ঢাকা ০১:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেবিদ্বারে পুলিশের উদ্যোগে অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে ভিন্ন পেশায় পুনর্বাসন

আবুল খায়ের, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার দেবিদ্বারে থানা পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে প্রায় অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে ভিন্ন পেশায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। এলাকায় মাদকের বিস্তার রোধে থানা পুলিশ ব্যতিক্রমী এ কৌশল অবলম্বন করে সর্বস্তরের জনগণের প্রসংশা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দেবিদ্বার উপজেলার অর্ধশতাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এখন বিভিন্ন সামাজিক পেশায় স্বাভাবিক জীবন-যাপন করায় মাদকের বড় স্পট গুলোর চিহ্ন অনেকটাই মুছে গেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে মাদক ব্যবসা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় জড়িতদেরকে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ এলাকার বিত্তশালীরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, কুমিল্লা জেলার বিখ্যাত কয়েকটি মাদকের স্পট ছিল দেবিদ্বার উপজেলায়। ভারত থেকে বিভিন্ন রাস্তায় এ উপজেলার বাগুর, উপজেলা সদর, বারেরা, পোনরা, এগারগ্রাম, কালিকাপুর, জাফরগঞ্জ, বেগমাবাদ, ফতেহাবাদ, শালঘরসহ বেশ কিছু মাদকের স্পটে দিনে রাতে অবিরাম চলতো মাদকের রমরমা ব্যবসা। হাতবদল হয়ে তা চলে যেতো ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায়। এছাড়াও এসব স্পট গুলোতে প্রতিদিনই হাজার হাজার ভাসমান মাদক সেবনকারী ভিড় করতো। দেবিদ্বার থানার ওসি মিজানুর রহমান এ থানায় যোগদানের পর ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় এসব মাদকের স্পট একে একে নিশ্চিহ্ন করতে সমর্থ হয়েছেন। মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে এসব মাদকের স্পট নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

কালিকাপুর এলাকার বাসিন্দা মোহাব্বত আলী জানান, কালিকাপুর এলাকায় মাদকের স্পট সচল থাকা অবস্থায় রাতে চুরের উপদ্রবে ঠিক মতো ঘুমানো যেত না, মেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করতে ইভটিজিংসহ যৌন হয়রানীর শিকার হতো, আর এখন এসবই নেই বললেই চলে।

তিনি আরও জানান, এলাকায় এখন বহিরাগত বখাটে ও মাদক সেবনকারীদেরকে আর দেখা যায় না। উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এবং বেশ কিছু মাদক মামলার আসামী কানা খোরশেদ জানান, থানার ওসি এবং স্থানীয় মাদক বিরোধী সংগঠন গুলোর সহযোগিতায় সে মাদক ব্যবসা ছেড়ে এখন মুদি মালের ব্যবসা করে পরিবারে সবাইকে নিয়ে ভালভাবেই দিন কাটাচ্ছে। ওসির উদ্যোগে একই এলাকার মাদক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনকে অটোরিক্সা কিনে দেয়া হয়েছে এবং আলমগীর হোসেনকে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের নাইট গার্ড পদে চাকুরী দেয়া হয়েছে। উপজেলার পোনরা বাজারের মাদক ব্যবসায়ী আবুল কালামকে চা দোকান করে দেয়া হয়েছে। শালঘর এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী লেংরা আলীকে স্টেশনারী ব্যবসায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। উপজেলার রসুলপুর বাজারের মাদক ব্যবসায়ী মিন্টু মেম্বারকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের তালিকাভুক্ত প্রায় অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে ভিন্ন পেশায় পুনর্বাসন করায় এলাকায় মাদকের আগ্রাসন অনেকটাই কমে এসেছে। তবে এ উপজেলার আরো বেশ কিছু মাদক সম্রাটকে স্বাভাবিক জিবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে বলে জানা গেছে।

মাদক ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জিবনে আসা আলমগীর হোসেন জানান, পুলিশের সহযোগিতায় অল্প আয়ের মাঝেও তিনি শান্তিপুর্ণ জিবন যাপন করতে পেরে আনন্দিত।

জাফরগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি মাদকের স্পট ছিল, এসব স্পটে মাদক সেবনকারীদের উৎপাতে এলাকাবাসী ছিল অতিষ্ট। থানা পুলিশ বিভিন্ন কৌশলে আমাদের সহযোগিতা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদেরকে অন্য পেশায় পুনর্বাসন করে এসব মাদকের স্পট নিশ্চিহ্ন করেছেন। তিনি বলেন, আমার ইউনিয়ন এখন অনেকটাই মাদক মুক্ত।

এ বিষয়ে দেবিদ্বার থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, এ কাজে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এবং পুলিশ সুপার শাহ মো: আবিদ হোসেন আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা এবং অনুপ্রাণিত করেছেন। আমি এখনো মাদক সেবনকারী এবং মাদক ব্যবসায়ীদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নানা কৌশলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ওসি’র মত বিনিময়

