ঢাকা ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষা ও সেবার আলোক বর্তিকা জাহাঙ্গীর আলম সরকার

সৈয়দ রাজিব আহাম্মদঃ

শেষ ইচ্ছা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের দিশারী হয়ে আর্ত পীরিতদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা। সমাজ সেবক ও বিশিষ্ট রাজনীতিক আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম সরকার।

অজপাড়াগী থেকে উঠে এসে উদার সাধনার মাধ্যমে খ্যাতিমান সমাজ সেবক ও রাজনীতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। দেশে-বিদেশে একক ও যৌথ বহু আয়োজনে অসংখ্য বার তাকে নিঃস্বার্থ সমাজ সেবেক ও প্রখ্যাত রাজনীতিক হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা পদকও পেয়েছেন অনেক। সর্বশেষ সম্মাননা হিসেবে আবারো কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন চলতি বছর ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী।

তাঁর নানা রঙের দিনগুলোর কথা বর্ণনা করেছেন এ প্রতিবেদকের কাছে। শৈশবের কিছু স্মৃতি দিয়েই। শৈশব কেটেছে সেই অজপাড়াগাঁ মুরাদনগরের বি চাপীতলায়। বড়ই মধুর ছিল সেই দিনগুলো, বলা যায় উজ্জলতম সময়। শৈশবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও আস্থভাজন, কুমিল্লায় জনতার মঞ্চের রূপকার, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রথম নির্বাচিত সফল চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের তিনবারের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম সরকার। যাঁকে বিরুধী দলের সমর্থকসহ পুরান মানুষজন ছাড়াও দলীয় নেতা-কর্মীরা সারা কুমিল্লার গর্ব হিসেবে মনে করেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রনায়ক এই জনপ্রিয় রাজনীতিক ১৯৫৫ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ব্রাম্মন চাপিতলা গ্রামের সমভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মাজু মিয়া সরকার, মাতা প্রয়াত আমিরুন নেছার পরিবারে জাহাঙ্গীর আলম সরকার ছিলেন ৬ ভাই ২ বোনের মধ্যে পঞ্চম। ১৯৭৬ সালে সাভার নিবাসী ঢাকা ওয়াসা ডেলেপমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাজী বশির উদ্দিনের কন্যা বেগম বদরুন নাহার সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন, ব্যাক্তিগত জীবনে তিঁনি ১ পূত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক।
যৌবনের শুরু থেকে জীবনের এ পর্যন্ত জাহাঙ্গী আলম সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও দেশরত্ম মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শের প্রতি অবিচল। তাঁর সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল তিঁনি সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার খুব কাছে থেকেছেন এবং তাঁর মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতে খড়ি। উদার চিন্তাচেতনা, প্রখর ব্যক্তিত্ব ও সংবেদনশীলতা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্টকে উজ্জ্বল করে তিঁনি পরিণত হন দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রিয় নেতায়।
জাহাঙ্গীর আলম সরকার ছাত্রাবস্থায় সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৭৪-৭৫ সালে একই কলেজে সাধারন সম্পাদক ও ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৩ সাল থেকে অদ্যপর্যন্ত পরপর ৩বার কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম সরকার।
জননেত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে অত্যন্তত ভাবে ভালোবাসেন। তাই ১৯৯১ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে হোমনা ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আবারো মুরাদনগর আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে এ যাবত পাঁচ বার মনোনয়ন দেন।
১৯৮৬ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এই নেতা। আর তাঁরই সহযোগীতায় তৎকালীন ঢাকার মেয়র হানিফের নেতৃত্বে ’৯৬-এর মার্চের শেষ সপ্তাহে ”জনতার মঞ্চ” গঠন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট তৈরী করেন। মেয়র হানিফ ও জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে অনুসরণ করে চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন তৈরি করেন বীর জনতার মঞ্চ। ’৯৬-এর ১২ জুন দেশের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করে পরবর্তীতে দেশ পরিচালনার জন্য তাঁর প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের বিজয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।

