আজিজুর রহমান রনি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
জ্বালাও-পোড়াও গাড়ী ভাংচুর ও বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে আসামি জামিনে বের করে আনাসহ বিভিন্ন ঘটনায় পাঁচ মামলার আসামী এবং গত তিন মাসে পাঁচ জন ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিএনপি’র বলিষ্ঠ পদ-পদবীর নেতা না হলেও ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি হয়েই খুঁটির জোরে নানান অপকর্মের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, অবৈধ ড্রেজার দিয়ে অন্যের জমি করছেন ভরাট। সর্বশেষ এলাকায় নতুন রাস্তা করার বাহানায় ১৭ টি প্রবাসি পরিবার থেকে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। টাকা না দেয়ায় ভোল্ড-ড্রেজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন দুইটি বসত ঘর। তার ড্রেজার দিয়ে খুড়া গর্তে পরে দুইটি শিশুর হাত ভেঙ্গে যায়। এসব নানান অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে গত বৃহস্পতিবার ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী।
এ অভিযোগ দেয়ার কারণে আবুবক্কর সেলাফিকে পিটিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিলে, নিরুপায় হয়ে গত শুক্রবার রাতে থানায় লিখিত দেয় সে। এ সব নানান অনিয়মের হেড মাষ্টার হয়ে এলাকার আতংঙ্ক বনে গেছেন কবির হোসেন দিদার (৪০)। সে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ১৯নং দারোরা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার এবং পালাসুতা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে।
ভুক্তভোগী মো. আবুবক্কর সেলাফী বলেন, ‘ জ্বালাও-পোড়াও গাড়ী ভাংচুর ও বিচারকের স্বাক্ষর জালসহ কবির হোসেন দিদার পাঁচ মামলার আসামী। প্রত্যেকটার মামলা নাম্বার উল্লেখ করে তার জাবতীয় খারাপ কর্মগুলোর বর্ণনা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি গত বৃহস্পতিবার। এই খবর পেয়ে কবির মেম্বার লোকজন নিয়ে আমাকে মারধর করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে গত শুক্রবার রাতে তাকে প্রধান অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত দেই। পালাসুতা গ্রামে শুধু আমি ভুক্তভোগী নই। আরো চারজন তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে। এলাকায় রাস্তা করার বাহানা করে প্রবাসী পরিবার থেকে মোটা টাকা নিচ্ছে সে। বাড়িতে পুরুষ লোক না থাকায়, হেনস্থা হওয়ার ভয়ে প্রবাসী পরিবারগুলো মুখ বোঝে তার নিপিরণ সহ্য করে যাচ্ছে। সতেরটি পরিবার থেকে কবির টাকা নিয়েছে রাস্তা তৈরি করার অযুহাতে। অথচ রাস্তা তৈরি করার জন্য তাকে কেউ বলেনি বা সরকারি কোন বরাদ্দ আসেনি। তার একটি ড্রেজার মেশিন আছে,যা দিয়ে তিন ফসলি জমির মাটি কাটছে দেদারছে। মাদক সেবন ও বিক্রির সাথে জড়িত সে।’ এমন দুষ্ট লোক এলাকায় কি ভাবে মেম্বার হয়? এমন প্রশ্নে সালাফি বলেন, ‘এক গ্রাম থেকে তিন জন ছিল আওয়ামীলীগ সমর্থীত আর তার গ্রাম থেকে সে ছিল একা। গ্রামের ঐতিহ্য আর দলীয় লোকদের প্রতিযোগিতার মাঝে সে পার পেয়ে যায়।
মোকবোল হোসেনের ছেলে মো. রুবেল বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার পর আমার পায়ে অপারেশন করেছি। স্ত্রী সন্তার নিয়ে থাকার ঘরটি মেম্বার সাহেব ভোল-ড্রেজার দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছেন। এখন আমি কৈ থাকি!’
সেকান্দর আলীর ছেলে আব্দু রহিম বলেন, শহরে আমি রিক্সা চালাই। বাড়িতে সম্বল বলতে একটি টিনের চালার ঘরই ছিলো। টাকা না পেয়ে মেম্বার আমার ঘরটি ভেঙ্গে দিয়েছে। বিচার চাওয়ার মতো সামর্থ নেই আমার।’
এক প্রাবাসীর স্ত্রীর কাছে ত্রিশ হাজার টাকা চেয়ে না পেয়ে, তার ফল বাগানের পচিশটি গাছ কেটে ফেলেছে মেম্বারের লোকজন। অন্য একজন প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ষাট হাজার টাকা নিয়েছেন মেম্বার কবির।’
ঘটনাস্থলে গিয়ে আরো জানা যায়, রিপনের মেয়ে সাড়ে চার বছর বয়সের রিমু ও সোলমানের তিন বছরের ছেলে ভেকু দিয়ে খুড়া গর্তে পরে হাত ভেঙ্গে ফেলেছে।
অভিযুক্ত মেম্বার কবির হোসেন দিদারের মুঠো ফোনে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চলার পথে আমার বন্ধু যেমন আছে তেমনি শত্রুও আছে। একটা পক্ষ মিথ্যা ছড়াচ্ছে। দু’জন লোকের ঘর ভাঙ্গলেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদের ঘর খাস জমিতে পরেছে তাই ভেঙ্গেছি।’
এ বিষয়ে ১৯ নং দারোরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘রাস্তার জন্য কোন বরাদ্দ নেই। মেম্বার কবিরের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ অনেক। তবে আমি নিরুপায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কবির মেম্বারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে জানতে চেয়েছি এবং আমিও খতিয়ে দেখছি। অন্যায় কিছু পেলে ছাড় পাবে না।’