ঢাকা ১১:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে চিকিৎসক সংকটে তালা ঝুলছে ৭টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র

মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার ৭টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র (সাব-সেন্টার) কাগজে-কলমে খোলা থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় তালা ঝুলছে সাব-সেন্টার গুলো। সরকার স্বাস্থসেবা জনগনের দোড়গড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করলেও উপজেলার ৭টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক, জনবল ও আসবাবপত্র সংকটের কারণে সবগুলোই বন্ধ রয়েছে।

আর সে কারনে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না হতদরিদ্ররা। চিকিৎসক ও সরকারি ওষুধ না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছে এ সব এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী। দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা ডেপুটেশনের নামে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে অবস্থান করে মাসের পর মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছে চিকিৎসকরা। তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছেনা কতৃপক্ষ।

কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। এ সুযোগে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছে চিকিৎসাসেবা প্রদানের ভুয়া আশ্বাস দেওয়া কিছু অসাধু চিকিৎসক।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার রামচন্দ্রপুর, জাহাপুর, বাঙ্গরা, হায়দরাবাদ, গান্ধ্যা, নগরপাড় (গুঞ্জর) ও শ্রীকাইল এলাকায় অবস্থিত ৭টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে (সাব-সেন্টার) চিকিৎসক না আসায় চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। এ সব সাব সেন্টার গুলোতে প্রতিদিনই সেবা প্রত্যাশীরা এসে চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে রোগিরা। এ সব এলাকার নিম্মআয়ের লোকজন অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িঘরেই দিনাতিপাত করছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ৭টি সাব সেন্টার বিগত ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসক না আসায় এ সব এলাকার লক্ষাধিক দরিদ্র জনসাধারণের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে আছে। সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধের ওপর নির্ভরশীল এ সব এলাকার বাসিন্দারা ২ বছর ধরে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ৭টি ইউয়িনে ৭টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্য প্রতিদিন সকাল আটটা হতে দুপুর দুইটা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চালু থাকার কথা। প্রতিটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন সহকারি চিকিৎসক, একজন ফার্মাসিষ্ট ও একজন অফিস সহকারি থাকার কথা। এর মধ্যে শ্রকিাইল, বাঙ্গরা, রামচন্দ্রপুর, জাহাপুরে মেডিকেল আফিসারের পদ প্রায় দুই বছর শূণ্য রয়েছে। নগরপাড় কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার পদে ডা: জাকির হোসেনের নিযোগ থাকলেও তিনি সেখানে একদিনের জন্যও অফিস করেননি। হায়দরাবা কেন্দ্রের ডা: ওমর খালেদ ফয়সাল ডেপুটেশনে শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনিষ্টিটিউটে ও গান্দ্রার চিকিৎসক  ডা: ফেরদৌসী বেগম ডেপুটেশনে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজে রয়েছে। এছাড়া তিনটিতে সহকারি চিকিৎসক ও ৫টিতে ফার্মাসিষ্ট ও ২টিতে অফিস সহকারি পদ শূন্য রয়েছে। এর ফলেই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে তালা ঝুলছে।

স্থানীয়রা জানান, এ সব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মাঝে মধ্যে নতুন নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলেও দুয়েকদিন হাজিরা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করে তারা আর ফিরে আসেন না। চিকিৎসকদের অবহেলা আর কর্ম ফাঁকির কারণে সরকারি চিকিৎসাসেবার ওপর নির্ভরশীল সেবা প্রত্যাশীরা এখন চরম বিপাকে রয়েছে।

এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু জাহের জানান, উপজেলার ৬টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে (সাব-সেন্টার) চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। নগরপাড় কেন্দ্রে ডা: জাকির হোসেন যোগদানের পর থেকে বেতন নিচ্ছেনা আফিসও করছেনা। প্রতি মাসে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করছি। কিন্তু কোনো সমাধান এখনো পাইনি। তাই এই অবস্থা!

