ঢাকা ১১:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে গ্রামে নারী-পুরুষ আলাদা ভাষায় কথা বলে

 লাইফস্টাইল ডেস্কঃ

নারী-পুরুষের বিভাজনের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু নাইজেরিয়ার দক্ষিণের এক কৃষক সমাজ ‘উবাং’। সেখানে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ বিরল নজির হিসেবে বিবেচন্য হতে পারে। সেখানে নারী এবং পুরুষদের ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে হয়। এ বিষয়টাকে তারা ‘ঈশ্বরের আশীর্বাদ’ হিসেবেই দেখেন। কিন্তু সমাজ আধুনিক হচ্ছে। তাই ইংরেজি ভাষা বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ফলে এই সমাজের নারী-পুরুষের ভিন্ন ভাষা ব্যবহারের চর্চা বিলুপ্তির পথে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুরনো প্রজন্ম।

সমাজপতি অলিভার ইবাং পরেছেন উজ্জ্বল রংয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। মাথায় লাল ক্যাপ। হাতে কর্তৃত্বসুলভ একটা জিনিস। তিনি তার দুই সন্তানের মাধ্যমে ভাষাগত পার্থক্য বোঝানোর চেষ্টা করলেন। একটি মিষ্টি আলু হাতে নিয়ে কন্যাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? মেয়ে উত্তর দিল, এটা ‘ইরুই’। কিন্তু একই জিনিস ছেলেদের ভাষায় বলতে হবে ‘ইতং’। এ ধরনের অনেক শব্দ রয়েছে যেগুলো মেয়েরা বললে একটা, আর ছেলেরা বলবে আরেকটা। যেমন গাছকে ছেলেরা বলবে কিটচি, আর মেয়েরা ওকওয়েং। পানিকে ছেলেরা বলবে বামুলে, আর মেয়েরা বলবে আমু। ছাগলকে ছেলেরা বলবে ইবুয়ে, আর মেয়েরা বলবে ওবি।

তবে ভাষাবিদদের কাছে এটা পরিষ্কার নয় যে, তাদের ভাষায় কোন অংশটি নারী-পুরুষের জন্যে আলাদা করা হয়েছে। যেকোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে নারী-পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকার ভিত্তিতে শব্দগুলো তৈরি হয়েছে কিনা তাও জানা নেই।

নৃতত্ত্ববিদ চি চি উন্দি বলেন, নারী-পুরুষের জন্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি অভিধান তারা ব্যবহার করছে। তবে এমন অনেক শব্দই আছে যেগুলো সবাই একইভাবে ব্যবহার করে। অন্যগুলোর ব্যবহার নির্ভর করে লিঙ্গের ওপর। একই জিনিস বোঝায় এমন শব্দ দুটো পুরোপুরি ভিন্ন। উচ্চারণেও পার্থক্য আছে।

আবার তারা সবাই এসব ভিন্ন ভিন্ন শব্দগুলো বুঝতেও পারে। কারণ, সন্তানরা ছোটবেলা মায়ের কাছেই থাকেন। ফলে মেয়েদের ব্যবহৃত শব্দগুলোই তারাও ব্যবহার করে। কিংবা এগুলো শিখে ফেলে। কিন্তু বয়স ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার পরই ছেলেরা ছেলেদের ভাষা শেখে। কোনো শিশু ছেলেদের ভাষা শিখছে মানেই তারা পরিপক্ক হয়ে উঠছে। কোনো ছেলে সঠিক বয়স থেকে পুরুষদের ভাষা ব্যবহার না করতে থাকলে তাকে অস্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয়।

উবাং গোত্রের মানুষগুলো তাদের ভাষা নিয়ে রীতিমতো গর্ব বোধ করে। একে তারা নিজেদের অনন্য বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক জ্ঞান করে।

গোত্রপ্রধান বলেন, ঈশ্বর অ্যাডাম ও ইভ তৈরি করেছিলেন উবাং গোত্রের মানুষ হিসেবে। প্রত্যেক গোত্রের জন্যে আলাদা ভাষা তৈরি করেছিলেন ঈশ্বর। কিন্তু উবাংদের জন্যে দুটো ভাষা দিয়েছিলেন। এ কারণে আমাদের অন্য কোনো ভাষা ব্যবহারের সুযোগ নেই। একমাত্র উবাংরাই দুটো ভিন্ন ভাষার সুবিধা ভোগ করে। এ কারণে আমরা পৃথিবীর যেকোনো জাতি-গোষ্ঠী থেকে আলাদা।
সূত্র: বিবিসি

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগর বার্তায় সংবাদ প্রকাশের পর মুরাদনগরে আর্সি নদীতে নির্মাণ করা বাঁধ অপসারন

যে গ্রামে নারী-পুরুষ আলাদা ভাষায় কথা বলে

আপডেট সময় ০২:৪২:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৮
 লাইফস্টাইল ডেস্কঃ

নারী-পুরুষের বিভাজনের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু নাইজেরিয়ার দক্ষিণের এক কৃষক সমাজ ‘উবাং’। সেখানে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ বিরল নজির হিসেবে বিবেচন্য হতে পারে। সেখানে নারী এবং পুরুষদের ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে হয়। এ বিষয়টাকে তারা ‘ঈশ্বরের আশীর্বাদ’ হিসেবেই দেখেন। কিন্তু সমাজ আধুনিক হচ্ছে। তাই ইংরেজি ভাষা বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ফলে এই সমাজের নারী-পুরুষের ভিন্ন ভাষা ব্যবহারের চর্চা বিলুপ্তির পথে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুরনো প্রজন্ম।

সমাজপতি অলিভার ইবাং পরেছেন উজ্জ্বল রংয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। মাথায় লাল ক্যাপ। হাতে কর্তৃত্বসুলভ একটা জিনিস। তিনি তার দুই সন্তানের মাধ্যমে ভাষাগত পার্থক্য বোঝানোর চেষ্টা করলেন। একটি মিষ্টি আলু হাতে নিয়ে কন্যাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? মেয়ে উত্তর দিল, এটা ‘ইরুই’। কিন্তু একই জিনিস ছেলেদের ভাষায় বলতে হবে ‘ইতং’। এ ধরনের অনেক শব্দ রয়েছে যেগুলো মেয়েরা বললে একটা, আর ছেলেরা বলবে আরেকটা। যেমন গাছকে ছেলেরা বলবে কিটচি, আর মেয়েরা ওকওয়েং। পানিকে ছেলেরা বলবে বামুলে, আর মেয়েরা বলবে আমু। ছাগলকে ছেলেরা বলবে ইবুয়ে, আর মেয়েরা বলবে ওবি।

তবে ভাষাবিদদের কাছে এটা পরিষ্কার নয় যে, তাদের ভাষায় কোন অংশটি নারী-পুরুষের জন্যে আলাদা করা হয়েছে। যেকোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে নারী-পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকার ভিত্তিতে শব্দগুলো তৈরি হয়েছে কিনা তাও জানা নেই।

নৃতত্ত্ববিদ চি চি উন্দি বলেন, নারী-পুরুষের জন্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি অভিধান তারা ব্যবহার করছে। তবে এমন অনেক শব্দই আছে যেগুলো সবাই একইভাবে ব্যবহার করে। অন্যগুলোর ব্যবহার নির্ভর করে লিঙ্গের ওপর। একই জিনিস বোঝায় এমন শব্দ দুটো পুরোপুরি ভিন্ন। উচ্চারণেও পার্থক্য আছে।

আবার তারা সবাই এসব ভিন্ন ভিন্ন শব্দগুলো বুঝতেও পারে। কারণ, সন্তানরা ছোটবেলা মায়ের কাছেই থাকেন। ফলে মেয়েদের ব্যবহৃত শব্দগুলোই তারাও ব্যবহার করে। কিংবা এগুলো শিখে ফেলে। কিন্তু বয়স ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার পরই ছেলেরা ছেলেদের ভাষা শেখে। কোনো শিশু ছেলেদের ভাষা শিখছে মানেই তারা পরিপক্ক হয়ে উঠছে। কোনো ছেলে সঠিক বয়স থেকে পুরুষদের ভাষা ব্যবহার না করতে থাকলে তাকে অস্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয়।

উবাং গোত্রের মানুষগুলো তাদের ভাষা নিয়ে রীতিমতো গর্ব বোধ করে। একে তারা নিজেদের অনন্য বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক জ্ঞান করে।

গোত্রপ্রধান বলেন, ঈশ্বর অ্যাডাম ও ইভ তৈরি করেছিলেন উবাং গোত্রের মানুষ হিসেবে। প্রত্যেক গোত্রের জন্যে আলাদা ভাষা তৈরি করেছিলেন ঈশ্বর। কিন্তু উবাংদের জন্যে দুটো ভাষা দিয়েছিলেন। এ কারণে আমাদের অন্য কোনো ভাষা ব্যবহারের সুযোগ নেই। একমাত্র উবাংরাই দুটো ভিন্ন ভাষার সুবিধা ভোগ করে। এ কারণে আমরা পৃথিবীর যেকোনো জাতি-গোষ্ঠী থেকে আলাদা।
সূত্র: বিবিসি