ঢাকা ১২:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখনো ভিসা হয়নি ৫২ হাজার হজ যাত্রীর

ধর্ম ও জীবন ডেস্কঃ
সংকট কাটছে না হজ যাত্রীদের। ভিসা জাটিলতা, ফ্লাইট প্রাপ্তিতে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার আবর্তে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। এখনো ৫২ হাজার হজ যাত্রীর ভিসা হয়নি। সময় আছে দশদিন। সৌদি সরকার জানিয়েছে, ১৭ আগস্টের পর ভিসা  দেবে না তারা। হজের শেষ ফ্লাইট যাবে ২৬ আগস্ট। ই-ভিসার প্রিন্ট নিতে গিয়ে সার্ভার ও যান্ত্রিক ত্রুটিতে আটকা পড়ছেন যাত্রীরা। এ পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল হয়েছে ২৩টি। প্রতিদিন ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে অথবা আন্ডারলোড নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে। এই সংকট এবং ভোগান্তির জন্য হজ এজেন্সি এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় পরস্পরকে দোষারোপ করছে। সাধারণ মুসল্লিরা বলছেন, প্রতিবছর হজ যাত্রীদের দুর্ভোগ চলছে। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধানে কেউ আন্তরিক নন। এ বছর হজ এজেন্সি, মধ্যস্বত্বভোগীর প্রতারণা, হজ অফিসের কর্মকর্তাদের অবহেলা, বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্সের একের পর এক ফ্লাইট বাতিলের সঙ্গে ই-ভিসার সমস্যা যুক্ত হয়েছে।
একটি হজ এজেন্সির কর্ণধার জানালেন, ২৪ জুলাই ফ্লাইট শুরুর পর থেকে গত ১৬ দিনে ৪০ হাজার হজ যাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। আগামী ১৮ দিনে ৮৮ হাজার হজ যাত্রীকে পরিবহন করতে হবে বিমান ও সাউদিয়াকে। মাত্র ১০ দিনে এই সব যাত্রীর ই-ভিসা ও আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করা কতটা সম্ভব হবে তা বলা যাচ্ছে না।
তবে  হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম ইত্তেফাককে বলেন, হজ যাত্রীদের সংকট দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা চলছে। ৫২ হাজার ভিসা আশা করি আগামী দশ দিনে আমরা নিতে পারবো। তবে ই-ভিসার প্রক্রিয়াটি নিয়ে জটিলতা চলছে। আমাদের হজ এজেন্সিগুলো অনলাইন থেকে এক বারে প্রিন্ট না হলে বারবার চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন।
হাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার ইত্তেফাককে জানান, এপর্যন্ত ই-ভিসা জটিলতা এবং ফ্লাইট বাতিলের কারণে ১৭ হাজার ৭২৬ হজ যাত্রী সৌদি আরব যেতে পারেননি। তারা পরবর্তী ফ্লাইটে গেলেও মাঝে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ফ্লাইট যাত্রী স্বল্পতায় আন্ডারলোড যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বিমানের ২০টি এবং সাউদিয়ার ৩টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। কেউ কেউ ধারণা করেন এই বাতিল জনিত কারণে শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে হয়তো ২০ হাজার হজ যাত্রীর পরিবহন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি হলেও তাদের সৌদি আরবে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা যাবে।  বাহার জানান, গতকাল পর্যন্ত ৭৫ হাজার হজ ভিসা হয়েছে। শুক্রবারসহ প্রতিদিনই ভিসা ইস্যু করছে সৌদি দূতাবাস। আগামী দশ দিনে বাকি ৫২ হাজার ভিসা হতে পারে।