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে চিকিৎসক সংকটে তালা ঝুলছে ৭টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র

আপডেট সময় ০৩:২৯:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মার্চ ২০১৭
মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার ৭টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র (সাব-সেন্টার) কাগজে-কলমে খোলা থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় তালা ঝুলছে সাব-সেন্টার গুলো। সরকার স্বাস্থসেবা জনগনের দোড়গড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করলেও উপজেলার ৭টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক, জনবল ও আসবাবপত্র সংকটের কারণে সবগুলোই বন্ধ রয়েছে।

আর সে কারনে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না হতদরিদ্ররা। চিকিৎসক ও সরকারি ওষুধ না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছে এ সব এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী। দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা ডেপুটেশনের নামে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে অবস্থান করে মাসের পর মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছে চিকিৎসকরা। তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছেনা কতৃপক্ষ।

কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। এ সুযোগে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছে চিকিৎসাসেবা প্রদানের ভুয়া আশ্বাস দেওয়া কিছু অসাধু চিকিৎসক।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার রামচন্দ্রপুর, জাহাপুর, বাঙ্গরা, হায়দরাবাদ, গান্ধ্যা, নগরপাড় (গুঞ্জর) ও শ্রীকাইল এলাকায় অবস্থিত ৭টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে (সাব-সেন্টার) চিকিৎসক না আসায় চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। এ সব সাব সেন্টার গুলোতে প্রতিদিনই সেবা প্রত্যাশীরা এসে চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে রোগিরা। এ সব এলাকার নিম্মআয়ের লোকজন অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িঘরেই দিনাতিপাত করছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ৭টি সাব সেন্টার বিগত ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসক না আসায় এ সব এলাকার লক্ষাধিক দরিদ্র জনসাধারণের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে আছে। সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধের ওপর নির্ভরশীল এ সব এলাকার বাসিন্দারা ২ বছর ধরে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ৭টি ইউয়িনে ৭টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্য প্রতিদিন সকাল আটটা হতে দুপুর দুইটা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চালু থাকার কথা। প্রতিটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন সহকারি চিকিৎসক, একজন ফার্মাসিষ্ট ও একজন অফিস সহকারি থাকার কথা। এর মধ্যে শ্রকিাইল, বাঙ্গরা, রামচন্দ্রপুর, জাহাপুরে মেডিকেল আফিসারের পদ প্রায় দুই বছর শূণ্য রয়েছে। নগরপাড় কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার পদে ডা: জাকির হোসেনের নিযোগ থাকলেও তিনি সেখানে একদিনের জন্যও অফিস করেননি। হায়দরাবা কেন্দ্রের ডা: ওমর খালেদ ফয়সাল ডেপুটেশনে শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনিষ্টিটিউটে ও গান্দ্রার চিকিৎসক  ডা: ফেরদৌসী বেগম ডেপুটেশনে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজে রয়েছে। এছাড়া তিনটিতে সহকারি চিকিৎসক ও ৫টিতে ফার্মাসিষ্ট ও ২টিতে অফিস সহকারি পদ শূন্য রয়েছে। এর ফলেই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে তালা ঝুলছে।

স্থানীয়রা জানান, এ সব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মাঝে মধ্যে নতুন নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলেও দুয়েকদিন হাজিরা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করে তারা আর ফিরে আসেন না। চিকিৎসকদের অবহেলা আর কর্ম ফাঁকির কারণে সরকারি চিকিৎসাসেবার ওপর নির্ভরশীল সেবা প্রত্যাশীরা এখন চরম বিপাকে রয়েছে।

এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু জাহের জানান, উপজেলার ৬টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে (সাব-সেন্টার) চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। নগরপাড় কেন্দ্রে ডা: জাকির হোসেন যোগদানের পর থেকে বেতন নিচ্ছেনা আফিসও করছেনা। প্রতি মাসে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করছি। কিন্তু কোনো সমাধান এখনো পাইনি। তাই এই অবস্থা!