িতে আছে ১ হাজারেরও অধিক দেশি-বিদেশি ফলদ-বনজ, ঔষধিসহ নানা প্রজাতির ফুলের গাছ। তার এ ‘উদ্ভিদ জাদুঘরের’ কথা এখন বৃক্ষপ্রেমী মানুষের মুখে মুখে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে উত্সুক মানুষের ভিড় জমে বাড়িতে। গুণানন্দী ও আশপাশের এলাকায় ঐ বাড়িটি এখন ‘গাছবাড়ি’ নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডা. আবু নাঈমের বাড়ির পুরোটাই গাছের দখলে, কোথায়ও যেন পা ফেলার স্থান নেই। ভবনের ছাদ যেন ফুলের মেলা। সেখানে দেখা মেলে অন্তত ৪৬ প্রজাতির গোলাপের। আরেকটি ভবন যেন দেশি-বিদেশি অর্কিড, ক্যাকটাস, ফুল ও নানা প্রজাতির গাছে মোড়ানো। আছে পারুল ফুল, মাংকি ব্রাশ ফ্লাওয়ার, লাল কদম, বারমাসি কদম, সাদা ও নীল মণিলতা, সোলান্ড্রা, পেন্ডাসহ পাঁচ শতাধিক রকমের ফুল। ডা. নাঈমের উদ্ভিদ বাগানে জলজ গাছের মধ্যে আছে দেশি শাপলা, থাই শাপলা, জলজ লজ্জাবতী, ফ্ল্যাগ প্ল্যান্ট, স্বর্ণ কুমুদ, জল গোলাপ, জলজ পপি ও পানি ফল গাছ। আছে অন্তত ৬৪ প্রজাতির ক্যাকটাস। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জিমনো, ম্যামিলারিয়া, ওলডম্যান, সাকুলেন্ট ও জীবন্ত পাথর। অর্কিডের মধ্যে আছে শতাধিক প্রজাতির ডেনড্রবিয়াম, ক্যাটেলিয়া, ফ্যালনপ্সিস, ভ্যান্ডা ও মোকারা প্রভৃতি। মাটিতে জন্মেছে ২১ প্রজাতির অর্কিড। বাড়ির ভবনের ছাদে ঝুলছে মাটির সঙ্গে সংযোগহীন দূর্বা ঘাসের মতো এক প্রকার গাছ, যার নাম এয়ারপ্ল্যান্ট। মেয়েদের কানের ঝুমকার মতো এক প্রকারের ফুলও আছে সেখানে, নাম চাইনিজ লণ্ঠন।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য উদার মনে কাজ করে যাচ্ছেন ডা. আবু নাঈম। নিজের ব্যস্ত জীবনের মধ্যেও ব্যতিক্রমী এ সবুজ আন্দোলন সমাজের প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

ডা. আবু নাঈম বলেন, শখের বশে বাগান করেছেন। তিনি চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি গাছ আর ফুলের পরিচর্যায় আনন্দ খুঁজে পান। প্রতি তিন মাস অন্তর মেলার আয়োজন করে উদ্ভিদগুলো বিনা মূল্যে বিতরণ করেন। এভাবে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজারেরও অধিক গাছ বিতরণ করেছেন।

সামাজিক বন বিভাগ কুমিল্লার বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য গাছের বিকল্প নেই। তবে নানা কারণে গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে ডা. নাঈমের এ প্রচেষ্টা তরুণদের সবুজ আন্দোলনকে উদ্বুদ্ধ করবে। বন বিভাগের কাছ থেকে সহায়তা চাইলে পাশে থাকবেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।