২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনার ওপর নারকীয় গ্রেনেড হামলার সময় নিজের জীবন তুচ্ছ করে মানবঢাল রচনা করে তাঁর প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে রক্ষার প্রানান্তর চেষ্টা করেন জাহাঙ্গীর আলম সরকার। একের পর এক ছোঁড়া গ্রেনেডের সামনে নির্ভয়ে পেতে দিলেন নিজেকে, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাত্বক আহতও হন তিনি। সে সময়ে আহত একাধিক নেতাকর্মীকে উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সংলগ্ন তার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর শপিং কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করেই জাহাঙ্গীর আলম সরকার জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন।

১৯৭০ সালে ছাত্রজীবন থেকেই ব্যবসায়িক পেশা বেছে নেন। পুঁজি খাটিয়ে ছোটখাট ব্যবসা শুরু করেন। সীমিত সামর্থ্য নিয়েই জাহাঙ্গীর আলম সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন শুরুসহ সমাজ সেবায় মনোনিবেশিত শুরু করেন ওই সময় থেকে। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় মানিকার চর সরকারী ডিগ্রী কলেজ, মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর আমিরুন নেছার উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এছাড়া উপজেলার পাঁচ পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, দৌলতপুর আলীম মাদ্রাসা, কোম্পানীগঞ্জ আলীম মাদ্রাসা, রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং এসব প্রতিষ্ঠানে তাঁর আর্থিক অনুদান রয়েছে। মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহাম্মদ ফয়সাল বলেন, জাহাঙ্গীর আলম সরকারের মতো কাজ পাগল মানুষ এ যুগে দুর্লভ। জাসদ নেতা এডভোকেট নূর-ই আলম সিদ্দীকি শিক্ষা বিস্তারে জাহাঙ্গীর আলম সরকারের অবদানকে অনবদ্য বলে মন্তব্য করেন। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা জুগিয়ে থাকেন জাহাঙ্গীর আলম সরকার। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় মুরাদনগর উপজেলার অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের দুই শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর ছাপা হয় পত্রিকায়। সে খবর পড়ে ছুটে যান তিনি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দশ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা দেন এবং তাদের ভবিষ্যতের পড়া লেখার ব্যায়ভার পূরোটাই বহন করার ঘোষনা দেন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম সরকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জনসেবার ইচ্ছে থেকেই ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। “তখন মুরাদনগরসহ উত্তর কুমিল্লায় সন্ত্রাসের