ঢাকা ১০:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি রেজওয়ান বিমানবন্দর দিয়ে দেশে

জাতীয় ডেস্কঃ
মোস্ট ওয়ান্টেট জঙ্গি রেজওয়ান হারুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। এমিরাতের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্য থেকে গত ১১ মে সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি বাংলাদেশে আসেন। ইমিগ্রেশন দিয়ে তিনি সহজে বের হয়ে যান। গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন।
রেজওয়ান হারুন জামায়াতুল মুসলেমিনের যুক্তরাজ্য শাখার আমির আবু ইসা আল রাফাইয়ের অনুসারী। এই রাফাই জর্দান বংশোদ্ভত যুক্তরাজ্যের নাগরিক। দেশে বড় ধরনের কোন নাশকতার জন্যই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনসহ ১৮টি সংস্থা বিমান বন্দরে দায়িত্ব পালন করে। এমন করা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কেমন করে মোস্ট ওয়ান্টেট জঙ্গি প্রবেশ করেছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গোয়েন্দারা মনে করছেন, কোন একটি সংস্থার ‘সবুজ সংকেত’ছাড়া এমন একজন জঙ্গি দেশে প্রবেশের সাহস পেতেন না। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের অনুরোধ করা হয়। এ ছাড়া একই চিঠি সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, মহাপুলিশ পরিদর্শক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, ঢাকার ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানীতে অবস্থিত লেকহেড গ্রামার স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজওয়ান হারুনকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ জঙ্গির তালিকায় রেজওয়ান হারুনের নাম থাকায় ইতোমধ্যে তাকে গ্রেফতার করতে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নেমেছে।
পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবহিত নই। তবে বিষয়টি অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে লেকহেড স্কুলের সঙ্গে জঙ্গির যোগসূত্র পুরোনো। দেশে এখন নিষিদ্ধ তিনটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে ঢাকার লেকহেড গ্রামার স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষসহ অন্তত পাঁচজন শিক্ষক ও একজন কর্মকর্তার যোগসূত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুজন শিক্ষক ছিলেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মাতৃসংগঠন জামায়াতুল মুসলেমিনের ও দুজন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যুক্ত। অপর এক শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নব্য জেএমবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
তাদের মধ্যে স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ জেনিফার আহমেদ হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে, শিক্ষক তেহজীব করিম ও মাঈনুদ্দীন শরিফ জামায়াতুল মুসলেমিন নব্য জেএমবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অনুসন্ধানে বছর ছয়েক আগে জঙ্গি তত্পরতার বিষয়ে অধ্যক্ষসহ এই স্কুলটির যোগসূত্রের বিষয় জানা যায়।
স্কুলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছিল, লেকহেড গ্রামার স্কুলের উদ্দেশ্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মনে তার মুসলিম পরিচয় গেঁথে দেওয়া এবং সারা জীবন যেন সে এই বিশ্বাস ধরে রাখে। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছিল, সন্তানকে ‘আল্লাহর খলিফা’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে যেন সে সত্যিকারের ইসলামি বিশ্ব গড়ে তোলায় সহযোগিতা করতে পারে।
২০১০ সালের মাঝামাঝির কথা। ওই বছরের শুরুতে ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হন কিছু বাংলাদেশি যুবক। পরে তারা দেশে ফিরে আসেন। তাদের মধ্যে দুজন তেহজীব করীম ও মাঈনুদ্দীন শরিফ ছিলেন ধানমন্ডির লেকহেড গ্রামার স্কুলের শিক্ষক।
মাঈনুদ্দীনের আরেক ভাইও ইয়েমেনে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তারা সবাই আল-কায়েদার আরব উপদ্বীপের নেতা আনওয়ার আওলাকির অনুসারী ছিলেন বলে তখন ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছিলেন। এর মধ্যে তেহজীব করিমের বড় ভাই রাজীব করীম ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমান উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার ও পরে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।
ইত্তেফাক