এদিকে সৌদি সরকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আকস্মিকভাবে গত ২৭ জুলাই জানায় যে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের বাংলাদেশি হজ যাত্রী প্রতি অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়েল দিতে হবে। অন্যথায় তাদের হজ করতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সৌদি সরকারের কাছে এই ২০০০ রিয়াল মওকুফের আবেদন করা হলে তারা নাকচ করে দেয়। বাংলাদেশের ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ যাত্রীর মধ্যে গত দুই বছর হজ করেছেন এমন হজ যাত্রীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬শ জন। এসব হজ যাত্রীকে হজের ভিসা পেতে হলে এক রিয়েল ২২-২৩ টাকা হিসেবে দুই হাজার রিয়েল বাবদ ৪৪ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। মোট ৫ হাজার ৬শ জনের জন্য পরিশোধ করতে হবে কমবেশি ২৫ কোটি টাকা।
ধর্ম সচিব মো. আবদুল জলিল জানান, অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়েল পরিশোধের বিষয়টি তাদের মোটেই জানা ছিল না। আকস্মিক সৌদি আরবের রাজকীয় সিদ্ধান্তে এ অর্থ দাবি করা হয়। তবে এখনও কেউ অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়নি।
ভিসা ছাড়াই সৌদিতে দুই বাংলাদেশি হজ যাত্রী
ভিসা ছাড়াই হজ করার জন্য সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন এমন দুই বাংলাদেশিকে শনাক্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। তাদের প্রায় ১৬ ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ ভিসার ব্যবস্থা করে টার্মিনাল ছাড়ার সুযোগ দেয়। এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে বিমানবন্দরে বাংলাদেশ হজ মিশন কর্তৃপক্ষকে। বাংলাদেশ হজ মিশন জেদ্দা বিমানবন্দরে কর্মরত আনোয়ার হোসেন জানান, গত ২৭ জুলাই ‘শাবান এয়ার ইন্টারন্যাশনালের’ (লাইসেন্স নম্বর ১৪৫৭) হজ যাত্রী নাসিমা আক্তার (পিআইডি নম্বর-১৪৫৭০৭২) একটি ফ্লাইটে জেদ্দার হজ টার্মিনালে অবতরণ করেন। একই দিন আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের (লাইসেন্স নম্বর ০১৮৪) মালিক আমিনুল হকও ভিসা ছাড়া সৌদি এয়ারলাইন্সের (এসভি ৮০৪) একটি ফ্লাইটে সৌদি আরবে আসেন।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

এখনো ভিসা হয়নি ৫২ হাজার হজ যাত্রীর

আপডেট সময় ০৩:৩৩:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অগাস্ট ২০১৭
ধর্ম ও জীবন ডেস্কঃ
সংকট কাটছে না হজ যাত্রীদের। ভিসা জাটিলতা, ফ্লাইট প্রাপ্তিতে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার আবর্তে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। এখনো ৫২ হাজার হজ যাত্রীর ভিসা হয়নি। সময় আছে দশদিন। সৌদি সরকার জানিয়েছে, ১৭ আগস্টের পর ভিসা  দেবে না তারা। হজের শেষ ফ্লাইট যাবে ২৬ আগস্ট। ই-ভিসার প্রিন্ট নিতে গিয়ে সার্ভার ও যান্ত্রিক ত্রুটিতে আটকা পড়ছেন যাত্রীরা। এ পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল হয়েছে ২৩টি। প্রতিদিন ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে অথবা আন্ডারলোড নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে। এই সংকট এবং ভোগান্তির জন্য হজ এজেন্সি এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় পরস্পরকে দোষারোপ করছে। সাধারণ মুসল্লিরা বলছেন, প্রতিবছর হজ যাত্রীদের দুর্ভোগ চলছে। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধানে কেউ আন্তরিক নন। এ বছর হজ এজেন্সি, মধ্যস্বত্বভোগীর প্রতারণা, হজ অফিসের কর্মকর্তাদের অবহেলা, বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্সের একের পর এক ফ্লাইট বাতিলের সঙ্গে ই-ভিসার সমস্যা যুক্ত হয়েছে।
একটি হজ এজেন্সির কর্ণধার জানালেন, ২৪ জুলাই ফ্লাইট শুরুর পর থেকে গত ১৬ দিনে ৪০ হাজার হজ যাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। আগামী ১৮ দিনে ৮৮ হাজার হজ যাত্রীকে পরিবহন করতে হবে বিমান ও সাউদিয়াকে। মাত্র ১০ দিনে এই সব যাত্রীর ই-ভিসা ও আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করা কতটা সম্ভব হবে তা বলা যাচ্ছে না।