লীলাভূমি ছিল। ওই সময়ের নির্বাচনের কথা এখনো মনে পড়ে। সেখানে আওয়ামীলীগ প্রার্থী হিসেবে আমি বিপুল ভোট পেয়েও স্বাধীনতা বিরুধী চক্র ও সন্ত্রাসীদের কারনে জয়ী হতে পারিনি। তখন লোকজন আমাকে যে সম্মান জানিয়েছেন, তা আজও আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে” স্মৃতিচারন করেন- জাহাঙ্গীর আলম সরকার। ব্যবসা ও ব্যবসায়িক নেতৃত্বে দুটোতেই সমান দক্ষতার প্রমান রেখেছেন জাহাঙ্গীর আলম সরকার। তিনি ঢাকাস্থ রমনাভবন বনিক সমিতি, বিসিক ঠিকাদারী এসোসিয়েশন, বাপেক্স ঠিকাদারী সমিতি ও গুলিস্তান কমিনিউটি পুলিশের সভাপতি, এছাড়া চয়নিকা গ্রুপ, নিউ আধুনিকা, এক্সপার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড ডেভেলপারস লিঃ ও জম জম টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান। মুরাদনগরের পাঁচ কিত্তা উচ্চ বিদ্যালয়, মুরাদনগর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা, ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র নাথ ডিগ্রী কলেজের আজীবন দাতা সদস্য, ঢাকার আবহানী ক্রীড়া চক্রের সাধারন সম্পাদক, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিদর্শক, কুমিল্লা জেলা আইন শৃঙ্খলা পর্যালোচনা কমিটি ও ঢাকা ক্লাবের সদস্য সদস্য সহ আরো অনেক সামাজিক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। মুরাদনগরে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও রাজনীতিক হিসেবে অসংখ্যবার সংবর্ধনা পান তিনি। তাঁর একমাত্র ছেলে ড. আহসানুল আলম সরকার কিশোর সু শিক্ষিত ও কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্চাসেবকলীগের যুগ্ম আহায়ক। ৬২ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলম সরকার নিজেকে সম্পূর্ণ কর্মক্ষম বলে দাবী করেন। এখনো চশমা ছাড়াাই পড়তে পারেন। তিনি এখন ঢাকার ধানমন্ডিতে থাকেন। ভোরে ফজরের নামায পড়ে হাটতে বের হন। ফিরে এসে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে খুঁজে ফেরেন- কোথায় কার জন্য কি করা যায়। এরপর নিজের পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক ও সেবা কার্যক্রমের খোঁজ খবর নেন। জাহাঙ্গীর আলম সরকার আরও অনেক দিন বাঁচতে চান, শুধু মানুষের সেবা করার জন্য। তিনি বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে ছেলে মেয়েরা আমার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিবে। সব ব্যবস্থা করে দিয়ে যাব আমি। জাহাঙ্গীর আলম সরকারের দান, অনুদান, সাহায্য-সহযোগীতার পরিমান টাকার অঙ্কে কত হবে, তা তিনি জানাতে চান না। তিনি বলেন, দানের ক্ষেত্রে ডান হাতে দিলে বাঁ হাতেও যেন না জানে। এভাবেই অব্যাহত আছে জাহাঙ্গীর আলম সরকারের কর্মময় বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের।

ট্যাগস

শিক্ষা ও সেবার আলোক বর্তিকা জাহাঙ্গীর আলম সরকার

আপডেট সময় ০৩:৫২:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৬
সৈয়দ রাজিব আহাম্মদঃ

শেষ ইচ্ছা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের দিশারী হয়ে আর্ত পীরিতদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা। সমাজ সেবক ও বিশিষ্ট রাজনীতিক আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম সরকার।

অজপাড়াগী থেকে উঠে এসে উদার সাধনার মাধ্যমে খ্যাতিমান সমাজ সেবক ও রাজনীতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। দেশে-বিদেশে একক ও যৌথ বহু আয়োজনে অসংখ্য বার তাকে নিঃস্বার্থ সমাজ সেবেক ও প্রখ্যাত রাজনীতিক হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা পদকও পেয়েছেন অনেক। সর্বশেষ সম্মাননা হিসেবে আবারো কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন চলতি বছর ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী।

তাঁর নানা রঙের দিনগুলোর কথা বর্ণনা করেছেন এ প্রতিবেদকের কাছে। শৈশবের কিছু স্মৃতি দিয়েই। শৈশব কেটেছে সেই অজপাড়াগাঁ মুরাদনগরের বি চাপীতলায়। বড়ই মধুর ছিল সেই দিনগুলো, বলা যায় উজ্জলতম সময়। শৈশবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও আস্থভাজন, কুমিল্লায় জনতার মঞ্চের রূপকার, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রথম নির্বাচিত সফল চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের তিনবারের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম সরকার। যাঁকে বিরুধী দলের সমর্থকসহ পুরান মানুষজন ছাড়াও দলীয় নেতা-কর্মীরা সারা কুমিল্লার গর্ব হিসেবে মনে করেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রনায়ক এই জনপ্রিয় রাজনীতিক ১৯৫৫ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ব্রাম্মন চাপিতলা গ্রামের সমভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মাজু মিয়া সরকার, মাতা প্রয়াত আমিরুন নেছার পরিবারে জাহাঙ্গীর আলম সরকার ছিলেন ৬ ভাই ২ বোনের মধ্যে পঞ্চম। ১৯৭৬ সালে সাভার নিবাসী ঢাকা ওয়াসা ডেলেপমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাজী বশির উদ্দিনের কন্যা বেগম বদরুন নাহার সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন, ব্যাক্তিগত জীবনে তিঁনি ১ পূত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক।
যৌবনের শুরু থেকে জীবনের এ পর্যন্ত জাহাঙ্গী আলম সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও দেশরত্ম মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শের প্রতি অবিচল। তাঁর সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল তিঁনি সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার খুব কাছে থেকেছেন এবং তাঁর মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতে খড়ি। উদার চিন্তাচেতনা, প্রখর ব্যক্তিত্ব ও সংবেদনশীলতা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্টকে উজ্জ্বল করে তিঁনি পরিণত হন দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রিয় নেতায়।
জাহাঙ্গীর আলম সরকার ছাত্রাবস্থায় সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৭৪-৭৫ সালে একই কলেজে সাধারন সম্পাদক ও ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৩ সাল থেকে অদ্যপর্যন্ত পরপর ৩বার কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম সরকার।
জননেত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে অত্যন্তত ভাবে ভালোবাসেন। তাই ১৯৯১ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে হোমনা ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আবারো মুরাদনগর আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে এ যাবত পাঁচ বার মনোনয়ন দেন।
১৯৮৬ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এই নেতা। আর তাঁরই সহযোগীতায় তৎকালীন ঢাকার মেয়র হানিফের নেতৃত্বে ’৯৬-এর মার্চের শেষ সপ্তাহে ”জনতার মঞ্চ” গঠন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট তৈরী করেন। মেয়র হানিফ ও জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে অনুসরণ করে চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন তৈরি করেন বীর জনতার মঞ্চ। ’৯৬-এর ১২ জুন দেশের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করে পরবর্তীতে দেশ পরিচালনার জন্য তাঁর প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের বিজয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।

২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনার ওপর নারকীয় গ্রেনেড হামলার সময় নিজের জীবন তুচ্ছ করে মানবঢাল রচনা করে তাঁর প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে রক্ষার প্রানান্তর চেষ্টা করেন জাহাঙ্গীর আলম সরকার। একের পর এক ছোঁড়া গ্রেনেডের সামনে নির্ভয়ে পেতে দিলেন নিজেকে, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাত্বক আহতও হন তিনি। সে সময়ে আহত একাধিক নেতাকর্মীকে উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সংলগ্ন তার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর শপিং কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করেই জাহাঙ্গীর আলম সরকার জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন।

