মোর্শেদুল ইসলাম শাজু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যলয়ের দুই নারী শিক্ষকের মধ্যে চুলোচুলি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক একে অপরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এবং শিক্ষা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিতি হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে উপজেলার দড়িচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে মারামারি ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। ইউএনও কাজী শহিদুল ইসলাম তদন্ত করে দোষি শিক্ষকের বিরুদ্বে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে উপস্থিত অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজনকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন।
সহকারি শিক্ষক খাদিজা আক্তার প্রধান শিক্ষক মায়া রানী দেবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, আমি তখন দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিলাম। পাশের ওয়ানের ক্লাসে শিক্ষক না থাকায় বাচ্চারা চেচামেচি করছিল। তখন ওই ক্লাসে গিয়ে ছেলেমেয়েদের শান্ত করার চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় হেড ম্যাডাম (মায়া রানী দেবী) এসে আমার ভিডিও করছেন। তখন আমি এর কারণ জানতে চেয়ে বলি, কখনোও তো আপনি ভিডিও করেন নাই। বলতেই তিনি আমাকে চুল ধরে লাথি মেরে ফেলে দেন। তারপর আমার ওপর উঠে অনবরত কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। আমি তখন চিৎকার করতে থাকলে বাচ্চারা অন্যান্য ম্যাডামকে ডেকে আনলে তারা আমাকে উদ্ধার করেন।
মায়া রানী দেবী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রায়ই শিক্ষকরা দেরী করে স্কুলে আসে। ছাত্ররা ক্লাসে হৈ-চৈ করছিল। আর শিক্ষকরা রুমে বসেছিল। আমি এ অবস্থার ভিডিও করছিলাম। তা দেখে খাদিজা ম্যাডাম আমার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং দেওয়ালের সাথে ধাক্কা দিলে হাত ও মাথায় আঘাত পাই। আমি বার বার আমার মোবাইলটি উদ্ধার করার চেষ্টা করছিলাম শুধু।
এ ঘটনায় অপর দুই সহকারি শিক্ষক মরিয়ম বেগম এবং মনিরা বেগম বলেন, খাদিজা ম্যাডাম পাশের ক্লাসে শিক্ষক না থাকায় ছেলেমেয়েদের হৈচৈ’র ঘটনা থামাতে গিয়েছিল। এমন সময় হেড ম্যাডাম গিয়ে খাদিজা ম্যাডামকে ওই খানে কী করেন কারণ জানতে চেয়েই তার মুখের সামনে গিয়ে ভিডিও করতে থাকেন। খাদিজা ম্যডাম ভিডিও করার কারণ জানতে চাইলে তার তল পেটে লাথি মেরে শুইয়ে ফেলে। তারপর তার ওপরে উঠে মাথার চুল ধরে টানা ও মারতে থাকে।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া দুই ছাত্রীর বাবা আবুল কালাম তার মেয়ের বরাত দিয়ে বলেন, ‘আমার মেয়ে দৌড়ে গিয়ে আমাকে বলে- আব্বু এক ম্যাডাম আরেক ম্যাডামকে মাইরা ফালাইতেছে। তারপর আমি স্কুলে এসে দেখি ইসমাইল সাবের মেয়েকে (খাদিজা আক্তার) ডাক্তার চিকিৎসা করতেছেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাসেম বলেন, ‘হঠাৎ শুনি স্কুলে গ-গোল লাগছে। হেড মাস্টারনী ইসমাইল সাবের মেয়েরে লাথি দিছে আর মারাতাছে।’ দৌড়ে গিয়ে দেখি অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে। মহিলা-মহিলাদের ঘটনায় তো আমরা ধরতে পারি না।’
স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার ও ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি আবু ইসহাক বলেন, ‘ চার-পাঁচ জন ছাত্র দৌড়ে গিয়ে আমাকে জানায়, স্কুলে মারামারি হইতেছে। স্কুলে গিয়ে দেখি প্রধান শিক্ষক মায়া রানী এক রুমে বসা বাকী শিক্ষকরা অন্য রুমে বসা। সেখানে গিয়ে কী হয়েছে তাদের কাছে জানতে চাই। তখন অন্য শিক্ষকরা এবং ছাত্রছাত্রীরা আমাকে জানায়, প্রধান শিক্ষক মায়া রানী খাদিজা ম্যাডামকে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে মারধর করেছে। তখন তাৎক্ষণিক আমি তাদের শান্ত থাকতে বলে ইউএনও স্যারকে ফোনে বিষয়টি অবহিত করি। শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মানও দিনে দিনে অনেক কমে গেছে।
এ ঘটনায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভপতি মালেক আফসারী বলেন, চল্লিশ-পঞ্চাশ জন ছাত্র-ছাত্রী দৌড়ে গিয়ে আমাকে বলে, ম্যাডাম-ম্যাডামরা ঝগড়া লাগছে। ওই ছাত্রদের সাথেই আমি স্কুলে এসে দেখি পরিস্থিতি খুব খারাপ। তখন আমি উপস্থিত ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের ক্লাসে পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে ইউএনও সাহেবকে ঘটনা জানাই।
এ ব্যাপারে ইউএনও কাজী শহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, এক সদস্য ও একজন শিক্ষকের ফোন পেয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের সাথে আলাপ করে পরিস্থিতি শান্ত করি। তারপর অভিযুক্ত শিক্ষকদের সাথেও কথা বলি। এ নিয়ে ডিসি স্যারের সাথে এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথেও কথা বলবো। বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত দোষি শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বিষয়টি শুনেছি। উইএনও সাহেব বিষয়টি তদন্ত করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দেবেন।