আওয়ামী লীগের দুইজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতার সর্বশেষ বক্তব্য থেকেই সরকারের পলিসি পরিষ্কার হয়ে যায়। পত্রিকায় প্রকাশিত বক্তব্যগুলো তুলে ধরা হলো।
৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ছাড়া কাউকে রাজপথে নামতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ নাসিম। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারির আগে দেশে কোনও জাতীয় নির্বাচন হবে না। সংবিধান অনুযায়ী সময়মতো দেশে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ছাড়া কাউকে রাজপথে নামতে দেয়া হবে না।
ভেবেছিলাম গাজীপুর রণক্ষেত্র হবে কিন্তু দুঃখজনক হলো সেখানে একটি কুত্তাকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি, আর বিএনপির নেতাকর্মীতো দূরের কথা-বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গয়েশ্বর নামের একটাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আর দু’একটাকে গ্রেফতার করা হলে বিএনপির অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে সাংবাদিক ভাইদের করজোড়ে অনুরোধ করছি এদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন দেখবেন রাজনীতিতে এদের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
আগের দিন শুক্রবার বকশীবাজারে বিএনপির ওপর হামলা ও গাজীপুরে বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেয়ার ঘোষণার জন্য ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানান খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বীরউত্তম খাজা নিজাম উদ্দিন মিলনায়তনে স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কামরুল ইসলাম বলেন, ওরা বিদেশী বন্ধুদের দিয়ে চাপ ও দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায় করতে চায়। যতই চাপ দেওয়ান কিংবা বিশৃঙ্খলা করেন, কোনো লাভ নেই। নির্বাচন ২০১৯ সালেই হবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এবার ২০১৩ সালের মতো সন্ত্রাস করলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। দুর্নীতির মামলাকে বাধাগ্রস্ত করা বড় দুর্নীতি। ভবিষ্যতে নিরাপত্তার অজুহাতে তিনি আর আদালতে যাবেন না। এজন্যই তিনি লাঠি নিয়ে আদালতে গিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তারেক বেয়াদব আর তার মা বড় বেয়াদব। মহাবেয়াদব মায়ের সন্তান তো বেয়াদবই হবে। এরা রাজনীতিকে কলুষিত করছে। এদের সরিয়ে রাজনীতি কলুষমুক্ত করতে হবে। কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির এখন মূল অক্সিজেন হলো সাংবাদিক। তাদের মাঠে খুঁজে পাওয়া যায় না। একজন কাঁথা-বালিশ নিয়ে পার্টি অফিসে বসে থাকেন আর সকাল-বিকাল দু’বার ব্রিফিং করেন। এটাই তাদের আন্দোলন। তিনি বলেন, এবার আর বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না। এটা আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রাজপথে থাকবো।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় সূত্র জানায়, পুরোনো মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগরী পর্যায়ের প্রায় সব নেতাই আসামী। তাদেরকে আটক করা হবে এবং আদালত তাদের শাস্তি দেবে। বিএনপির সমস্ত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মাঠ পর্যায়ের নেতারাও কোনো না কোনো মামলার আসামী। যারা জামিনে আছে তাদের জামিনও বাতিল করবে আদালত। আন্দোলনের যে হুমকি তারা দিচ্ছে তা অন্তঃসারশূন্য। বিএনপি এবার জামায়াতকেও আগের মতো পাবে না। ঐ সূত্রের মতে, জামায়াত এখন অস্তিত্বের সংকটে আছে। তার মতে পুলিশের মধ্যে এই এক বছরের মধ্যে এমন কোনো পরিবর্তন আসেনি যাতে তারা সরকারকে আগের মতো সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হবে। কাজেই পুলিশ আগের বছরের চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে। ফলে