ঢাকা ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের শতাধিক খেলাধুলা

মো. লুত্ফুর রহমানঃ
দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা জেলার গ্রামীণ ঐতিহ্যের শতাধিক খেলাধুলা। বর্তমানে অনেকটা রূপকথার গল্পের মতোই শিশু-কিশোররা শুনছে বিভিন্ন খেলার কথা। মাঠ কমে যাওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়ায় এখন অধিকাংশ শিশু-কিশোর-তরুণ ও যুবকদের সময় কাটে ফেসবুকে চ্যাটিং, ভিডিও গেম, টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা দেখে।

 

গ্রামীণ খেলাধুলার বিভিন্ন আসরের কথা এখন প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। মজার খেলা মোরগ লড়াই, কাবাডি, ষাঁড়ের লড়াই, হাড়িভাঙা, লুকোচুরি, রেডিং, ঢাংগুটি, গাছন-গাদন খেলা এখন শুধু স্বপ্নের অতীত। বর্তমান ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার জনপ্রিয়তার নীচে চাপা পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এ খেলাগুলো। অথচ এক যুগ আগেও এসব খেলার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বি। তিন পায়ে দৌড়, কুতকুত, জুতা চোর, রুটি তাওয়া, এলন্ডি লন্ডন, বৌমাছি, পলানটুক, সুঁই-সুতা, দড়ি, সাতচারা, ধাপ্পা, ছোঁয়াছুঁয়ি, অলডুবানি, চেয়ার সিটিং, দাইড়াবান্ধা, চোর-পুলিশ, কিলোয়ার, ওপানটু বাইসকোপ, ডান্ডাগুটি, সাঁতার বাইস, সাত পাতা, বোমপাইট, রস-কস, গানের কলি, পাশা, গাউচ্ছারে ভাই গাউচ্ছা, বস্তা দৌড়, অংক দৌড়, বিস্কুট দৌড়, লৌহ-বর্ষা নিক্ষেপ, হাসরে হাস, চার ষোল গুটি, ঘোরগাট্টি, জামাই-বৌ, উচ্চ ফাল (হাইজাম্প), দীর্ঘ ফাল (লং জাম্প), চিতল খেলা, পুতুল খেলা, মার্বেল খেলা, লাটিম খেলা, মুলা খেলা, বিস্কুট খেলা, চামুচ খেলা, বাঘ বকরি খেলা, গোস্ত খেলা, চাক্কি খেলা, বালিস খেলা গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ হলেও এসব খেলা এখন অনেকটা বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী রুমালচোর, ঘুড়ি উড়ানো, ছি-বুড়ি, টিলু এক্সপ্রেস, বিউকুইক, বরফ-পানি, কাকজোড়া, জেলে মাছ, বুড়ি-বৌ-বসন্তী, নাম পাতাপাতি, চু-কিিকত্, কুমীর ডাঙ্গা, পিট্টু, চিকে বা লবণ কোট, নুন-গাদি, সাতচিপ্পু, লালাঠি, হাপিঙ্গকেস, বাঘবন্দি, ব্যাগাডুলি, বালিশ-যুদ্ধ, রশি টানা, তৈলাক্ত বাঁশে উঠা, ঘোর-ঘোর স্ট্যাচু, টেলিফোন খেলা, কালারম্যান, ফ্রিজবী, ফুল-ফল-নাম-দেশ, চোর-পুলিশ-ডাকাত-বাবু, স্ক্র্যাবল, সার্কাস, গজ-গিজা, খোখো, কী রং কী রং, এলাডিং বেলাডিং, পা ডিঙ্গাডিঙ্গি, যাত্রাবালা, রাম শ্যাম যদু মধু, ইকিড়মিকিড় ও আইস বাইস খেলা এখন এ যুগের ছেলে-মেয়েদের কাছে অজানা।

 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের হিসেব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মেহেদী রহমান জানায়, সে ছোটবেলা থেকে ফুটবল আর ক্রিকেট এ দুটো খেলারই প্রচলন বেশি দেখে আসছে। তাই অন্য খেলায় তার আগ্রহ কম। কানামাছি, হা-ডু-ডু, বৌছি, লাঠিখেলার নাম শুনেছে। কিন্তু খেলার নিয়ম বা কৌশল জানা নেই।

 

কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, এখন আর আগের মতো খেলাধুলার পরিবেশ নেই। এছাড়া এ যুগের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া নিয়েই বেশির ভাগ সময়ে ব্যস্ত থাকে। যতটুকু অবসর পায় টিভিতে কার্টুন, ক্রিকেট আর ফুটবল খেলা দেখেই সময় কাটায়। অনেক খেলা এখন এ যুগের ছেলে-মেয়েদের কাছে একেবারেই অজানা। স্কুল কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসরেও বিলুপ্ত প্রায় এ খেলার প্রচলন নেই।
ট্যাগস

