ঢাকা ০৪:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ মুরাদনগরের বাখরাবাদ গণহত্যা দিবস

মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

আজ ২৪ মে। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বাখরাবাদ গণহত্যা দিবস।

এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করার জন্য এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রানের দাবি থাকলেও স্বাধীনতার ৪২ বছরেও তা পূরণ হয়নি। এ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদ ১৯৯৬ ও ৯৭ সালে পর পর ২ বছর আলোচনা সভা, চিত্র প্রদর্শনী ও স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্টপ জেনোসাইড প্রদর্শিত হলেও উদ্যোগের অভাবে এখন আর হচ্ছে না। ফলে ভূক্তভোগী পরিবার গুলোর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় রামচন্দ্রপুর বাজার সংলগ্ন হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম বাখরাবাদে নৃশংস গণহত্যা চালায়। প্রায় দেড় শতাধিক হিন্দু নারী পুরুষ পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা শেষে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে লুটপাট করে। পাক হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ২১ জন ব্যক্তিকে পার্শ্ববর্তী দেবিদ্বার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে পরদিন ১৮ জনকে এক সাথে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এদের মধ্যে দক্ষিণ বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ হরেন্দ্রচন্দ্র সাহার ছেলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া হরেকৃষ্ণ সাহা জানান, ৭১’র ২৪মে সোমবার ভোর ৫টায় পাক হানাদার বাহিনী আমাদের গ্রামে প্রবেশ করে হত্যাকান্ড চালায়, হত্যাকান্ড চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। বাড়ী ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাটসহ নারী ধর্ষণ করে। তিনি আরো জানান, তখন সে মেট্রিক পরীক্ষার্থী ছিল। পাক বাহিনীরা তার বাবা হরেন্দ্র চন্দ্র সাহাকে হত্যা করে তাকে দেবিদ্বার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। তিনি আক্ষেপ করে জানান, স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও বাখরাবাদ গণহত্যার স্মৃতি স্বরূপ কোন স্মৃতি সৌধ নির্মান হয়নি। তাছাড়া আমরা ক্ষতিগ্রস্ত শহীদ পরিবারেরা সরকার থেকে এ পর্যন্ত সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। তিনি উক্ত হত্যাকান্ডের বিচার প্রার্থনা করেন। তার সাথে বেঁচে যাওয়া অপর ২জন হলো দক্ষিন বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ গোপাল শীলের ছেলে তারক শীল (তারক মাস্টার) ও শহীদ মনোমোহন সাহার ছেলে ঢাকা ওয়াসায় চাকরিরত দুলাল চন্দ্র সাহা। তারক শীল জানান, তিনি সন্দেশ তৈরী করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছেন।

বাখরাবাদ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সফু মিয়া সরকার জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাযষ্ণ। এ বর্বোরিচিত হত্যাকান্ডের বীভৎস চিত্র প্রত্যক্ষ করে আজো শিহরিত হই। ঝোপ ঝাড়ে আনাচে কানাচে এবং পাশে বয়ে যাওয়া খালে অনেক লাশ পড়ে থাকতে দেখি। বাখরাবাদ গণহত্যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক ট্র্র্যাজেডি।

ট্যাগস

আজ মুরাদনগরের বাখরাবাদ গণহত্যা দিবস

আপডেট সময় ০৭:৩০:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০১৬

মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

আজ ২৪ মে। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বাখরাবাদ গণহত্যা দিবস।

এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করার জন্য এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রানের দাবি থাকলেও স্বাধীনতার ৪২ বছরেও তা পূরণ হয়নি। এ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদ ১৯৯৬ ও ৯৭ সালে পর পর ২ বছর আলোচনা সভা, চিত্র প্রদর্শনী ও স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্টপ জেনোসাইড প্রদর্শিত হলেও উদ্যোগের অভাবে এখন আর হচ্ছে না। ফলে ভূক্তভোগী পরিবার গুলোর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় রামচন্দ্রপুর বাজার সংলগ্ন হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম বাখরাবাদে নৃশংস গণহত্যা চালায়। প্রায় দেড় শতাধিক হিন্দু নারী পুরুষ পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা শেষে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে লুটপাট করে। পাক হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ২১ জন ব্যক্তিকে পার্শ্ববর্তী দেবিদ্বার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে পরদিন ১৮ জনকে এক সাথে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এদের মধ্যে দক্ষিণ বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ হরেন্দ্রচন্দ্র সাহার ছেলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া হরেকৃষ্ণ সাহা জানান, ৭১’র ২৪মে সোমবার ভোর ৫টায় পাক হানাদার বাহিনী আমাদের গ্রামে প্রবেশ করে হত্যাকান্ড চালায়, হত্যাকান্ড চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। বাড়ী ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাটসহ নারী ধর্ষণ করে। তিনি আরো জানান, তখন সে মেট্রিক পরীক্ষার্থী ছিল। পাক বাহিনীরা তার বাবা হরেন্দ্র চন্দ্র সাহাকে হত্যা করে তাকে দেবিদ্বার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। তিনি আক্ষেপ করে জানান, স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও বাখরাবাদ গণহত্যার স্মৃতি স্বরূপ কোন স্মৃতি সৌধ নির্মান হয়নি। তাছাড়া আমরা ক্ষতিগ্রস্ত শহীদ পরিবারেরা সরকার থেকে এ পর্যন্ত সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। তিনি উক্ত হত্যাকান্ডের বিচার প্রার্থনা করেন। তার সাথে বেঁচে যাওয়া অপর ২জন হলো দক্ষিন বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ গোপাল শীলের ছেলে তারক শীল (তারক মাস্টার) ও শহীদ মনোমোহন সাহার ছেলে ঢাকা ওয়াসায় চাকরিরত দুলাল চন্দ্র সাহা। তারক শীল জানান, তিনি সন্দেশ তৈরী করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছেন।

বাখরাবাদ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সফু মিয়া সরকার জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাযষ্ণ। এ বর্বোরিচিত হত্যাকান্ডের বীভৎস চিত্র প্রত্যক্ষ করে আজো শিহরিত হই। ঝোপ ঝাড়ে আনাচে কানাচে এবং পাশে বয়ে যাওয়া খালে অনেক লাশ পড়ে থাকতে দেখি। বাখরাবাদ গণহত্যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক ট্র্র্যাজেডি।