ঢাকা ০৩:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমকে আনোয়ারের মৃতুতে শোকাহত তিতাস-হোমনা-মেঘনার নেতাকর্মীরা

নাজমুল করিম ফারুক, তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

হঠাৎ নিভে গেল আলো; হারিয়ে গেলেন এমকে আনোয়ার। সোমবার দিবাগত রাত ১টার কিছু পরে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। রাতের গভীরের নির্জনতা ভেঙ্গে একে একে বেঁজে উঠছে মোবাইল ফোন। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এমকে আনোয়ার আর নেই।

ভোরের আলোর সাথে পাল্লা দিয়ে নেতাকর্মীরা ছুটে চলছে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাড়িতে। স্যারের মরদেহ একবার দেখাবে বলে; কিছু নেতাকর্মী ঢাকায় গেলেও কুমিল্লার তিতাস-হোমনা-মেঘনার বিএনপির নেতাকর্মীসহ এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা। এ হতাশা একজন নেতাকে হারানো হতাশা। তাই শোকে কাতর তিন উপজেলার মানুষ।

এমকে আনোয়ার। যার পুরো নাম মোহাম্মদ খোরশেদ আনোয়ার। ১৯৩৩ সালের ১ জানুয়ারি তাৎকালীন কুমিল্লার হোমনা উপজেলার ওপারচর গ্রামে তার জন্ম। ১৯৪৮ সালে লেটার মার্কসহ মেট্রিকুলেশন, ১৯৫০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএসসি (সম্মান) এবং ১৯৫৬ সালে পরিসংখ্যান বিষয়ে এমএসসি পাশ করেন। সফলতার মধ্য দিয়ে শিক্ষা জীবন শেষে ১৯৫৩ সালে তৎকালীন সিএসপি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি। ৩৪ বছরের পেশাগত জীবনে (১৯৫৬-১৯৯০) তিনি ফরিদপুর ও ঢাকার ডেপুটি কমিশনার, জুটমিল কর্পোরেশন সমিতি সভাপতি, টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ বিমানের সভাপতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তিনি মন্ত্রীপরিষদ সচিবও ছিলেন। এমকে আনোয়ার ১৯৭১ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এমকে আনোয়ার ১৯৫৬ সালে মানিকগঞ্জের আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের কন্যা মাহমুদা আক্তারকে বিয়ে করেন। বর্তমানে স্ত্রী ছাড়াও তার পরিবারের দুই ছেলে মাহমুদ আনোয়ার কায়জার ও মাসুদ আনোয়ার এবং এক মেয়ে খাদিজা আনোয়ার রয়েছে।

এমকে আনোয়ার ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা কেবিনেট সচিবের দায়িত্ব থাকা অবস্থায় অবসরে যান। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। এর পর বিভিন্ন সময়ে পাঁচবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দুবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি দলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক প্রতিকূলতার মাঝে এই নেতা অনেক দিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। সোমবার রাতে ৮৫ বছরের ইতি টেনে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জানাজা শেষে তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে। মঙ্গলবার বাদ আসর হোমনার উপজেলা পরিষদ মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে। এর আগে একই দিন বাদ জোহর তিতাসের গাজীপুর খান হাইস্কুল এন্ড কলেজে মাঠে আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে তার মৃত্যুতে কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আমির হোসেন ভূঁইয়া, আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী, সাধারণ সম্পাদক মহসিন ভূঁইয়া, উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি ভূঁইয়া, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুল ইসলাম সোহেল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সামিয়া সুলতানা শিলা, জাতীয়পার্টির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোশারফ হোসেনসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ গভীর শোক প্রকাশ করেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ওসি’র মত বিনিময়

এমকে আনোয়ারের মৃতুতে শোকাহত তিতাস-হোমনা-মেঘনার নেতাকর্মীরা

আপডেট সময় ০২:৫৯:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৭
নাজমুল করিম ফারুক, তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

হঠাৎ নিভে গেল আলো; হারিয়ে গেলেন এমকে আনোয়ার। সোমবার দিবাগত রাত ১টার কিছু পরে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। রাতের গভীরের নির্জনতা ভেঙ্গে একে একে বেঁজে উঠছে মোবাইল ফোন। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এমকে আনোয়ার আর নেই।

ভোরের আলোর সাথে পাল্লা দিয়ে নেতাকর্মীরা ছুটে চলছে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাড়িতে। স্যারের মরদেহ একবার দেখাবে বলে; কিছু নেতাকর্মী ঢাকায় গেলেও কুমিল্লার তিতাস-হোমনা-মেঘনার বিএনপির নেতাকর্মীসহ এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা। এ হতাশা একজন নেতাকে হারানো হতাশা। তাই শোকে কাতর তিন উপজেলার মানুষ।

এমকে আনোয়ার। যার পুরো নাম মোহাম্মদ খোরশেদ আনোয়ার। ১৯৩৩ সালের ১ জানুয়ারি তাৎকালীন কুমিল্লার হোমনা উপজেলার ওপারচর গ্রামে তার জন্ম। ১৯৪৮ সালে লেটার মার্কসহ মেট্রিকুলেশন, ১৯৫০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএসসি (সম্মান) এবং ১৯৫৬ সালে পরিসংখ্যান বিষয়ে এমএসসি পাশ করেন। সফলতার মধ্য দিয়ে শিক্ষা জীবন শেষে ১৯৫৩ সালে তৎকালীন সিএসপি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি। ৩৪ বছরের পেশাগত জীবনে (১৯৫৬-১৯৯০) তিনি ফরিদপুর ও ঢাকার ডেপুটি কমিশনার, জুটমিল কর্পোরেশন সমিতি সভাপতি, টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ বিমানের সভাপতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তিনি মন্ত্রীপরিষদ সচিবও ছিলেন। এমকে আনোয়ার ১৯৭১ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এমকে আনোয়ার ১৯৫৬ সালে মানিকগঞ্জের আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের কন্যা মাহমুদা আক্তারকে বিয়ে করেন। বর্তমানে স্ত্রী ছাড়াও তার পরিবারের দুই ছেলে মাহমুদ আনোয়ার কায়জার ও মাসুদ আনোয়ার এবং এক মেয়ে খাদিজা আনোয়ার রয়েছে।

এমকে আনোয়ার ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা কেবিনেট সচিবের দায়িত্ব থাকা অবস্থায় অবসরে যান। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। এর পর বিভিন্ন সময়ে পাঁচবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দুবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি দলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক প্রতিকূলতার মাঝে এই নেতা অনেক দিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। সোমবার রাতে ৮৫ বছরের ইতি টেনে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জানাজা শেষে তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে। মঙ্গলবার বাদ আসর হোমনার উপজেলা পরিষদ মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে। এর আগে একই দিন বাদ জোহর তিতাসের গাজীপুর খান হাইস্কুল এন্ড কলেজে মাঠে আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে তার মৃত্যুতে কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আমির হোসেন ভূঁইয়া, আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী, সাধারণ সম্পাদক মহসিন ভূঁইয়া, উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি ভূঁইয়া, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুল ইসলাম সোহেল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সামিয়া সুলতানা শিলা, জাতীয়পার্টির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোশারফ হোসেনসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ গভীর শোক প্রকাশ করেন।