মুরাদনগর বার্তা ডেস্ক রিপোর্টঃ
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের সময় একজনের প্রসব হয়েছে মৃত অবস্থাতেই। অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া এই শিশুদের নিয়ে বিপাকে আছেন চিকিৎসকরা। কেন না হাসপাতালে ইনকিউবেটর ও রেডিয়েন্ট ওয়ার্মার না থাকায় শিশুদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে ক্রমাগত। চিকিৎসকরা বলেছেন, দ্রুত ঢাকায় নিতে হবে উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সুমাইয়ার পরিবারের আর্থিক সঙ্গতিও নেই উন্নত চিকিৎসার। চোখের সামনে শিশুদের এই করুণ পরিণতিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন তারা।
সুমাইয়ার মা নাসরিন আক্তার জনান, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার দলূয়া গ্রামের ওমান প্রবাসী তফাজ্জল হোসেনের সাথে তার মেয়ে তানজিনা আকতার সুমাইয়ার বিয়ে হয়। দুই বছর ওমান থাকার পর দেশে আসেন তফাজ্জল হোসেন। তবে তিনি নতুন ভিসা নিয়ে ফের ওমান যান। এর মধ্যে সুমাইয়া সন্তান সম্ভবা হন। পরিবারের লোকেরা লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারেন সুমাইয়ার গর্ভে চার সন্তান রয়েছে। মাত্র ২৭ সপ্তাহের মাথায় সুমাইয়া অসুস্থ অনুভব করায় তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার নামে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। আবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানতে যায় চার সন্তান নয় পাঁচ সন্তান রয়েছে তার গর্ভে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পর ভর্তি হন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগে। আজ রবিবার ভোররাতে প্রসব বেদনা উঠে সুমাইয়ার। ইন্টার্নি চিকিৎসক তানজিনা নাহার লাবনী প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব করান।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী ও ইন্টার্নি চিকিৎসক তানজিনা নাহার লাবনী জানান, আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সুমাইয়া প্রথম বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে প্রসব করেন। এর ঘণ্টাখানেক পর সাড়ে সাতটায় দ্বিতীয় বাচ্চা এবং ১৫ মিনিট পর সাড়ে সাতটায় দ্বিতীয় বাচ্চা এবং ১৫ মিনিট পর তৃতীয় বাচ্চা প্রসব করেন। তৃতীয় বাচ্চা প্রসবের ১০ মিনিট পর ২টি বাচ্চা একই সময়ে প্রসব করেন। এর মধ্যে একজন মৃত ছিল।
প্রসূতি মা ও বাচ্চাদের বিষয়ে ইস্টার্নি চিকিৎসক ডা. নাহিদ শারমিন জানান, মাত্র ২৭ সপ্তাহের মধ্যে প্রসব হওয়া বাচ্চাদের মধ্যে ২ জন ছেলে ও ২ জন মেয়ে রয়েছে। মৃত শিশুটি মেয়ে ছিল।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ও সহকারি রেজিষ্টার ডা. মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, নবজাতকদের দুজনের ওজন ৯০০ গ্রাম, একজনের ৯৫০ গ্রাম ও অন্যজনের ওজন এক কেজি। তিনি আরো জানান, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া বাচ্চাগুলো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। অপরিণত এই ওজনের বাচ্চাদের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম।
তবে চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেন জানান, শিশুদের যদি বারডেম, এ্যাপোলো বা স্কয়ার হাসপাতালের মতো হাসপাতালের ইনকিউবেটরে রাখা যায় তাহলে বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের ইনকিউবেটর ও রেডিয়েন্ট ওয়ার্মার নেই। ১২টি রেডিয়েন্ট ওয়ার্মারের মধ্যে ১০টিই নষ্ট, ২টিও বেশি তাপ দেয়। ফলে নবজাতকদের চিকিৎসা দেওয়া এখানে সম্ভব না।