মুরাদনগরে ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে কিশোর নিহত

কুমিল্লায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের শতাধিক খেলাধুলা

আপডেট সময় ০১:১৫:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬
মো. লুত্ফুর রহমানঃ
দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা জেলার গ্রামীণ ঐতিহ্যের শতাধিক খেলাধুলা। বর্তমানে অনেকটা রূপকথার গল্পের মতোই শিশু-কিশোররা শুনছে বিভিন্ন খেলার কথা। মাঠ কমে যাওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়ায় এখন অধিকাংশ শিশু-কিশোর-তরুণ ও যুবকদের সময় কাটে ফেসবুকে চ্যাটিং, ভিডিও গেম, টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা দেখে।

 

গ্রামীণ খেলাধুলার বিভিন্ন আসরের কথা এখন প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। মজার খেলা মোরগ লড়াই, কাবাডি, ষাঁড়ের লড়াই, হাড়িভাঙা, লুকোচুরি, রেডিং, ঢাংগুটি, গাছন-গাদন খেলা এখন শুধু স্বপ্নের অতীত। বর্তমান ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার জনপ্রিয়তার নীচে চাপা পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এ খেলাগুলো। অথচ এক যুগ আগেও এসব খেলার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বি। তিন পায়ে দৌড়, কুতকুত, জুতা চোর, রুটি তাওয়া, এলন্ডি লন্ডন, বৌমাছি, পলানটুক, সুঁই-সুতা, দড়ি, সাতচারা, ধাপ্পা, ছোঁয়াছুঁয়ি, অলডুবানি, চেয়ার সিটিং, দাইড়াবান্ধা, চোর-পুলিশ, কিলোয়ার, ওপানটু বাইসকোপ, ডান্ডাগুটি, সাঁতার বাইস, সাত পাতা, বোমপাইট, রস-কস, গানের কলি, পাশা, গাউচ্ছারে ভাই গাউচ্ছা, বস্তা দৌড়, অংক দৌড়, বিস্কুট দৌড়, লৌহ-বর্ষা নিক্ষেপ, হাসরে হাস, চার ষোল গুটি, ঘোরগাট্টি, জামাই-বৌ, উচ্চ ফাল (হাইজাম্প), দীর্ঘ ফাল (লং জাম্প), চিতল খেলা, পুতুল খেলা, মার্বেল খেলা, লাটিম খেলা, মুলা খেলা, বিস্কুট খেলা, চামুচ খেলা, বাঘ বকরি খেলা, গোস্ত খেলা, চাক্কি খেলা, বালিস খেলা গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ হলেও এসব খেলা এখন অনেকটা বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী রুমালচোর, ঘুড়ি উড়ানো, ছি-বুড়ি, টিলু এক্সপ্রেস, বিউকুইক, বরফ-পানি, কাকজোড়া, জেলে মাছ, বুড়ি-বৌ-বসন্তী, নাম পাতাপাতি, চু-কিিকত্, কুমীর ডাঙ্গা, পিট্টু, চিকে বা লবণ কোট, নুন-গাদি, সাতচিপ্পু, লালাঠি, হাপিঙ্গকেস, বাঘবন্দি, ব্যাগাডুলি, বালিশ-যুদ্ধ, রশি টানা, তৈলাক্ত বাঁশে উঠা, ঘোর-ঘোর স্ট্যাচু, টেলিফোন খেলা, কালারম্যান, ফ্রিজবী, ফুল-ফল-নাম-দেশ, চোর-পুলিশ-ডাকাত-বাবু, স্ক্র্যাবল, সার্কাস, গজ-গিজা, খোখো, কী রং কী রং, এলাডিং বেলাডিং, পা ডিঙ্গাডিঙ্গি, যাত্রাবালা, রাম শ্যাম যদু মধু, ইকিড়মিকিড় ও আইস বাইস খেলা এখন এ যুগের ছেলে-মেয়েদের কাছে অজানা।

 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের হিসেব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মেহেদী রহমান জানায়, সে ছোটবেলা থেকে ফুটবল আর ক্রিকেট এ দুটো খেলারই প্রচলন বেশি দেখে আসছে। তাই অন্য খেলায় তার আগ্রহ কম। কানামাছি, হা-ডু-ডু, বৌছি, লাঠিখেলার নাম শুনেছে। কিন্তু খেলার নিয়ম বা কৌশল জানা নেই।

 

কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, এখন আর আগের মতো খেলাধুলার পরিবেশ নেই। এছাড়া এ যুগের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া নিয়েই বেশির ভাগ সময়ে ব্যস্ত থাকে। যতটুকু অবসর পায় টিভিতে কার্টুন, ক্রিকেট আর ফুটবল খেলা দেখেই সময় কাটায়। অনেক খেলা এখন এ যুগের ছেলে-মেয়েদের কাছে একেবারেই অজানা। স্কুল কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসরেও বিলুপ্ত প্রায় এ খেলার প্রচলন নেই।