ঢাকা ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়ার ৩২ মামলার ২১টিতে চার্জশিট

জাতীয় ডেস্কঃ
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামে এ পর্যন্ত দুর্নীতি, নাশকতা, মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ৩২টি মামলা চলছে। ইতিমধ্যে তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয়া হয়েছে ২১ মামলায়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। আসামিকে পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর আদালত সাফাই সাক্ষ্য গ্রহন করবে। পরে যুক্তি-তর্ক শেষে রায় ঘোষণা। মামলাগুলোর কোনটি চলছে দ্রুতগতিতে। কোনটির গতি মন্থর। খালেদা জিয়াকে প্রায় প্রতি সপ্তাহে আদালতে যেতে হচ্ছে। কোন কোন সপ্তাহে দুই বারও ডাক পড়ছে হাজিরার।
কয়েকদিন আগে বিএনপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাটি ঢাকা-৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালত থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ৬০ দিনের মধ্যে মামলার বিচারকাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময়সীমাকে বিএনপির ওপর নতুন চাপ বলে কেউ কেউ মনে করলেও দলটির নেতা ও আইনজীবীরা চাপ মনে করছেন না।
এই প্রেক্ষাপটে মামলা ও সম্ভাব্য রায় নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের আগ বাড়িয়ে দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতিতে বিরক্ত বিএনপির হাইকমান্ড। রায়ে কি হবে বা রায়ের পরে কি করা হবে তা নিয়ে নেতাদের অতিরঞ্জিত কথা-বার্তা বলতে নিষেধ করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এ প্রসঙ্গে আর কথা বলছেন না নেতারা। সমপ্রতি তিনি কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাথে বৈঠকে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলাই রাজনৈতিক এবং তা হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এসব মামলা করা হয়েছে। এ নিয়ে আমি মোটেই চিন্তিত নই। আমি ন্যায়বিচার আশা করি। নিরপেক্ষ বিচার হলে এইসব মামলায় কিছু হবে না।’ বেগম জিয়ার সঙ্গে সমপ্রতি কয়েকজন বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবী সাক্ষাত্ করতে গেলে তাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনার নামে ১৫টি মামলা ছিল। সব মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামে থাকা সাড়ে সাত হাজার মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ আমার নামে ওয়ান ইলেভেনের সময়ে করা মিথ্যা মামলার একটিও সরকার প্রত্যাহার না করে চালিয়ে যাচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছে। মামলায় যদি ষড়যন্ত্র করে অন্যায্য সাজা দেওয়া হয় তবে তা করেও আমাকে টলানো যাবে না। সেই রায় মানবে না দেশের জনগন।
বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মামলাগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই চালিয়ে নেবেন তারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, মামলায় রায় নিয়ে দলের চেয়েও বেশি চিন্তা সরকারের। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে মামলাগুলোর তেমন ভিত্তি ও আইনি জোর নেই। মামলার রায় নিয়ে আমরা চিন্তা করি না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক। তাকে জেলে রাখার ঝুঁকি সরকার নেবে বলে মনে হয় না। আমরা আইনের পথেই তার মামলাগুলো মোকাবিলা করব।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার নানা কারণে ভীত। আর এই ভয় তাড়াতে চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার বা তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। আইনি মোকাবিলা চলছে, প্রয়োজনে পাশাপাশি রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এবং আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ম্যাডামের বিরুদ্ধে সব মামলাই রাজনৈতিক। কোন মামলারই আইনগত ভিত্তি নেই। তারপরও সরকার আদালতকে প্রভাবিত করে যদি অন্যায়ভাবে সাজা দেয় তাহলে দেশের মানুষ তা গ্রহন করবেন না। মানুষ ফুসে উঠবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়ার নামে এখন ৩২টি মামলা চলছে। তার মধ্যে ২১টিতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। সঠিক বিচার হলে এসব মামলার একটিও টিকবে না।
৩২ মামলার মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতির অভিযোগে করা। বাকিগুলো সহিংসতা, হত্যা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা। দুর্নীতির পাঁচ মামলাই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়ের করেছিল। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলা সচল রয়েছে।  হত্যা ও নাশকতার মামলা চলছে ১৪ টি। রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা ১১ টি।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

