আজিজুর রহমান রনি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। পবিত্র ধর্মীয় এই উৎসবটি পশু কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হয়। আর এ কারণে বছরের এ সময়টাতে পশু কোরবানি ও মাংস প্রস্তুত করতে প্রয়োজন পড়ে তীক্ষ্ণ শান দেওয়া দা, ছুরি, বটির। তাই এ সময়টাতেই কাঁধে শান দেওয়ার যন্ত্র নিয়ে পেশাজীবীদের দেখা মেলে পথে ঘাটে।
পুরনো প্রযুক্তির সেই যন্ত্র পা দিয়ে প্যাডেল করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শান দিতে হয়। বছরের প্রায় সব সময়ই তাদের দেখা গেলেও কোরবানির ঈদের আগে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কথা হয় এমন একজন শানমিস্ত্রী পঞ্চাশোর্ধ বয়সের আলী মিয়ার সাথে। বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুরে। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি এ কাজটি করছেন।
আলী মিয়া জানান, একসময় কামার সম্প্রদায় কাজটি করতেন। কিন্তু সবার বাড়ির পাশে কামারবাড়ি নেই। তাই ওই সব লোকদের বাড়িতে তিনি যান যাদের আশে পাশে কামারপাড়া কিংবা হাট-বাজার নেই। দা, ছুরি, বটি শান দিতে বছরে একটা সিজন পান। আর তা হলো কোরবানির ঈদ। এ ছাড়া মাঝে মাঝে এক আধটু কাজ হয়। তবে এমন আয় দিয়ে নিজের খরচ চালানো দায় সংসার বহু দূরের কথা।
একটি ছোট কিংবা মাঝারি আকারের ছুরি শান দিলে সর্বোচ্চ ১০ টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া যত বড় দা, ছুরি, বটি শান দেওয়া হোক না কেন প্রতিটির জন্য ২০ টাকা করে নেন তিনি।
বললাম, তাহলে অন্য পেশায় নিযুক্ত হলে তো পারেন। উত্তরে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আলী বলেন, “বাবারে গরিব মানুষ, জমি-জিরাত নাই। চার পোলা তিন মাইয়া। সবাই এখন আলাদা সংসার করে। আমরা দুই বুড়াবুড়ি এখন কোনোরকম খেয়ে বাঁচলেই হলো। আর আয়ের জন্য যহন যে কামের সময় আহে ওইডাই করি।”
“যেমুন ধরো শীতে পিডা বেচি, তরকারি বেচি। গরমে আগে শরবত বেচতাম, পুঁজি নাই। তাই ব্যবসাও করতে পারি না।” কাঁধে থাকা যন্ত্রটির দিকে তাকিয়ে বললাম, ”এটা বানাতে বা কিনতে পয়সা লাগেনি।” আলী বলেন, ”এটা আমার কিনা যন্ত্র না। উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি।