তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ
বিশ্বব্যাপী পানি দূষণ বাড়ছে। প্রযুক্তির যত উন্নতি হচ্ছে ততো বাড়ছে কল-কারখানা। দূষণও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কল-কারখানার বর্জ্য পানিতে মিশে পানি দূষিত হচ্ছে। এখন থেকে পানিতে মিশ্রিত দূষিত বস্তু শনাক্ত করা যাবে খুব সহজে। আর এ জন্য খরচও হবে কম। বাংলাদেশি তরুণ বিজ্ঞানী ড. মো. আব্দুল আজিজের উদ্ভাবিত ‘ইন্টারকানেক্ট ন্যানো স্ট্রাকচার কার্বন ইলেকট্রোড’ সেন্সর শনাক্ত করবে পানিতে মিশ্রিত দূষিত বস্তু। এটি একটি ন্যানো মেটারিয়ালস ইলোকট্রো কেমিক্যাল সেন্সর। যা ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণকারী ‘ফেলোলিক যৌগ’ শনাক্ত করতে সক্ষম। তবে মজার বিষয় হলো, খেজুর পাতা ব্যবহার করে সেন্সরটি তৈরি করেছেন সৌদি প্রবাসী এ বিজ্ঞানী। তিনি সৌদি আরবের ‘কিং ফাহাত ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম এন্ড মিনারেলস’ এ গবেষণাকর্ম করে সেন্সরটি উদ্ভাবন করেন। বর্তমানে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছেন।
ড. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, খেজুর পাতা ব্যবহার করে ইলেকট্রো কেমিক্যাল সেন্সর তৈরি করা হয়েছে। যা পানিতে মিশ্রিত সকল প্রকার দূষিত যৌগকে চিহ্নিত করবে। এটি ব্যবহার করে পানির দূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাণিজ্যিক ইলেকট্রো কেমিক্যালের চেয়ে এর খরচও হবে কম।
তিনি আরো বলেন, খনি থেকে পেট্রোলিয়াম উত্তোলনের সময় সোডিয়াম আয়ন পরিবেশের সাথে মিশে পানিকে দূষিত করে। সেন্সরটি ব্যবহার করে পেট্রোলিয়াম এবং পেট্রোক্যামিক্যাল শিল্প থেকে প্রাপ্ত পরিবেশ দূষণকারী যৌগ যেমন: নাইট্রেইট, ৪-নাইট্রোফেনোল, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, হাইড্রাজিন খুব সহজে শনাক্ত করা যাবে।
ড. মো. আব্দুল আজিজের গবেষণার প্রধান বিষয় ছিলো: পেট্রোলিয়াম এবং পেট্রোক্যামিক্যাল শিল্প থেকে প্রাপ্ত পরিবেশ দূষণকারী শনাক্তকরণের জন্য ‘ন্যানো মেটারিয়ালস ইলোকট্রোক্যামিক্যাল সেন্সর’ তৈরি। যা দিয়ে পানিতে মিশ্রিত দূষিত বস্তু চিহ্নিত করা যাবে। গবেষণায় তিনি এবং তার দল তৈরি করেছেন ‘ইনডিয়াম টিন-অক্সাইড ন্যানোপার্টিক্যাল-মডিফাইড ইনডিয়াম অক্সাইড’, যা দ্বারা পরিবেশ দূষণকারী সালফাইড আয়ন শনাক্ত করা সম্ভব। চলতি বছরে তার এ গবেষণা উইলি পাবলিকেশনস গ্রুপার ইলেকট্রো অ্যানালাইসিস জার্নালে এ প্রকাশিত হয়েছে। সৌদি প্রবাসী আব্দুল আজিজ দেশের হয়ে কাজ করতে চান। সেন্সর তৈরিতে খেজুর পাতা ব্যবহারের এটাই প্রধান কারণ। তিনি বলেন, খেজুর পাতা সৌদি আরব ও বাংলাদেশে কৃষি বর্জ্য হিসাবে চিহ্নিত। যেহেতু আমি গবেষণা করছি সৌদি আরবের অর্থায়নে, সেহেতু আমি চিন্তা করলাম এমন একটি পাতা নিয়ে কাজ করবো যা দেশেও কাজে লাগবে।
তরুণ এই বিজ্ঞানী আরো বলেন, বিদেশে থেকে দেশীয় বস্তু নিয়ে কাজ করা কঠিন। কারণ প্রত্যেক দেশ তার নিজ দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে চায়। কিন্তু স্বাগতিক দেশে স্বার্থ বজায় রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গবেষণা করতে পারলে দেশের জন্য ভালো। এ রকমভাবে প্রত্যেক প্রবাসী বিজ্ঞানী অন্তত একটা করে গবেষণাকর্ম দেশীয় বস্তুর সঙ্গে মিলিয়ে করলে, সেটা দেশের জন্য উপকারী হবে।
বিজ্ঞানী আব্দুল আজিজ ১৯৭৭ সালে যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার মোমিনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার পুসান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করেন। ২০০৯ সালে তিনি পিএইচডি শেষ করেন।
এ যাবত্ বিভিন্ন জার্নালে তার ৫৬টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তার দুটি গবেষণা আমেরিকা এবং সৌদি আরবে প্যাটার্ন হয়েছে। অপরদিকে বেশ কয়েকটি গবেষণা আমেরিকায় প্যাটার্নের অপেক্ষায় আছে বলে জানান তিনি। ‘ন্যানোমেটারিয়ালস ইন ইলেকট্রো কেমিক্যাল বায়ো-সেন্সর’নামক একটি বুক চ্যাপ্টার প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশি এ বিজ্ঞানী।