খেলাধূলা ডেস্কঃ
ব্যর্থতায় মিডিয়ার সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হওয়াটা তাঁর কাছে খুব প্রীতিকর অভিজ্ঞতা নয়। তাত্ক্ষণিকভাবে কষ্টও পান লিওনেল মেসি। কিন্তু শেষ বিচারে আর্জেন্টাইন মিডিয়ার অবস্থানকেও অযৌক্তিক বলে মনে হয় না এই ফুটবল জাদুকরের। কেন? সে ব্যাখ্যাই দিয়েছেন সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, ‘আর্জেন্টিনার হারের পর মিডিয়ার সমালোচনা অবশ্যই কষ্টদায়ক। কিন্তু এটাও আপনাকে বুঝতে হবে যে অসহনীয় ব্যথার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তারাও (মিডিয়া) এর বাইরে নয়। আর্জেন্টিনা ফুটবলপাগল জাতি। কাজেই মিডিয়া যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটিকেও অস্বাভাবিক মনে হয় না আমার। আমাদের কাছে তিনবার ফাইনাল খেলাকেও অর্থহীন বলে মনে হয়। কারণ এটাই আর্জেন্টিনা। এখানে রানার্স-আপের কোনো ঠাঁই নেই।’
সে জন্যই ২০১৪-র বিশ্বকাপ ফাইনালের হারে ব্যথা দূর হয়নি এখনো, ‘এটা উন্মুক্ত একটা ক্ষত এবং এটা রয়েই যাবে। আমরা স্বপ্নটা ধরে ফেলার খুব কাছাকাছিই ছিলাম। কিন্তু এটাই ফুটবল। যেখানে সেরা দলও সব সময় জেতে না। আমাদের সেটি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা কেঁদেছি, কেঁদেছে প্রত্যেক আর্জেন্টাইন। এর পরও ব্যথাটা রয়েই গেছে।’ যদিও ব্রাজিল বিশ্বকাপে সবাই নিজেদের সেরাটা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কমতি রাখেননি বলেই দাবি মেসির, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, তবু আর্জেন্টিনার হয়ে কিছুই জেতা হয়নি এখনো। সেই ১৯৮৬-র পর আরেকটি বিশ্বকাপ জেতার যে প্রত্যাশা, তাতে দোষের কিছুই নেই। প্রত্যেক আর্জেন্টাইনের মতো আমিও দেশের জন্য বিশ্বকাপ জেতার চূড়ান্ত আনন্দের স্বাদ পেতে চাই। আমি বলব প্রত্যেক আলবিসেলেস্তে ফুটবলার ২০১৪-তে তাঁর সেরাটা দিয়েছে। এর পরও আমরা জিতিনি।’
জেতেননি, তবে এবার শেষ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জিততে চান। শুধু তাঁরই নয়, এই প্রজন্মের আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের সবারই এটা ‘শেষ সুযোগ’ বলে মনে করেন মেসি, ‘আমার স্বপ্নটা আগের মতোই আছে—ফাইনালে ওঠা এবং ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরা। যদিও অত দূর যাওয়া এবং ফাইনাল খেলাটা সত্যিই খুব কঠিন। যেটার অভিজ্ঞতা ২০১৪-তে আমাদের হয়েছে। আবার সেই অভিজ্ঞতা নিতে চাই এবং সবশেষবারের ফলটা বদলাতে চাই। এবার কাপটা আমরা নিতে চাই। সম্ভবত আমাদের প্রজন্মের ফুটবলারদের বিশ্বকাপ জেতার এটিই শেষ সুযোগ।’ একজন আর্জেন্টাইনের কাছে বিশ্বকাপ ট্রফির মহিমাও বুঝিয়েছেন এই কথায়, ‘পুরো জাতির স্বপ্নপূরণের দায়িত্বটি আমার কাছে মোটেও বোঝা নয়। আপনি যদি আর্জেন্টাইন এবং ফুটবল অনুসারী হয়ে থাকেন, তাহলে চাইবেনই যে আপনার দেশ সর্বোচ্চ পুরস্কারটি জিতুক। এতে ভুল কিছু নেই। আমি বিষয়টিকে এভাবেই দেখি। আমরা সবাই জানি যে বিশ্বকাপ জেতার ব্যাপারটি কতটা চ্যালেঞ্জিং। এর পরও আমরা সবাই এটি চাই। এই ট্রফিটা আর্জেন্টিনার প্রয়োজন।’