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি রেজওয়ান বিমানবন্দর দিয়ে দেশে

আপডেট সময় ০৩:৩১:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০১৭
জাতীয় ডেস্কঃ
মোস্ট ওয়ান্টেট জঙ্গি রেজওয়ান হারুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। এমিরাতের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্য থেকে গত ১১ মে সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি বাংলাদেশে আসেন। ইমিগ্রেশন দিয়ে তিনি সহজে বের হয়ে যান। গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন।
রেজওয়ান হারুন জামায়াতুল মুসলেমিনের যুক্তরাজ্য শাখার আমির আবু ইসা আল রাফাইয়ের অনুসারী। এই রাফাই জর্দান বংশোদ্ভত যুক্তরাজ্যের নাগরিক। দেশে বড় ধরনের কোন নাশকতার জন্যই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনসহ ১৮টি সংস্থা বিমান বন্দরে দায়িত্ব পালন করে। এমন করা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কেমন করে মোস্ট ওয়ান্টেট জঙ্গি প্রবেশ করেছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গোয়েন্দারা মনে করছেন, কোন একটি সংস্থার ‘সবুজ সংকেত’ছাড়া এমন একজন জঙ্গি দেশে প্রবেশের সাহস পেতেন না। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের অনুরোধ করা হয়। এ ছাড়া একই চিঠি সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, মহাপুলিশ পরিদর্শক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, ঢাকার ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানীতে অবস্থিত লেকহেড গ্রামার স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজওয়ান হারুনকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ জঙ্গির তালিকায় রেজওয়ান হারুনের নাম থাকায় ইতোমধ্যে তাকে গ্রেফতার করতে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নেমেছে।
পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবহিত নই। তবে বিষয়টি অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে লেকহেড স্কুলের সঙ্গে জঙ্গির যোগসূত্র পুরোনো। দেশে এখন নিষিদ্ধ তিনটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে ঢাকার লেকহেড গ্রামার স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষসহ অন্তত পাঁচজন শিক্ষক ও একজন কর্মকর্তার যোগসূত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুজন শিক্ষক ছিলেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মাতৃসংগঠন জামায়াতুল মুসলেমিনের ও দুজন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যুক্ত। অপর এক শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নব্য জেএমবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
তাদের মধ্যে স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ জেনিফার আহমেদ হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে, শিক্ষক তেহজীব করিম ও মাঈনুদ্দীন শরিফ জামায়াতুল মুসলেমিন নব্য জেএমবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অনুসন্ধানে বছর ছয়েক আগে জঙ্গি তত্পরতার বিষয়ে অধ্যক্ষসহ এই স্কুলটির যোগসূত্রের বিষয় জানা যায়।
স্কুলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছিল, লেকহেড গ্রামার স্কুলের উদ্দেশ্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মনে তার মুসলিম পরিচয় গেঁথে দেওয়া এবং সারা জীবন যেন সে এই বিশ্বাস ধরে রাখে। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছিল, সন্তানকে ‘আল্লাহর খলিফা’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে যেন সে সত্যিকারের ইসলামি বিশ্ব গড়ে তোলায় সহযোগিতা করতে পারে।
২০১০ সালের মাঝামাঝির কথা। ওই বছরের শুরুতে ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হন কিছু বাংলাদেশি যুবক। পরে তারা দেশে ফিরে আসেন। তাদের মধ্যে দুজন তেহজীব করীম ও মাঈনুদ্দীন শরিফ ছিলেন ধানমন্ডির লেকহেড গ্রামার স্কুলের শিক্ষক।
মাঈনুদ্দীনের আরেক ভাইও ইয়েমেনে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তারা সবাই আল-কায়েদার আরব উপদ্বীপের নেতা আনওয়ার আওলাকির অনুসারী ছিলেন বলে তখন ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছিলেন। এর মধ্যে তেহজীব করিমের বড় ভাই রাজীব করীম ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমান উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার ও পরে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।
ইত্তেফাক