বিএনপি মাঠেই নামতে পারবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ সূত্রের সাথে আওয়ামী লীগের মাঠের নেতাদের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায় উল্লেখিত দুই আওয়ামী লীগ নেতার সর্বশেষ বক্তব্যের মাধ্যমে। বকশীবাজারের ঘটনার পরে গয়েশ্বর রায়সহ বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়ার ঘটনাও তাই প্রমাণ করে। গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের সমাবেশ হতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। তারা ছাত্রলীগকে দিয়ে সমাবেশস্থল দখল করিয়েছে। আর প্রশাসনকে ব্যবহার করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সমাবেশ বাতিল হয়েছে। প্রতিবাদে গোটা গাজীপুরে আজ হরতাল আর সারা দেশে বিক্ষোভ। তবে পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, পেশীশক্তির এতটা অপব্যবহার সরকার তখনই করে যখন তার পায়ের তলায় আর মাটি থাকে না। আর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি একই রাস্তায় বা একই দরজা দিয়ে হয় না। ১৯৬৪ সালের মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনের পর থেকে শুরু করে ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের আগ পর্যন্তু মাঠে-ময়দানে আওয়ামী লীগকে খুঁজে পাওয়া যেত না। অথচ তখন সামরিক সরকার থাকা সত্ত্বেও পুলিশ এত বেপরোয়া ছিল না। শুধু ২০১৩ সালেই পুলিশ কয়েকশ’ রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গুলী করে হত্যা করেছে যা আইয়ুব শাহীর আমলেও হয়নি। ’৬৯ সালে এক আসাদের মৃত্যুতেই সরকারের পতন ঘটেছিল। বর্তমান সরকার তার চেয়েও অনেক বেশি বেপরোয়া। এত মানুষ হত্যার পর হজম করে কতদিন দেশ চালাতে পারে সরকার?
আগামী দিনের আন্দোলন সাধারণ জনগণের হাতে চলে যাবে। ২০ দলীয় জোট হবে জনগণের প্ল্যাটফরম। মামলা-হামলা জনগণের শক্তির মোকাবিলায় কুলোতে পারবে না এবং জনগণই জয়ী হবে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
সংবাদ শিরোনাম :
জনবিচ্ছিন্ন সরকারের মামলা ও পুলিশের শক্তি কোনই কাজে আসবে না, জনগণের প্ল্যাটফরম হতে যাচ্ছে ২০ দলীয় জোট
- মুরাদনগর বার্তা ডেস্ক :
- আপডেট সময় ০৩:৪৬:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪
- 112
মুরাদনগর বার্তা ডেস্ক (২৮শে ডিসেম্বর ২০১৪)
বিশ দলীয় জোটের ডাকে সম্ভাব্য গণআন্দোলন দমনে সরকার আবারো পুরোনো দুই অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়েছে। এই দুটি অস্ত্র প্রয়োগ করে তারা ৫ জানুয়ারির প্রার্থী ও ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছে এবং বিরোধী দলকে দমনে সক্ষম হয়েছে বলে আত্মতৃপ্তি অনুভব করছে। তাই সফল দুই অস্ত্রই তাদের এবারকারও শক্তির উৎস। সে অস্ত্র দুটি হলো পুলিশ আর মামলা। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেন, মামলাতেই বিএনপি কাবু। মামলা দিয়েই তাদের নেতাদের ঘরে তুলে দেয়া সম্ভব। এটা পরীক্ষিত। এজন্য বিএনপির আন্দোলনের হুমকিতে সরকার মোটেও বিচলিত নয়। আগের বছর যেভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে এবারও তাই হবে। নতুন কোনো চিন্তা আমাদের মাঝে এখনো আসেনি। তবে পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, মামলা আর পুলিশ নির্ভরতা প্রমাণ করে যে, সরকার ভিতর থেকেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। নৈতিক শক্তি যখন সরকার হারিয়ে ফেলে তখনই পুলিশ আর মামলানির্ভর হয়ে পড়ে সরকার। অতীতের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে বর্তমান পরিস্থিতি আস্তে আস্তে জনগণের হাতে চলে যাচ্ছে। জনতার হাতে গেলে তা কোনো নেতার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। জনগণ রাজপথেই ফায়সালা খুঁজে নেবে।
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