জাতীয় ডেস্কঃ
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গড়তে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে সংলাপ করেছে বিএনপি।
বুধবার (১ জুন) দুপুর ১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর তোপখানা রোডে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংলাপে বসেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের নেতৃত্ব সংলাপে ছিলেন- দলের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছান আলী দুলাল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাপেলো জামালী, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক ও মাহমুদ হোসেন।
প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংলাপ শেষে বের হয়ে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যন্ত আনন্দের কথা- আজকে আমরা উভয় দল কতগুলো মৌলিক বিষয়ে একমত হয়েছি। আর বাকি বিষয়ে অতি দ্রুত আলোচনার মধ্যে দিয়ে পর্যায়ক্রমে আমরা সমাধান করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। আর এখানে বিএনপি বেগম চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে আটকে রাখা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসিত করে রাখা, প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা এবং দেশে একটা ভয়াবহ ত্রাসের অবস্থা করে রাখার ব্যাপারে আমরা একটা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে আমরা পদত্যাগে বাধ্য করবো। এখানে এটা সবেচেয়ে বড় বিষয়। এ বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। আর পদত্যাগে বাধ্য করার পরে এ সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে- এ ব্যাপারেও আমরা একমত হয়েছি। এরপরে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্যে দিয়ে জনগণ এবং সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে একটা নতুন ভোটের বিষয়েও আমরা একমত হয়েছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যারা একমত হয়েছি, তারা যৌথভাবেই আন্দোলন শুরু করবো। নিজেদের জায়গা থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করবো। এই আন্দোলন যুগপৎ হবে। আর আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সিদ্ধান্ত হবে এই ধারা কি রূপ নিচ্ছে।
বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনেও বিষয়ে আলাপ-আলোচনা আমরা করেছি। সামগ্রিকভাবে সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আর আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে ৩১ দফা বিএনপির নেতৃবৃন্দের কাছে পেশ করেছি।
তিনি বলেন, গত ২০১৪ এবং ১৮ সালের মতো আরেকটা ব্যর্থ নির্বাচনের দায় বাংলাদেশের মানুষ ও জনগণ গ্রহণ করতে পারবে না। আমরা একমত হয়েছি যে, বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি যে পর্যায়ে সেখানে দেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার সুযোগ নেই। তাই নির্বাচনের আগেই বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। এসব বিষয়ে আমরা একমত পোষণ করেছি।
সাইফুল হক বলেন, গণআন্দোলন এবং গণসংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এই সরকারকে যদি পদত্যাগে বাধ্য করা না যায় তাহলে মানুষ ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যাবে না। আর কোনো দল পরিবর্তনের জন্য এই আন্দোলন নয়। রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং তার পরিবর্তনের জন্য এ আন্দোলন। একই সাথে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কারসহ রাষ্ট্র প্রশাসনের গণতান্ত্রিক সংস্কার, সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সংস্কার করা দরকার। এসব বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
গতানুগতিক একটা বিশেষ সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে আরেকটা গতানুগতিক সরকার গঠনের জন্য এ আন্দোলন নয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমরা প্রত্যেকে যার যার অবস্থা থেকে একেবারে ন্যূনতম ইস্যুতে- যেমন ভোটাধিকারের প্রশ্ন, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা- সেই কাজগুলো আমরা আগামী কিছুদিনে সম্পূর্ণ করবো। আর যুগপৎ আন্দোনের বিষয়ে আমাদের মধ্যে ঐক্যমত সম্পূর্ণ হয়েছে। ভবিষ্যতে এটা আরো আমরা জোরদার করবো।
গত ২৪ মে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের ঐক্য গড়তে সংলাপের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। ওইদিন তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের সাথে এবং ২৭ মে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের লেবার পার্টি এবং ৩১ মে গণসংহতি আন্দোলনের সাথে বৈঠক করেন।