ট্রফি জিততে হলে শুরুতেই পার করতে হবে কঠিন গ্রুপের বাধা। যেখানে আর্জেন্টিনার অপেক্ষায় ক্রোয়েশিয়া, নাইজেরিয়া এবং আইসল্যান্ড। মেসি জানালেন তিনি এবং তাঁর দল এই কঠিন একেকটি লড়াইয়ে নিজেদের মেলে ধরতে তৈরি, ‘সেরাদের সেরার টুর্নামেন্টে আপনাকে সেরা দলের মুখোমুখি হতেই হবে। এখানে প্রতিটি প্রতিপক্ষ আপনার জন্য অপ্রিয় প্রশ্ন নিয়ে তৈরি থাকবে। এবং আপনাকেও সব কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে। এটা বিশ্বকাপ। এখানে কোনো কিছুকেই অবধারিত বলে ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র সেরারাই এই আসরে তাঁদের জাতির প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। কাজেই এখানে প্রতিটি ম্যাচই কঠিন। তবে আমরাও পারফরম করার জন্য তৈরি আছি।’ অবশ্য বিশ্বকাপের ফেভারিট বাছতে গিয়ে পুরনো মনোভাবই ব্যক্ত করেছেন তিনি, ‘প্রতিটা বড় ফুটবল জাতিই ফেভারিট হিসেবে আসর শুরু করবে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি যেমন চাইবে ট্রফিটা ধরে রাখতে। স্পেনও শেষ পর্যন্ত যাওয়ার মতো দারুণ এক দল। ব্রাজিল ও পর্তুগাল বাছাই পর্বে ভালো করেছে। ফ্রান্সও তাই।’ যেমন ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের না থাকা নিয়ে বেদনার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন মেসি, ‘ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের না থাকাই প্রমাণ করে যে বিশ্বকাপ কত কঠিন! তবে ইতালিকে ছাড়া বিশ্বকাপ রীতিমতো অকল্পনীয় এক ব্যাপার। ডাচরা ব্রাজিলে সেমিফাইনাল খেলেছিল। ওদের টাইব্রেকারে হারিয়ে আমরা ফাইনালে গিয়েছিলাম। রাশিয়া বিশ্বকাপ আজ্জুরি ও অরেঞ্জ ভক্তদের সত্যিই খুব মিস করবে, যাঁরা কিনা সমর্থকদের উৎসবের রংটাকে আরো বর্ণিল করে তুলত।’ ওই দুই দলের মতো না হলেও বাছাই পর্ব পেরোতে যথেষ্ট ঘাম ঝরাতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকেও। ইকুয়েডরের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মেসির হ্যাটট্রিকেই চূড়ান্ত পর্বের টিকিট কেটেছিল আর্জেন্টিনা। সেই প্রসঙ্গও এসেছে তাঁর কথায়, ‘আমাদের শেষ ম্যাচটা জিততেই হতো এবং শুরুতে আমরা পিছিয়েও ছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই আমাদের পরিকল্পনামতো হয়েছে এবং আমি ওই গোলগুলো করেছি। আমরা আরেকটি বিশ্বকাপে যাওয়ার জন্য কাতর ছিলাম। প্লে-অফের টেনশনে না পড়ে সেই লক্ষ্যটা অর্জিত হওয়ায় আমরা দারুণ খুশিও ছিলাম।’ তবে বিশ্বকাপে যে ট্রফি ছাড়া আর্জেন্টাইনরা তুষ্ট হবেন না, সে কথা তো মেসি বলেই দিয়েছেন! টাইমস অব ইন্ডিয়া