শাহীন আলম, দেবিদ্বাের (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লা দেবিদ্বারে বেহাল সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন ও পথচারী। এসব কারণে দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে দুর্ঘটনা, হতাহত হচ্ছে পথচারী ও যাত্রীরা। রাস্তার মাঝেই অকেজো হয়ে পড়ে থাকে ট্রাক, বাস, নসিমনসহ বিভিন্ন যানবাহন। কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের সফুরা থেকে কোম্পানীগঞ্জ গোমতী ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কি:মি রাস্তা যেন ভোগান্তি ও দুর্ভোগের নাম।
নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে দায়সারা ভাবে সংস্কারের বছর না যেতেই সড়কগুলো খানাখন্দে ভরে যায়। বৃষ্টির পানিতে গর্তগুলো জনদুর্ভোগ বাড়িয়েছে দ্বিগুণ। এ সড়কে দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, হেঁটে চলাও দায়। দেবিদ্বার পৌরসভার ভিরাল্লা, বারেরা, নিউমার্কেট বাসস্ট্যান্ড, রেয়াজউদ্দিন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, দেবিদ্বার থানা সংলগ্ন ও মহিলা কলেজ হয়ে ভিংলাবাড়ি মির্জানগর পর্যন্ত এখন মরণফাঁদ।
স্থানীয়দের অভিযোগ কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের এখন করুণদশা। নিম্নমানের কাজ ও সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক নির্মাণ বা মেরামতের কোনো উদ্যোগও দৃশ্যমান নয়। খানাখন্দে ভরা এসব রাস্তায় এখন যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে আছে তীব্র যানজট। এসব রাস্তায় চলাচলকারীদের ভোগান্তির শেষ নেই।
গত কয়েকদিনে এ সড়কে আশংকাজনক ভাবে বেড়েছে দুর্ঘটনা, এতে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহতসহ আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক যাত্রী ও পথচারী। চলতি মাসের ১০ সেপ্টেম্বর কালিকাপুরে একটি যাত্রীবাহী সুগন্ধা বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি গাছে আটকে যায়। অপরদিকে ১১ সেপ্টেম্বর উপজেলার ভিরাল্লা স্টেশনে পর পর দুইটি ট্রাক উল্টে যায় এতে প্রায় ৩ ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর ধরে সওজের রাস্তা সংস্কার, মেরামত ও জোড়াতালির কাজ চললেও নেই কোনো টেকসই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও উদ্যোগ।
বাণিজ্যিক এলাকা দেবিদ্বার পৌর অংশের কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে সবসময় থাকে কাঁদায় জলে ভরা। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও পৌরসভা কর্তৃক কাঁচা বাজারের ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের দুই পাশেই বসছে কাঁচা বাজার এমনকি সড়কের উপরের অংশও দখলে নেয় দোকানীরা। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতে দু’একবার সাজা হলেও থামানো যাচ্ছে না সড়কে বসা ছোট ছোট বিক্রেতাদের।
নিউমার্কেটের পূর্বপাশের যাত্রী ছাউনির সামনের অংশে পঁচা ময়লা-আবর্জনা স্তুপের দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে চলে পথচারীদের। পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সারা বছরেই লেগে থাকে ময়লা আবর্জনা ও পানি। দেখলে মনে হয় যেন একটি মাটির রাস্তা, পাকা সড়কের কোন অস্তিত্বই নেই। সড়কের বড় বড় গর্তগুলো অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। উপজেলা পরিষদ, এসএ সরকারি কলেজ, সরকারি হসপিটালসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয় এ সড়ক দিয়েই। কাঁদা পানির মধ্য দিয়েই পথচারী, শিক্ষার্থীরা এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে দেবিদ্বার রেয়াজউদ্দিন মডেল স্কুলের প্রধান ফটকের সামনের অংশটি। বেশির ভাগ স্থানেই কার্পেটিং উঠে গেছে। আবার কোথাও কোথায়ও ইট উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। শতাধিক খানাখন্দে ভরা এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে অসংখ্য যানবাহন, মানুষ ও শিক্ষার্থী।
দেবিদ্বার পৌরসভার এলাকার ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, কুমিল্লা-সিলেট গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির অসংখ্য জায়গা খানাখন্দে ভরা। বাস, রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা যা দিয়েই চলাফেরা করি না কেন সবই গর্তে পড়ে যায়। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘনার অশঙ্কা থাকে। আর সামান্য বৃষ্টিতেই কাঁদা আর পানি মিলে একাকার হয়ে যায়। এতে বোঝার উপায় থাকে না কোথায় খানাখন্দ আর কোথায় সমতল।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুদ্দিন জানান, দেবিদ্বার অঞ্চলের সড়কটি খুব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সংস্কারের জন্য এখনও বরাদ্দ পায়নি তবে আলোচনা চলছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করি।