মো: মোশাররফ হোসেন মনির, মো: নাজিম উদ্দিনঃ
বাবা আমি মানুষের বাড়ীতে কাম কইরা সংসার চালাই, অনেক কষ্টে ধার দেনা কইরা মাইয়াডা ফাতেমারে (১৯) বিয়ে দেওনের লাইগা একটা ফিরিজ (ফ্রিজ) কিন্না দিছি, কতা আছিল ফিরিজ দিলে নগদ ট্যাহা দেওন লাগতো না কিন্তু বিয়ার দিন সবাই খাওনের পরে জহন আমার মাইয়ার বিয়া পড়াইব তহন পোলার বাপে কয় নগত ৬০হাজার ট্যাহা না দিলে বিয়া হইব না, আগে ট্যাহা পরে বিয়া, ট্যাহা দিতে পাড়ি নাই তাই আমার মাইয়ার বিয়া হয়নাই, উল্টা হ্যারা আমরা সবাইরে মাইর-ধর কইরা গেছে, অশ্রুশিক্ত নয়নে এভাবেই যৌতুকের টাকার জন্য নিজের মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার কথা জানালেন মা আনোয়ারা বেগম।
বুধবার আর্ন্তজাতীকব নারী দিবসের দিন উপজেলার টনকী ইউনিয়নের আন্তপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে নারী দিবসেও নারী নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার টনকী ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের জাকির হোসেন সাত বছর পূর্বে মারা যাওয়া। স্বামীর মৃতুর পর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম অন্যের বাড়ীতে ঝি’র কাজ করে তার সংসার (৩মেয়ে ২ছেলে) চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছুদিন পূর্বে তার বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তারের বিয়ে ঠিক হয় উপজেলার বিষ্ণপুর পূর্ব পাড়া গ্রামের রবি মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়ার সাথে ৮ই মার্চ বুধবার বিবাহের দিন ধার্য হয়। পাত্র পক্ষ বিয়ের যৌতুক হিসেবে নগদ ৬০হাজার টাকা দাবি করলে কনে পক্ষ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে টাকার পরিবর্তে একটি ফ্রিজ দেয়ার কথায় রাজি হয়ে বিয়েতে সম্মত হয় কনের মা আনোয়ারা বেগম। পাত্র পক্ষের কথা মত বিয়ের আগেই ফ্রিজ কিনে বরের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয় ফাতেমার পরিবার। ৮ই মার্চ বুধবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন ফাতেমার বিয়ের যথাযথ আয়োজন সম্পন্ন করে তার পরিবার ও আত্ত্বীয় স্বজনরা। যথাসময়ে বর পক্ষ এলো তাদের খাওয়া দাওয়া হলো। বিয়ে সম্পন্ন করার পূবূ মুহুর্তে বরের বাবা রবি মিয়া পুনরায় আবার ৬০হাজার টাকা যৌতুক দাবী করে তা নিয়ে বিয়ে বাড়ীতে শুরু হয় হইচই। একপর্যায়ে বর পক্ষের লোকজন কনেসহ তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের উপর হামলা চালায় এতে কনে ফাতেমা আক্তার, তার মা আনোয়ারা বেগম, মামা সাইফুল,জালাল, চাচা হিরন মিয়া, আউয়াল, জাহাঙ্গীরসহ ৮/১০জন আহত হয়। পরে বর পক্ষ বিয়ে না করিয়ে চলে যায়। হামলার পর কনে ফাতেমাসহ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করা হয়।
ইউপি সদস্য রহিম মিয়া জানান, যৌতুকের কোন বিষয় নয় কিছু কসমেটিকস নিয়ে দ্বন্দ হওয়ার কারনে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে।
এঘটনায় কনের চাচাত ভাই আমজাদ হোসেন বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও স্থানীয় ইউপি সদস্য আ: রহিম এর মধ্যস্থতায় বিষয়টি মিমাংসা করা হয় বলে জানা যায়।
কনে পক্ষকে ১০হাজার টাকা ক্ষতিপুরন ও তাদের যৌতুক হিসেবে দেয়া ফ্রিজটি ফেরত দিয়ে বিষয়টি রফাদফা করেন ইউপি সদস্য আ: রহিম।
বাঙ্গরা বাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। স্যার (ওসি) রয়েছে তাই এ বিষয়ে আমি আর কিছু জানিনা।
এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোসা: পারভিন আক্তার বলেন বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখছি যৌতুক দাবি করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
মুরাদনগর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেলুল কাদের বিষয়টি নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রযোজনিয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।