ঢাকা ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির মূল হোতা সৌদিপ্রবাসী

জাতীয়:

নারায়ণগঞ্জে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির মূল হোতা সৌদি প্রবাসী বায়েজিদ। আর পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাস, সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ ও জন্ম নিবন্ধনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা। নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

অবৈধ জন্মসনদ দিয়েই পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া এই তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করছিল র‌্যাব।অবশেষে গত বুধবার নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় ২৫ হাজারের বেশি পূরণ করা জন্মসনদের ফর্ম পায় তারা। এ ঘটনায় আটক হয় ছয়জন। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, সংঘবদ্ধ একটি চক্র অবৈধভাবে জন্মসনদ তৈরি করে আসছে যার মূলহোতা সৌদি প্রবাসী বায়েজিদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের সদস্যদের কাছে তথ্য পাঠাতো সে। বাংলাদেশ থেকে কাগজ তৈরি করে তারা পাঠাতো বায়েজিদের কাছে। তারপর তৈরি হতো অবৈধ পাসপোর্ট। ঢাকাস্থ সৌদি আরবের দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় একটি বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে এই কাজটি করা হত বলে জানা যায়। জড়িত রয়েছে জন্ম নিবন্ধন অধিদফতরের বেশ কিছু কর্মকর্তাও।

আটককৃতরা বলেন, আমাদের একজন বস আছেন যার নাম মোস্তফা কামাল। তিনি জেদ্দা অ্যাম্বাসিতে কাজ করেন। উনিই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

র‌্যাব জানায়, বিশেষভাবে পারদর্শী এ চক্রকে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ ও জন্ম নিবন্ধন কর্মকর্তারাও এ কাজে জড়িত। এই প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামিও পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে।

র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘এখানে সৌদি থেকে হাইকমিশনের সাথে যে দালাল চক্রের পরিচয় আছে তারাই এই পথ দেখিয়ে দেয়। শুধু রোহিঙ্গারা নয়, ফেরারি আসামি যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে তারাও পাসপোর্ট করে পালিয়ে যাচ্ছে।’

গত বুধবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকের নেতৃত্বে একটি টিম সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে চারটি কম্পিউটার দোকানে ওই অভিযান পরিচালনা করে। এসময় আশপাশের অন্য কম্পিউটার দোকান দ্রুত বন্ধ করে পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জের ফজলুল করিম (৩৩), সাইফুল ইসলাম (২৪) ও আজিম হোসেন (২৬), নেত্রকোনার একটি ইউপির উদ্যোক্তা সদস্য মামুন মিয়া (৩৫), ঢাকার একটি সিটি কর্পোরেশন এর মাঈন উদ্দিন (৩৮) ও জাহাঙ্গীর (৩৬)।

র‌্যাব কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের পাসর্পোট কিভাবে তৈরি করা হচ্ছে এ বিষয়ে তদন্তের সূত্র ধরে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রথমে তিনজনকে আটক করা হয়। তারা জন্মসনদ জাতীয় সার্ভার থেকে বের করতে সহযোগিতা করে আসছিল। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ প্রতারক চক্রের আরো সদস্যদের গ্রেফতারে বিকেল থেকে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বাইরে কম্পিউটার দোকানে অভিযান শুরু হয়। এসময় চারটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যাক ভুয়া জন্মসনদ, কাউন্সিলর সিল, সরকারি দপ্তরের সিল, ল্যাপটপ, মোবাইল সহ অবৈধ লেনদেনের ২ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা জব্দ করা হয়।

ইত্তেফাক

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে বিএনপি-এনসিপি পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ১০

নারায়ণগঞ্জে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির মূল হোতা সৌদিপ্রবাসী

আপডেট সময় ০৫:৪১:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
জাতীয়:

নারায়ণগঞ্জে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির মূল হোতা সৌদি প্রবাসী বায়েজিদ। আর পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাস, সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ ও জন্ম নিবন্ধনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা। নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

অবৈধ জন্মসনদ দিয়েই পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া এই তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করছিল র‌্যাব।অবশেষে গত বুধবার নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় ২৫ হাজারের বেশি পূরণ করা জন্মসনদের ফর্ম পায় তারা। এ ঘটনায় আটক হয় ছয়জন। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, সংঘবদ্ধ একটি চক্র অবৈধভাবে জন্মসনদ তৈরি করে আসছে যার মূলহোতা সৌদি প্রবাসী বায়েজিদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের সদস্যদের কাছে তথ্য পাঠাতো সে। বাংলাদেশ থেকে কাগজ তৈরি করে তারা পাঠাতো বায়েজিদের কাছে। তারপর তৈরি হতো অবৈধ পাসপোর্ট। ঢাকাস্থ সৌদি আরবের দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় একটি বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে এই কাজটি করা হত বলে জানা যায়। জড়িত রয়েছে জন্ম নিবন্ধন অধিদফতরের বেশ কিছু কর্মকর্তাও।

আটককৃতরা বলেন, আমাদের একজন বস আছেন যার নাম মোস্তফা কামাল। তিনি জেদ্দা অ্যাম্বাসিতে কাজ করেন। উনিই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

র‌্যাব জানায়, বিশেষভাবে পারদর্শী এ চক্রকে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ ও জন্ম নিবন্ধন কর্মকর্তারাও এ কাজে জড়িত। এই প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামিও পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে।

র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘এখানে সৌদি থেকে হাইকমিশনের সাথে যে দালাল চক্রের পরিচয় আছে তারাই এই পথ দেখিয়ে দেয়। শুধু রোহিঙ্গারা নয়, ফেরারি আসামি যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে তারাও পাসপোর্ট করে পালিয়ে যাচ্ছে।’

গত বুধবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকের নেতৃত্বে একটি টিম সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে চারটি কম্পিউটার দোকানে ওই অভিযান পরিচালনা করে। এসময় আশপাশের অন্য কম্পিউটার দোকান দ্রুত বন্ধ করে পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জের ফজলুল করিম (৩৩), সাইফুল ইসলাম (২৪) ও আজিম হোসেন (২৬), নেত্রকোনার একটি ইউপির উদ্যোক্তা সদস্য মামুন মিয়া (৩৫), ঢাকার একটি সিটি কর্পোরেশন এর মাঈন উদ্দিন (৩৮) ও জাহাঙ্গীর (৩৬)।

র‌্যাব কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের পাসর্পোট কিভাবে তৈরি করা হচ্ছে এ বিষয়ে তদন্তের সূত্র ধরে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রথমে তিনজনকে আটক করা হয়। তারা জন্মসনদ জাতীয় সার্ভার থেকে বের করতে সহযোগিতা করে আসছিল। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ প্রতারক চক্রের আরো সদস্যদের গ্রেফতারে বিকেল থেকে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বাইরে কম্পিউটার দোকানে অভিযান শুরু হয়। এসময় চারটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যাক ভুয়া জন্মসনদ, কাউন্সিলর সিল, সরকারি দপ্তরের সিল, ল্যাপটপ, মোবাইল সহ অবৈধ লেনদেনের ২ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা জব্দ করা হয়।

ইত্তেফাক