তবে  হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম ইত্তেফাককে বলেন, হজ যাত্রীদের সংকট দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা চলছে। ৫২ হাজার ভিসা আশা করি আগামী দশ দিনে আমরা নিতে পারবো। তবে ই-ভিসার প্রক্রিয়াটি নিয়ে জটিলতা চলছে। আমাদের হজ এজেন্সিগুলো অনলাইন থেকে এক বারে প্রিন্ট না হলে বারবার চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন।
হাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার ইত্তেফাককে জানান, এপর্যন্ত ই-ভিসা জটিলতা এবং ফ্লাইট বাতিলের কারণে ১৭ হাজার ৭২৬ হজ যাত্রী সৌদি আরব যেতে পারেননি। তারা পরবর্তী ফ্লাইটে গেলেও মাঝে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ফ্লাইট যাত্রী স্বল্পতায় আন্ডারলোড যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বিমানের ২০টি এবং সাউদিয়ার ৩টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। কেউ কেউ ধারণা করেন এই বাতিল জনিত কারণে শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে হয়তো ২০ হাজার হজ যাত্রীর পরিবহন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি হলেও তাদের সৌদি আরবে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা যাবে।  বাহার জানান, গতকাল পর্যন্ত ৭৫ হাজার হজ ভিসা হয়েছে। শুক্রবারসহ প্রতিদিনই ভিসা ইস্যু করছে সৌদি দূতাবাস। আগামী দশ দিনে বাকি ৫২ হাজার ভিসা হতে পারে।
এদিকে সৌদি সরকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আকস্মিকভাবে গত ২৭ জুলাই জানায় যে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের বাংলাদেশি হজ যাত্রী প্রতি অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়েল দিতে হবে। অন্যথায় তাদের হজ করতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সৌদি সরকারের কাছে এই ২০০০ রিয়াল মওকুফের আবেদন করা হলে তারা নাকচ করে দেয়। বাংলাদেশের ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ যাত্রীর মধ্যে গত দুই বছর হজ করেছেন এমন হজ যাত্রীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬শ জন। এসব হজ যাত্রীকে হজের ভিসা পেতে হলে এক রিয়েল ২২-২৩ টাকা হিসেবে দুই হাজার রিয়েল বাবদ ৪৪ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। মোট ৫ হাজার ৬শ জনের জন্য পরিশোধ করতে হবে কমবেশি ২৫ কোটি টাকা।
ধর্ম সচিব মো. আবদুল জলিল জানান, অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়েল পরিশোধের বিষয়টি তাদের মোটেই জানা ছিল না। আকস্মিক সৌদি আরবের রাজকীয় সিদ্ধান্তে এ অর্থ দাবি করা হয়। তবে এখনও কেউ অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়নি।
ভিসা ছাড়াই সৌদিতে দুই বাংলাদেশি হজ যাত্রী
ভিসা ছাড়াই হজ করার জন্য সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন এমন দুই বাংলাদেশিকে শনাক্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। তাদের প্রায় ১৬ ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ ভিসার ব্যবস্থা করে টার্মিনাল ছাড়ার সুযোগ দেয়। এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে বিমানবন্দরে বাংলাদেশ হজ মিশন কর্তৃপক্ষকে। বাংলাদেশ হজ মিশন জেদ্দা বিমানবন্দরে কর্মরত আনোয়ার হোসেন জানান, গত ২৭ জুলাই ‘শাবান এয়ার ইন্টারন্যাশনালের’ (লাইসেন্স নম্বর ১৪৫৭) হজ যাত্রী নাসিমা আক্তার (পিআইডি নম্বর-১৪৫৭০৭২) একটি ফ্লাইটে জেদ্দার হজ টার্মিনালে অবতরণ করেন। একই দিন আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের (লাইসেন্স নম্বর ০১৮৪) মালিক আমিনুল হকও ভিসা ছাড়া সৌদি এয়ারলাইন্সের (এসভি ৮০৪) একটি ফ্লাইটে সৌদি আরবে আসেন।