১৯৭০ সালে ছাত্রজীবন থেকেই ব্যবসায়িক পেশা বেছে নেন। পুঁজি খাটিয়ে ছোটখাট ব্যবসা শুরু করেন। সীমিত সামর্থ্য নিয়েই জাহাঙ্গীর আলম সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন শুরুসহ সমাজ সেবায় মনোনিবেশিত শুরু করেন ওই সময় থেকে। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় মানিকার চর সরকারী ডিগ্রী কলেজ, মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর আমিরুন নেছার উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এছাড়া উপজেলার পাঁচ পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, দৌলতপুর আলীম মাদ্রাসা, কোম্পানীগঞ্জ আলীম মাদ্রাসা, রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং এসব প্রতিষ্ঠানে তাঁর আর্থিক অনুদান রয়েছে। মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহাম্মদ ফয়সাল বলেন, জাহাঙ্গীর আলম সরকারের মতো কাজ পাগল মানুষ এ যুগে দুর্লভ। জাসদ নেতা এডভোকেট নূর-ই আলম সিদ্দীকি শিক্ষা বিস্তারে জাহাঙ্গীর আলম সরকারের অবদানকে অনবদ্য বলে মন্তব্য করেন। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা জুগিয়ে থাকেন জাহাঙ্গীর আলম সরকার। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় মুরাদনগর উপজেলার অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের দুই শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর ছাপা হয় পত্রিকায়। সে খবর পড়ে ছুটে যান তিনি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দশ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা দেন এবং তাদের ভবিষ্যতের পড়া লেখার ব্যায়ভার পূরোটাই বহন করার ঘোষনা দেন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম সরকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জনসেবার ইচ্ছে থেকেই ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। “তখন মুরাদনগরসহ উত্তর কুমিল্লায় সন্ত্রাসের লীলাভূমি ছিল। ওই সময়ের নির্বাচনের কথা এখনো মনে পড়ে। সেখানে আওয়ামীলীগ প্রার্থী হিসেবে আমি বিপুল ভোট পেয়েও স্বাধীনতা বিরুধী চক্র ও সন্ত্রাসীদের কারনে জয়ী হতে পারিনি। তখন লোকজন আমাকে যে সম্মান জানিয়েছেন, তা আজও আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে” স্মৃতিচারন করেন- জাহাঙ্গীর আলম সরকার। ব্যবসা ও ব্যবসায়িক নেতৃত্বে দুটোতেই সমান দক্ষতার প্রমান রেখেছেন জাহাঙ্গীর আলম সরকার। তিনি ঢাকাস্থ রমনাভবন বনিক সমিতি, বিসিক ঠিকাদারী এসোসিয়েশন, বাপেক্স ঠিকাদারী সমিতি ও গুলিস্তান কমিনিউটি পুলিশের সভাপতি, এছাড়া চয়নিকা গ্রুপ, নিউ আধুনিকা, এক্সপার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড ডেভেলপারস লিঃ ও জম জম টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান। মুরাদনগরের পাঁচ কিত্তা উচ্চ বিদ্যালয়, মুরাদনগর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা, ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র নাথ ডিগ্রী কলেজের আজীবন দাতা সদস্য, ঢাকার আবহানী ক্রীড়া চক্রের সাধারন সম্পাদক, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিদর্শক, কুমিল্লা জেলা আইন শৃঙ্খলা পর্যালোচনা কমিটি ও ঢাকা ক্লাবের সদস্য সদস্য সহ আরো অনেক সামাজিক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। মুরাদনগরে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও রাজনীতিক হিসেবে অসংখ্যবার সংবর্ধনা পান তিনি। তাঁর একমাত্র ছেলে ড. আহসানুল আলম সরকার কিশোর সু শিক্ষিত ও কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্চাসেবকলীগের যুগ্ম আহায়ক। ৬২ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলম সরকার নিজেকে সম্পূর্ণ কর্মক্ষম বলে দাবী করেন। এখনো চশমা ছাড়াাই পড়তে পারেন। তিনি এখন ঢাকার ধানমন্ডিতে থাকেন। ভোরে ফজরের নামায পড়ে হাটতে বের হন। ফিরে এসে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে খুঁজে ফেরেন- কোথায় কার জন্য কি করা যায়। এরপর নিজের পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক ও সেবা কার্যক্রমের খোঁজ খবর নেন। জাহাঙ্গীর আলম সরকার আরও অনেক দিন বাঁচতে চান, শুধু মানুষের সেবা করার জন্য। তিনি বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে ছেলে মেয়েরা আমার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিবে। সব ব্যবস্থা করে দিয়ে যাব আমি। জাহাঙ্গীর আলম সরকারের দান, অনুদান, সাহায্য-সহযোগীতার পরিমান টাকার অঙ্কে কত হবে, তা তিনি জানাতে চান না। তিনি বলেন, দানের ক্ষেত্রে ডান হাতে দিলে বাঁ হাতেও যেন না জানে। এভাবেই অব্যাহত আছে জাহাঙ্গীর আলম সরকারের কর্মময় বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের।