ঢাকা ০৮:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়!

কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ

দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ডজনাধিক স্থান যেন মরা পশু, মরা হাঁস-মুরগি আর ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড় হয়ে উঠেছে। মহাসড়কের পথে পথে ময়লার ভাগাড় জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। আবর্জনার স্তূপ থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দুর্গন্ধে মহাসড়কে চলাচলকারী হাজারো যানবাহনের যাত্রী, পথচারীরা সমস্যায় পড়ছেন। এলাকার বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। মহাসড়কের এসব স্থান দিয়ে চলার সময় নাকে রুমাল চেপে চলতে হয়। এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে মহাসড়কের পাশের ময়লার স্তূপ অবিলম্বে পরিষ্কার করে পরিবেশ সুরক্ষার দাবি জানান।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের গৌরীপুর, তালতলি, মাধাইয়া, চান্দিনা, নিমসার, কাবিলা, নিশ্চিন্তপুর, আমতলী, আলেখারচর, পদুয়ারবাজার, সুয়াগাজী, মিয়াবাজার, চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকায় মহাসড়কের পাশে কাঁচাবাজারের ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলার কারণে স্তূপ তৈরি হয়েছে। এসব স্তূপে প্রতিনিয়ত মহাসড়কের দুই পাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, পচা শাকসবজি, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠাসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আবার কোথাও রাস্তার পিচের ওপর আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এসব ময়লার ভাগাড়ে পশু-পাখি ও কুকুর-বিড়াল খাবারের উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করার সময় এলোমেলো করে মহাসড়কে ছড়িয়ে ফেলছে। সড়কের ওপরের এসব ময়লা-আবর্জনা যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং এসব ময়লা ধুলায় পরিণত হয়ে বাতাসে উড়ছে। বিশেষ করে বাতাসে ময়লা-আবর্জনা ও বিষাক্ত ধুলা উড়ে আশপাশের বাড়িঘরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে। জেলার বুড়িচং উপজেলার নিমসার কাঁচাবাজার লাগোয়া দুর্গন্ধ ছড়ানো বড় ময়লার স্তূপটি এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ বলে মন্তব্য করেন বাসিন্দারা। এছাড়া একই উপজেলার নাজিরা বাজার এলাকায় মহাসড়কের পাশে ময়লার স্তূপে ছোট-বড় তিনটি মরা গরু পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঐ এলাকার অন্তত ১৮ জন বাসিন্দা বলেন, ‘ময়লার দুর্গন্ধে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায়ও বিঘ্ন ঘটছে। কোনো কোনো সময় কে বা কারা আবর্জনার স্তূপে আগুন লাগিয়ে দেয়, এতে আগুনের তাপ ও ধোঁয়ায় অনেক গাছগাছালিসহ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ময়লা ফেলতে নিষেধ করলেও কেউ শুনে না। ধমক দেয়, ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এজন্য প্রশাসনকেই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

কুমিল্লা জেলা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ফারুক হোসেন সুমন জানান, ‘মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীদের ময়লার দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চেপে চলতে হয়।

এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন।’ চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে আবর্জনার স্তূপ দিন দিন বাড়ছে। এটা মহাসড়ক নয়, যেন ময়লার ভাগাড়। প্রতিদিন হাট-বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে বিষাক্ত উত্কট গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এতে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা থেকে মশার বংশবিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন ও লোকজনসহ সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে ময়লা না ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার বাজার কমিটি ও পৌরসভাকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা শিগিগর কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে খাল খননের নামে চলছে হরিলুট, মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়!

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়!

আপডেট সময় ১০:২২:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১

কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ

দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ডজনাধিক স্থান যেন মরা পশু, মরা হাঁস-মুরগি আর ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড় হয়ে উঠেছে। মহাসড়কের পথে পথে ময়লার ভাগাড় জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। আবর্জনার স্তূপ থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দুর্গন্ধে মহাসড়কে চলাচলকারী হাজারো যানবাহনের যাত্রী, পথচারীরা সমস্যায় পড়ছেন। এলাকার বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। মহাসড়কের এসব স্থান দিয়ে চলার সময় নাকে রুমাল চেপে চলতে হয়। এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে মহাসড়কের পাশের ময়লার স্তূপ অবিলম্বে পরিষ্কার করে পরিবেশ সুরক্ষার দাবি জানান।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের গৌরীপুর, তালতলি, মাধাইয়া, চান্দিনা, নিমসার, কাবিলা, নিশ্চিন্তপুর, আমতলী, আলেখারচর, পদুয়ারবাজার, সুয়াগাজী, মিয়াবাজার, চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকায় মহাসড়কের পাশে কাঁচাবাজারের ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলার কারণে স্তূপ তৈরি হয়েছে। এসব স্তূপে প্রতিনিয়ত মহাসড়কের দুই পাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, পচা শাকসবজি, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠাসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আবার কোথাও রাস্তার পিচের ওপর আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এসব ময়লার ভাগাড়ে পশু-পাখি ও কুকুর-বিড়াল খাবারের উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করার সময় এলোমেলো করে মহাসড়কে ছড়িয়ে ফেলছে। সড়কের ওপরের এসব ময়লা-আবর্জনা যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং এসব ময়লা ধুলায় পরিণত হয়ে বাতাসে উড়ছে। বিশেষ করে বাতাসে ময়লা-আবর্জনা ও বিষাক্ত ধুলা উড়ে আশপাশের বাড়িঘরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে। জেলার বুড়িচং উপজেলার নিমসার কাঁচাবাজার লাগোয়া দুর্গন্ধ ছড়ানো বড় ময়লার স্তূপটি এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ বলে মন্তব্য করেন বাসিন্দারা। এছাড়া একই উপজেলার নাজিরা বাজার এলাকায় মহাসড়কের পাশে ময়লার স্তূপে ছোট-বড় তিনটি মরা গরু পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঐ এলাকার অন্তত ১৮ জন বাসিন্দা বলেন, ‘ময়লার দুর্গন্ধে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায়ও বিঘ্ন ঘটছে। কোনো কোনো সময় কে বা কারা আবর্জনার স্তূপে আগুন লাগিয়ে দেয়, এতে আগুনের তাপ ও ধোঁয়ায় অনেক গাছগাছালিসহ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ময়লা ফেলতে নিষেধ করলেও কেউ শুনে না। ধমক দেয়, ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এজন্য প্রশাসনকেই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

কুমিল্লা জেলা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ফারুক হোসেন সুমন জানান, ‘মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীদের ময়লার দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চেপে চলতে হয়।

এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন।’ চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে আবর্জনার স্তূপ দিন দিন বাড়ছে। এটা মহাসড়ক নয়, যেন ময়লার ভাগাড়। প্রতিদিন হাট-বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে বিষাক্ত উত্কট গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এতে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা থেকে মশার বংশবিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন ও লোকজনসহ সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে ময়লা না ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার বাজার কমিটি ও পৌরসভাকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা শিগিগর কঠোর ব্যবস্থা নেব।’