খালেদা জিয়ার ৩২ মামলার ২১টিতে চার্জশিট

আপডেট সময় ০২:৪৭:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০১৭
জাতীয় ডেস্কঃ
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামে এ পর্যন্ত দুর্নীতি, নাশকতা, মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ৩২টি মামলা চলছে। ইতিমধ্যে তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয়া হয়েছে ২১ মামলায়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। আসামিকে পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর আদালত সাফাই সাক্ষ্য গ্রহন করবে। পরে যুক্তি-তর্ক শেষে রায় ঘোষণা। মামলাগুলোর কোনটি চলছে দ্রুতগতিতে। কোনটির গতি মন্থর। খালেদা জিয়াকে প্রায় প্রতি সপ্তাহে আদালতে যেতে হচ্ছে। কোন কোন সপ্তাহে দুই বারও ডাক পড়ছে হাজিরার।
কয়েকদিন আগে বিএনপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাটি ঢাকা-৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালত থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ৬০ দিনের মধ্যে মামলার বিচারকাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময়সীমাকে বিএনপির ওপর নতুন চাপ বলে কেউ কেউ মনে করলেও দলটির নেতা ও আইনজীবীরা চাপ মনে করছেন না।
এই প্রেক্ষাপটে মামলা ও সম্ভাব্য রায় নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের আগ বাড়িয়ে দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতিতে বিরক্ত বিএনপির হাইকমান্ড। রায়ে কি হবে বা রায়ের পরে কি করা হবে তা নিয়ে নেতাদের অতিরঞ্জিত কথা-বার্তা বলতে নিষেধ করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এ প্রসঙ্গে আর কথা বলছেন না নেতারা। সমপ্রতি তিনি কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাথে বৈঠকে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলাই রাজনৈতিক এবং তা হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এসব মামলা করা হয়েছে। এ নিয়ে আমি মোটেই চিন্তিত নই। আমি ন্যায়বিচার আশা করি। নিরপেক্ষ বিচার হলে এইসব মামলায় কিছু হবে না।’ বেগম জিয়ার সঙ্গে সমপ্রতি কয়েকজন বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবী সাক্ষাত্ করতে গেলে তাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনার নামে ১৫টি মামলা ছিল। সব মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামে থাকা সাড়ে সাত হাজার মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ আমার নামে ওয়ান ইলেভেনের সময়ে করা মিথ্যা মামলার একটিও সরকার প্রত্যাহার না করে চালিয়ে যাচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছে। মামলায় যদি ষড়যন্ত্র করে অন্যায্য সাজা দেওয়া হয় তবে তা করেও আমাকে টলানো যাবে না। সেই রায় মানবে না দেশের জনগন।
বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মামলাগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই চালিয়ে নেবেন তারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, মামলায় রায় নিয়ে দলের চেয়েও বেশি চিন্তা সরকারের। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে মামলাগুলোর তেমন ভিত্তি ও আইনি জোর নেই। মামলার রায় নিয়ে আমরা চিন্তা করি না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক। তাকে জেলে রাখার ঝুঁকি সরকার নেবে বলে মনে হয় না। আমরা আইনের পথেই তার মামলাগুলো মোকাবিলা করব।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার নানা কারণে ভীত। আর এই ভয় তাড়াতে চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার বা তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। আইনি মোকাবিলা চলছে, প্রয়োজনে পাশাপাশি রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এবং আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ম্যাডামের বিরুদ্ধে সব মামলাই রাজনৈতিক। কোন মামলারই আইনগত ভিত্তি নেই। তারপরও সরকার আদালতকে প্রভাবিত করে যদি অন্যায়ভাবে সাজা দেয় তাহলে দেশের মানুষ তা গ্রহন করবেন না। মানুষ ফুসে উঠবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়ার নামে এখন ৩২টি মামলা চলছে। তার মধ্যে ২১টিতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। সঠিক বিচার হলে এসব মামলার একটিও টিকবে না।
৩২ মামলার মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতির অভিযোগে করা। বাকিগুলো সহিংসতা, হত্যা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা। দুর্নীতির পাঁচ মামলাই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়ের করেছিল। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলা সচল রয়েছে।  হত্যা ও নাশকতার মামলা চলছে ১৪ টি। রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা ১১ টি।