দেবিদ্বারে পুলিশের উদ্যোগে অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে ভিন্ন পেশায় পুনর্বাসন

আপডেট সময় ০৩:৩২:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ অক্টোবর ২০১৭
আবুল খায়ের, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার দেবিদ্বারে থানা পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে প্রায় অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে ভিন্ন পেশায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। এলাকায় মাদকের বিস্তার রোধে থানা পুলিশ ব্যতিক্রমী এ কৌশল অবলম্বন করে সর্বস্তরের জনগণের প্রসংশা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দেবিদ্বার উপজেলার অর্ধশতাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এখন বিভিন্ন সামাজিক পেশায় স্বাভাবিক জীবন-যাপন করায় মাদকের বড় স্পট গুলোর চিহ্ন অনেকটাই মুছে গেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে মাদক ব্যবসা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় জড়িতদেরকে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ এলাকার বিত্তশালীরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, কুমিল্লা জেলার বিখ্যাত কয়েকটি মাদকের স্পট ছিল দেবিদ্বার উপজেলায়। ভারত থেকে বিভিন্ন রাস্তায় এ উপজেলার বাগুর, উপজেলা সদর, বারেরা, পোনরা, এগারগ্রাম, কালিকাপুর, জাফরগঞ্জ, বেগমাবাদ, ফতেহাবাদ, শালঘরসহ বেশ কিছু মাদকের স্পটে দিনে রাতে অবিরাম চলতো মাদকের রমরমা ব্যবসা। হাতবদল হয়ে তা চলে যেতো ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায়। এছাড়াও এসব স্পট গুলোতে প্রতিদিনই হাজার হাজার ভাসমান মাদক সেবনকারী ভিড় করতো। দেবিদ্বার থানার ওসি মিজানুর রহমান এ থানায় যোগদানের পর ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় এসব মাদকের স্পট একে একে নিশ্চিহ্ন করতে সমর্থ হয়েছেন। মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে এসব মাদকের স্পট নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

কালিকাপুর এলাকার বাসিন্দা মোহাব্বত আলী জানান, কালিকাপুর এলাকায় মাদকের স্পট সচল থাকা অবস্থায় রাতে চুরের উপদ্রবে ঠিক মতো ঘুমানো যেত না, মেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করতে ইভটিজিংসহ যৌন হয়রানীর শিকার হতো, আর এখন এসবই নেই বললেই চলে।

তিনি আরও জানান, এলাকায় এখন বহিরাগত বখাটে ও মাদক সেবনকারীদেরকে আর দেখা যায় না। উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এবং বেশ কিছু মাদক মামলার আসামী কানা খোরশেদ জানান, থানার ওসি এবং স্থানীয় মাদক বিরোধী সংগঠন গুলোর সহযোগিতায় সে মাদক ব্যবসা ছেড়ে এখন মুদি মালের ব্যবসা করে পরিবারে সবাইকে নিয়ে ভালভাবেই দিন কাটাচ্ছে। ওসির উদ্যোগে একই এলাকার মাদক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনকে অটোরিক্সা কিনে দেয়া হয়েছে এবং আলমগীর হোসেনকে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের নাইট গার্ড পদে চাকুরী দেয়া হয়েছে। উপজেলার পোনরা বাজারের মাদক ব্যবসায়ী আবুল কালামকে চা দোকান করে দেয়া হয়েছে। শালঘর এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী লেংরা আলীকে স্টেশনারী ব্যবসায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। উপজেলার রসুলপুর বাজারের মাদক ব্যবসায়ী মিন্টু মেম্বারকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের তালিকাভুক্ত প্রায় অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে ভিন্ন পেশায় পুনর্বাসন করায় এলাকায় মাদকের আগ্রাসন অনেকটাই কমে এসেছে। তবে এ উপজেলার আরো বেশ কিছু মাদক সম্রাটকে স্বাভাবিক জিবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে বলে জানা গেছে।

মাদক ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জিবনে আসা আলমগীর হোসেন জানান, পুলিশের সহযোগিতায় অল্প আয়ের মাঝেও তিনি শান্তিপুর্ণ জিবন যাপন করতে পেরে আনন্দিত।

জাফরগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি মাদকের স্পট ছিল, এসব স্পটে মাদক সেবনকারীদের উৎপাতে এলাকাবাসী ছিল অতিষ্ট। থানা পুলিশ বিভিন্ন কৌশলে আমাদের সহযোগিতা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদেরকে অন্য পেশায় পুনর্বাসন করে এসব মাদকের স্পট নিশ্চিহ্ন করেছেন। তিনি বলেন, আমার ইউনিয়ন এখন অনেকটাই মাদক মুক্ত।

এ বিষয়ে দেবিদ্বার থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, এ কাজে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এবং পুলিশ সুপার শাহ মো: আবিদ হোসেন আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা এবং অনুপ্রাণিত করেছেন। আমি এখনো মাদক সেবনকারী এবং মাদক ব্যবসায়ীদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নানা কৌশলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।